হুমায়রা রহমান
প্রকাশ : ২৬ মে ২০২৩ ০৮:০১ এএম
এক ছিল ছোট্ট মৌমাছি। সে মালিহার বাগানে প্রতিদিন মধু সংগ্রহ করতে আসত। বাগানটিতে একটা ডালিম গাছ ছিল। পাকা টসটসে ডালিমের গন্ধ সারা বাগানে যখন ছড়িয়ে পড়ত, তখন ইচ্ছে করত চট করে একটা লাল ডালিম ছিঁড়ে খেতে।
একদিন সে ভাবল, হয়তো কোনোভাবে ডালিম ছিঁড়ে খাওয়া যাবে। কিন্তু কীভাবে সম্ভব, সেটা কিছুতেই ভাবতে পারল না। একদিন যখন সে তার মৌচাকে ফিরে যাচ্ছিল, তখন পথের ধারে একটা কুয়ো দেখতে পেল। আরও দেখল একটা ছোট মেয়ে। কুয়োর কাছে মেয়েটা কয়েন ফেলে তার ইচ্ছা প্রকাশ করছিল। তার মনে হলো, সে তার ইচ্ছাপূরণ করতে পারবে।
সে কুয়োর কাছে গেল এবং দেখল একটা কয়েন পড়ে আছে। সে সেটা টুপ করে কুয়োর ভেতর ফেলে দিল। পরদিন সে আবারও সেই বাগানে ফিরে গেল ডালিম গাছের কাছে। যেই কুটুস করে একটা ডালিম ছিঁড়বে অমনি গাছটি মিষ্টি ভাষায় বলে উঠল, ছোট্ট মৌমাছি বন্ধু যে! তুমি কি ডালিম খেতে চাও?
মৌমাছি চমকে উঠল!
এরপর পিছিয়ে যেতে লাগল। গাছটি বলল, তুমি ডালিম নিতে এসেছ। বেশ নাও। যেকোনো একটি ছিঁড়ে খেয়ে নাও। এগুলো খুব মিষ্টি আর সুস্বাদু।
মৌমাছিটির ভয় একটু কমল। একটা ডালিম ছিঁড়ে তার মৌচাকের দিকে রওনা দিল।
যাওয়ার পথে একটা দুষ্টু লোভী তোতাপাখি তাকে খুব প্রলুব্ধভাবে জিজ্ঞেস করলÑ বন্ধু, তুমি ওটা কী নিয়ে যাচ্ছ তোমার সঙ্গে?
মৌমাছিটি বলল, এটা একটা ডালিম। খুব সুমিষ্ট ফল। তোমাকে আমি ভাগ দিতে পারি।
কিন্তু তোতাপাখির মন তা মানল না। সে পুরো ডালিমটাই চায়। সে খপ করে ডালিমটা মৌমাছিটির কাছ থেকে কেড়ে নিল এবং উড়ে গিয়ে একটা মেহগনি গাছে বসল। সে গাছেই ছিল তার বাসা।
তোতাপাখিটি কোনো এক পাতার নিচে ডালিমটা লুকিয়ে রাখল।
মৌমাছিটি ভাবল যে সে সেই ডালিম গাছটার কাছে গিয়ে সবকিছু খুলে বলবে।
যে কথা, সেই কাজ। তখনই সে সেই ডালিম গাছটার কাছে গেল এবং তাকে সব খুলে বলল। ডালিম গাছটা বলল, তোতাপাখিটা খুব দুষ্টু। সে আমার ফুলগুলো নষ্ট করে দেয়।
ডালিম গাছ তাকে একটা ডালিম দিল এবং বলল, এটা খুব বিশেষ ডালিম। এটা খেলে যেকোনো প্রাণীর অনেক ফোড়া হবে এবং মারা যাবে।
মৌমাছিটি তার কথামতো ডালিমটা নিয়ে যাচ্ছিল মেহগনি গাছটার সামনে দিয়ে।
তোতাপাখিটির আবারও খুব লোভ হলো। ডালিমটি ওখানেই নিয়ে খেয়ে নিল। আর তারপর থেকেই তার সারা গায়ে লাল ফোড়া বের হতে লাগল এবং মারা গেল। সেই ফাঁকে মৌমাছিটা পাতার নিচে লুকানো ডালিমটা নিয়ে চলে গেল।
সেই থেকে মৌমাছি আর ডালিম গাছ প্রিয় বন্ধু হয়ে গেল।
সপ্তম শ্রেণি, কাদিরাবাদ ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল, নাটোর