নীরা ইসলাম
প্রকাশ : ২৪ মে ২০২৩ ১২:৪৩ পিএম
পোষ্য হিসেবে খরগোশ অনেক জনপ্রিয়। পোষা প্রাণী একদিকে শখ পূরণ করে, অন্যদিকে দূর করে একাকিত্ব
প্রিয় পোষ্যকে শুধু বাড়িতে আনলেই চলবে না, আনার পর তার যত্ন ও দেখাশোনা সঠিকভাবে করাও জরুরি। তাই বাড়িতে আনার আগেই প্রাণীটি সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে নিতে হবে। বাড়িতে ছোট শিশু থাকলে প্রাণীটি হবে তার খেলার সঙ্গী। সবদিক বিবেচনা করে এমন প্রাণী আনা উচিত, যা আনন্দ দান করবে আবার শিশুদের জন্যও হবে নিরাপদ। সেই রকম প্রজাতিরই প্রাণী হলো খরগোশ।
খরগোশ সম্পর্কে কিছু তথ্য
পৃথিবীর প্রায় সব দেশেই খরগোশ দেখা যায়। এর দৃষ্টি, শ্রবণ ও ঘ্রাণশক্তি বেশ প্রবল। লম্বা এক জোড়া কানের সাহায্যে আশপাশের আগন্তুকদের চিহ্নিত করতে পারে। এ ছাড়াও শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণেও কান ব্যবহার করে। খরগোশ দেখতে সুন্দর হলেও এর গড় আয়ু মাত্র ১০ বছর। পৃথিবীর সবচেয়ে লম্বা আয়ু নিয়ে বেঁচে থাকা খরগোশটির বয়স হয়েছিল ১৮ বছর। খরগোশের দৃষ্টিশক্তি এতটাই প্রখর যে এটি প্রায় ৩৬০ ডিগ্রি এঙ্গেলে সবকিছু দেখতে পারে। তবে নাকের একদম সোজা সামনের কিছুই দেখতে পায় না। তাদের এই অংশটি ব্লাইন্ড স্পট নামে পরিচিত। খরগোশের শরীর অনেকটা নরম হওয়ায় একটু এদিক-সেদিক হলেই হাড় ভেঙে যায়। আর সবচেয়ে অবাক করা বিষয় হলো, খরগোশ ছানা জন্মের সময় শরীরে কোনো পশম থাকে না। জন্মের কিছুদিন পর পশম গজাতে শুরু করে। আর জন্মানোর পাঁচ দিন পর কানে শুনতে ও ১০ দিন বয়সে দেখতে শুরু করে।
খরগোশের খাবার : কচি ঘাস, লতাপাতা, গাজর, মুলা, লেটুস, কপি, শস্যদানা, মিষ্টিআলু, পুদিনা, পার্সলে, শসা, খড়কুটো, তরকারির ফেলনা অংশ, দুধ, ভুট্টা, গম, পাউরুটি, ছোলা নিত্যদিনের খাবার। খরগোশ ফলও খুব পছন্দ করে। স্ট্রবেরি, রাস্পবেরি, কলা, আনারস, আপেল (বীজ ছাড়া) তাদের পছন্দের খাবার। পোষা প্রাণীর দোকানগুলোতে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের র্যাবিট প্যালেটস কিনতে পাওয়া যায়। পর্যাপ্ত ফাইবার ও প্রোটিনসমৃদ্ধ এই খাবারগুলো খরগোশের খুবই প্রিয়। রুটি, পাস্তা, নোনতা বিস্কুট, কুকি, চিপস বা খাদ্যশস্য উচ্চ শর্করাসমৃদ্ধ হওয়ায় এই খাদ্যগুলো না খাওয়ানোই ভালো। চকলেট খরগোশের জন্য বিষাক্ত। বয়স্ক খরগোশের জন্য প্রতিদিন ১৩০ থেকে ১৪৫ গ্রাম খাবার প্রয়োজন। স্তন্য পান করানো খরগোশের জন্য প্রতিদিন ২৫০ থেকে ৩০০ গ্রাম জরুরি। বাড়ন্ত খরগোশের জন্য প্রতিদিন ৯০ গ্রাম খাদ্য নিশ্চিত করতে হবে।
