× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

জীবন কথা

নদী-নৌকায় মিনুর জীবনযুদ্ধ

এমএ হান্নান, বাউফল (পটুয়াখালী)

প্রকাশ : ২৯ মে ২০২৩ ১৪:১৫ পিএম

 নদী-নৌকায় সংগ্রাম করে জীবন চলে মিনুর

নদী-নৌকায় সংগ্রাম করে জীবন চলে মিনুর

প্রতিদিনের মতো জীবিকার খোঁজে ছুটে এসেছেন তেঁতুলিয়া নদীর তীরে। মাথার ওপরে ঝলসানো রোদ। নদীর জলে দুলছে নৌকা। চোখে-মুখে হতাশার ছাপ। মলিন মুখে নিখুঁত হাতে নদীতে জাল ফেলছেন মান্তা নারী মিনু। বয়স ষাটের কোঠায়। স্রোতের টানে আপন গতিতে চলছে নৌকা। ছোট্ট হাতে বৈঠা ধরে আছে এক কিশোরী। 

বৈঠা ছেড়ে জালও ধরতে হয় কখনো। ওই কিশোরীর নাম আসমা। বয়স ১২। মিনুর মেয়ে আসমার স্কুলে যাওয়ার কথা থাকলেও জীবিকার সংগ্রামে নাম লেখাতে হয়েছে তাকেও। ঘড়ির কাঁটার হিসাব না জানলেও মান্তাপল্লীর এই কিশোরী জোয়ার-ভাটা দেখে মাছ ধরার সময় হিসাব করতে পারে। তেঁতুলিয়া নদীর বুকে ঘুরে ঘুরে জাল ফেলছে মা-মেয়ে। জোয়ার শেষে জাল তুলে ঘাটে ফিরবে তারা। মাছ বিক্রির টাকায় আগুন জ্বলবে চুলায়। এভাবেই নদী-নৌকায় সংগ্রাম করে জীবন চলে মান্তা নারী মিনুর। 

জীবনযুদ্ধে আপসহীন মিনারা বেগম ওরফে মিনু জানান, তার মা-বাবাও ছিলেন মান্তা। জন্মের দুই বছরের মাথায় মা আনোয়ারা বেগম ও পাঁচ বছরের মাথায় বাবা মোসলেম সরদার মারা যান। এতিম মিনু চাচা নুরু সরদারের নৌকায় বেড়ে ওঠেন। বুঝতে পারার পর থেকেই চাচা-চাচির সঙ্গে নৌকায় মাছ ধরার কাজ করতেন। মাত্র ১৩ বছর বয়সে বিয়ে হয়ে যায় তার। বছর না ঘুরতেই কোলে আসে প্রথম সন্তান। একে একে কোলজুড়ে আসে ৯ সন্তান। তিন ছেলে ও তিন মেয়েরও বিয়ে হয়েছে। তারাও ভাসমান। নদীতে মাছ ধরেন। ভিন্ন নৌকায় বসবাস করেন তারা। স্বামী আনছার হোসেন ওরফে আনছু সরদার। এক ছেলে ও এক মেয়ে নিয়ে তাদের সংসার। বছরের পর বছর নৌকায় কেটে যাচ্ছে তাদের জীবন। তেঁতুলিয়া নদীর ঝড়-ঝাপটার সঙ্গে লড়াই করে চলছে জীবনযুদ্ধ। 


মিনারা বেগম মিনু বলেন, ‘আমাগো ঘর-বাড়ি নাই, নৌকায় থাকি। মাছ ধরে খাই। ওপরে যারা থাকে তারা সব পায়, আমাগো সরকার কিছু দেয় না। হুনছি সাতাইশটা ঘর দিবে, হ্যার মধ্যে আমাগো নাম নাই।’

শুধু মিনু একা নয়, পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার কালাইয়া ইউনিয়নের বগী খালে নৌকায় বসবাস করা প্রায় অর্ধশত মান্তা নারীর চলে নদীতে সংগ্রাম। প্রায় ৫০ বছর ধরে বংশপরম্পরায় বগী খালে অর্ধশতাধিক নৌকায় দুই শতাধিক নারী-পুরুষ ও শিশু ভাসমান জীবন যাপন করে আসছে। সমাজে তাদের পরিচয় মান্তা সম্প্রদায়। এদের হাতে গোনা কয়েকজনের ঘর-বাড়ি থাকলেও অধিকাংশ পরিবারের নেই ঘর-বাড়ি, জায়গাজমি। জন্ম-মৃত, জীবন-জীবিকা, সুখ-দুঃখ সব কিছুতে মিশে আছে নৌকা। 

এই মান্তা পল্লীতে জন্ম নেওয়া সব শিশুকে বুঝতে পারার পর থেকেই হাত মেলাতে হয় পরিবারের উপার্জনের কাজে। স্কুল, বই, খাতা, কলম, পড়াশোনা, মান্তা পল্লীর শিশুদের কাছে রূপকথার গল্পের মতো। তারা জানে তাদের বয়সি শিশুরা পড়াশোনা করে। স্কুল-মাদ্রাসায় যায়। তবে তারা সেখানে যায় না। ভাগ্য তাদের নেয়ও না। 

রীতি অনুযায়ী মান্তা পল্লীর ১২ থেকে ১৬ বছরের মধ্যে মেয়েদের বিয়ে দেওয়া হয়। পাত্রও কোনো না কোনো মান্তার সন্তান। বিয়ের পরে নতুন নৌকায় নতুন করে শুরু সংগ্রামী জীবন। মান্তাপল্লীর নারীদের বিনোদন বলতে অবসরে রান্না করে পরিবারের সবাইকে নিয়ে একসঙ্গে খাওয়া আর ঘুম। আর উৎসব বলতে নিজেদের সম্প্রদায়ের মধ্যে বিয়ের অনুষ্ঠানের আয়োজন। প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে মান্তাপল্লীর কন্যা, জায়া ও জননীদের এই সংগ্রামী জীবনের পাশে দাঁড়ায়নি কোনো সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। 

উপজেলা মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তা (অ. দা.) জেসমিন আকতারের কাছে জানতে চাওয়া হয় এই সম্প্রদায়ের নারী ও শিশুদের জীবনমান উন্নয়ন প্রসঙ্গে। তিনি বলেন, ‘পিছিয়ে পড়া মান্তাপল্লীর নারীদের সচেতনতা বৃদ্ধি ও জীবনমান উন্নয়নে কার্যক্রম না থাকলেও দ্রুতই কর্মশালার পাশাপাশি প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে।’


শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা