রাফিয়া তাহসিন ইথিকা
প্রকাশ : ২৬ মে ২০২৩ ০৮:০৯ এএম
আপডেট : ২৬ মে ২০২৩ ১৪:০৬ পিএম
অলংকরণ : হুরেইন জেহরা মানহা, দ্বিতীয় শ্রেণি, সানিডেল স্কুল, ঢাকা
সকাল বেলা। ঘড়িতে কত বাজছে
সেটা খেয়াল নেই। হালকা রোদ, সূর্যের তাপও কম, পরিষ্কার নীল আকাশ। সব মিলিয়ে
যেন এক চমৎকার পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। স্যারের কাছে পড়া শেষে বাড়ি ফিরছিলাম।
বাড়ি থেকে স্যারের বাসার দূরত্ব বেশি নয়। ১০ মিনিটের রাস্তা। হেঁটেই
যাতায়াত করি। হঠাৎ আকাশ ঘন কালো মেঘে ছেয়ে গেল। চারদিকে অন্ধকার। মনে হয়
বৃষ্টি নামবে। ভাবলাম বৃষ্টি আসার আগেই বাড়ি চলে যাব। কিন্তু তা আর হলো না।
বৃষ্টির কাছে আমাকে হার মানতেই হলো। ঝমঝম করে বৃষ্টি হচ্ছে। আশপাশে কোনো
বাড়ি নেই। ছাতা বা রেইনকোটও নেই। কী করি এখন? ভিজে ভিজে বাড়ি যেতে হবে! তাই
করলাম। মা যদি দেখতে পায় তাহলে খুব রাগ করবেন। বাড়িতে পৌঁছাতে না পৌঁছাতেই
আমি তো ভিজে একদম একাকার। চুপি চুপি তালাটা খুলে বাড়ির ভেতর ঢুকতে গেলাম,
কিন্তু সামনে মা চলে এলো। আমার এই অবস্থা দেখে মা তো রেগে একেবারে আগুন।
আমাকে বকতে শুরু করল। কতবার না বলেছি বৃষ্টি হলে একটু কোথাও থেমে বাড়ি
আসতে। ব্যাগে একটা ছাতা বা রেইনকোটও তো রাখতে বলেছিলাম। আমার কোনো কথাই তো
শুনিস না। অসুস্থ হলে কার খারাপ লাগবে? আমার না তোর? চুপচাপ
কথাগুলো শুনলাম।
তার পর মা বললেন, এবার তাড়াতাড়ি কাপড়
বদলিয়ে নে, না হলে ঠান্ডা লেগে যাবে।
আমি
কাপড় বদলিয়ে খাবার টেবিলে বসলাম। খাবার দেখেই অবাক হয়ে গেলাম। টেবিলে ছিল
খিচুড়ি, ইলিশ ভাজা আর আলুর ভর্তা- সবই আমার প্রিয় খাবার। মা বললেন, আমি তো
জানি বৃষ্টির দিনে তুই খেতে পছন্দ করিস। তাই এই আয়োজন। মায়ের মুখের হাসি
দেখে মনে হলো হয়তো মায়ের রাগ একটু কমেছে। সন্ধ্যা হলো। তার সঙ্গে সঙ্গে
শরীরটাও খারাপ করতে শুরু করল। আর হাঁচিও পড়ছিল। বুঝতে পারলাম মায়ের কথাই
ঠিক। বৃষ্টিতে ভিজে আমার সর্দি লেগে গেছে। বিছানা থেকে উঠতে পারছিলাম না।
মা জানতে পেরে সঙ্গে সঙ্গে ওষুধ নিয়ে হাজির আমার ঘরে। আমাকে দেখে মা কিছুই
বললেন না। সারা রাত আমার সেবা করলেন। সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখছি আবারও
বৃষ্টি হচ্ছে। কিছুক্ষণ পরে মা ঘরে খাবার নিয়ে এলেন। নিজ হতে খাইয়ে দিলেন।
এভাবে এক সপ্তাহ ধরে মায়ের যত্ন ও ওষুধ খাওয়ার পর একটু সুস্থ হলাম। আবারও
স্কুলে যাওয়া শুরু করলাম। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে অসুস্থ ছিলাম তো ভালোই
ছিলাম। সুস্থ হয়ে মা তো আর আমাকে যত্ন করছেন না। আগের মতো বকুনি দিতেও শুরু
করেছেন। তাই মনে মনে আবারও বৃষ্টিকে ডাকছি।
সপ্তম শ্রেণি, সরকারি প্রমথনাথ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, রাজশাহী