রোগবালাই ও প্রতিকার : সাধারণত ককসিডিয়া, কৃমি রোগ, নিউমোনিয়া রোগে খরগোশ আক্রান্ত হয়। এ ছাড়া ম্যাস্টাইটিস, বাঁকা ঘাড়, প্যাস্টিউরেলোসিস ইত্যাদি বিপজ্জনক রোগও দেখা দিতে পারে। ফ্যাকাশে চোখ, কান নুয়ে পড়া, লোম শুষ্ক ও রুক্ষ হয়ে যাওয়া, খাওয়াদাওয়া মন্দা ভাব, দৌড়ঝাঁপ কমিয়ে দেওয়া এবং শরীরের তাপমাত্রা বাড়তে থাকলে বুঝতে হবে পোষ্য খরগোশটি অসুস্থ। প্যাস্টিউরেলোসিস রোগের চিকিৎসা কার্যকর হয় না। যদিওবা সুস্থ হয় সেই খরগোশের থেকে অন্য সুস্থ খরগোশ এই রোগে আক্রান্ত হতে পারে। এই রোগ হলে খরগোশের ঘাড় বেঁকে যায়। নার্সিং মায়েরা ম্যাস্টাইটিস রোগে আক্রান্ত হয়। এই রোগে স্তনের বাট গরম, লাল হয় এবং ছুঁইলে ব্যথা লাগে। ঠিকমতো এন্টিবায়োটিক দিলে এই রোগ সেরে যায়। পায়খানা একটু একটু নরম হলে খরগোশকে একটু বেশি পরিমাণে গমের ভুসি খাওয়ালে দ্রুত ওদের পেট ঠিক হয়ে যায়।
বাড়িতে খরগোশ পালতে চাইলে : একটি পূর্ণ বয়স্ক পুরুষ খরগোশের জন্য চার বর্গফুট, স্ত্রী খরগোশের জন্য ছয় বর্গফুট ও খরগোশ ছানার জন্য ১.৫ বর্গফুট জায়গায়ই যথেষ্ট। বাড়ির ছাদ, আঙিনা বা বারান্দায় খুব সহজেই খরগোশ পালন করা যায়।
খরগোশ মিলবে যেখানে : রাজধানীর কাঁটাবন, মিরপুর, কাপ্তান বাজারসহ বিভিন্ন পশু-পাখি ও অ্যাকুরিয়ামের দোকানে খরগোশ পাওয়া যায়। ঢাকার বাইরে বিভিন্ন বিভাগীয় ও জেলা শহরে পোষা প্রাণী কিনতে পাওয়া যায়। চাইলে পছন্দমতো খরগোশ কিনে নিতে পারেন।
দরদাম : পুরো পৃথিবীতে খরগোশ আছে মোট ৩০৫ প্রজাতির। তার মধ্যে মাত্র আট প্রজাতির খরগোশ প্রতিপালনের উপযোগী। বিভিন্ন জাত ও অঞ্চলভেদে খরগোশের দাম একেক রকম হয়ে থাকে। মিনি লোপ প্রজাতির খরগোশ কিনতে পারবেন ৭০০ থেকে এক হাজার ২০০ টাকায়। দেশি খরগোশ কিনতে হলে গুনতে হবে ৪০০ থেকে এক হাজার ২০০ টাকা। পলিশ খরগোশ বিক্রি হয় ৫০০ থেকে এক হাজার টাকায়। ডার্প হোটারের মূল্য দুই হাজার থেকে তিন হাজার টাকা। হার্লিকুইন খরগোশ মেলে তিন হাজার চার হাজার টাকায়। হল্যান্ড লুপ পাওয়া যায় দুই হাজার থেকে চার হাজারে। ইঙ্গোড়া খরগোশের জন্য খরচ করতে হবে তিন হাজার থেকে পাঁচ হাজার টাকা এবং লায়ন হেড খরগোশ মিলবে আট হাজার থেকে ২০ হাজার টাকায়।