ওয়াসি তানজীম
প্রকাশ : ১৭ মে ২০২৩ ১৩:২২ পিএম
আপডেট : ১৭ মে ২০২৩ ১৩:২৬ পিএম
আধুনিক প্রযুক্তির ছোঁয়ায় আমাদের জীবনযাপনে এসেছে অনেক পরিবর্তন। গৃহস্থালি কাজ হয়েছে সহজতর। এ রকমই একটি প্রযুক্তি হচ্ছে ব্লেন্ডার মেশিন। সময় ও পরিশ্রম কমিয়ে রান্নাঘরের কাজকে করেছে সহজ। পূর্বে বিলাসিতার পণ্য মনে করা হলেও বর্তমানে দৈনন্দিন জীবনে এটা খুবই প্রয়োজনীয়
বাজারে বিভিন্ন ধরনের ব্লেন্ডার মেশিন পাওয়া যায়। প্লাস্টিক ও স্টেনলেস স্টিলের- এ দুই ধরনের মেশিন বেশি প্রচলিত। রান্নার কাজে ব্যবহৃত বিভিন্ন মসলা, চাল গুঁড়া বা মিহি করা, মাংস কিমা, ফলের জুস তৈরি করাসহ নানা কাজে ব্যবহার করা হয় ব্লেন্ডার মেশিন। ব্লেন্ডার মেশিনের কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় রয়েছে। একটি ব্লেন্ডার কেনার আগে যে বিষয়গুলো জানা দরকার
মোটর ক্যাপাসিটি
ব্লেন্ডার মেশিনের মোটর ক্যাপাসিটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কাজের সুবিধা অনুযায়ী মোটর ক্যাপাসিটি দেখে ব্লেন্ডার কিনতে হবে। অল্প কাজের ক্ষেত্রে ২০০ বা ৩০০ ওয়াটের ব্লেন্ডার মেশিন ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে ভারী বা বেশি কাজের জন্য মোটর কম ওয়াটের মেশিন কিনবেন না। কমপক্ষে ৫০০ ওয়াটের মোটর দেখে কিনলে সব ধরনের কাজ করা যাবে।
মেশিনের ব্লেড
দ্বিতীয় যে বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে তা হচ্ছে ব্লেন্ডারের ব্লেড। অবশ্যই স্টেনলেস স্টিলের ব্লেড দেখে মেশিন কিনতে হবে। বেশিরভাগ সময়ে পানির সাহায্যে ব্লেন্ডারে কাজ করতে হয়। পানিতে কাজ করার ফলে মরিচা পড়ে। তবে উচ্চমানের স্টেনলেস স্টিলের ভেতর ক্রোমিয়ামের পরিমাণ বেশি থাকে। যার ফলে সেগুলো কখনই চুম্বক দ্বারা আকর্ষিত হয় না। তাই ব্লেন্ডার কিনার সময় স্টেনলেস স্টিলের ব্লেড দেখে কিনলে মেশিনে মরিচা ধরবে না।
অপশন সংখ্যা
ব্লেন্ডারে মোটর পরিচালনা করার জন্য অপসন সংখ্যা থাকে। ব্লেন্ডার কেনার সময় খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় অপসন সংখ্যা। অপশনের সংখ্যা বেশি থাকলে ব্লেন্ডারের দাম বেশি হয়। পাশাপাশি বেশি বিদ্যুতের প্রয়োজন হয়। সুতরাং অপশন নির্বাচন করার আগে পরিবারের প্রয়োজনীতার কথা মাথায় রাখতে হবে। তাই বাজেটের মধ্যে অপসন সংখ্যার ব্লেন্ডার কিনতে হবে।
মোটর সেফটি
ব্লেন্ডার কেনার সময় চতুর্থ যে বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে তা হচ্ছে মোটর সেফটি। অর্থাৎ ওভারলোড বা থার্মাল প্রোডাকশন রয়েছে কি না। ব্লেন্ডারের স্পেসিফিকেশন থেকে খুব সহজে খুঁজে বের করা যায় এ সম্পর্কে। বর্তমান সময়ে থার্মাল প্রোটেকশন বিভিন্ন যন্ত্রাংশে ব্যবহৃত অত্যাধুনিক প্রযুক্তি। যার মাধ্যমে মেশিনে অতিরিক্ত চাপ পড়লে আপনা আপনি বন্ধ হয়ে যাবে। সুতরাং ব্লেন্ডারে যদি এ ধরনের মোটর সেফটি না থাকে, ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার যথেষ্ট আশঙ্কা থাকে। তাই ক্রয়কৃত ব্লেন্ডারে এ ধরনের মোটর ব্যবহার করা হয়েছে কি না তা দেখে নিতে হবে।
মেশিনের সেফটি
ব্লেন্ডার মেশিন কেনার সময় অটো সুইস দেখে কিনতে হবে। অটো সুইস থাকলে মেশিন নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় গরম হলেই বন্ধ হয়ে যাবে। এতে মেশিনের নিরাপত্তা নিশ্চিত থাকবে।
মোটর ওয়ারেন্টি
ব্লেন্ডার মেশিনের মোটর হচ্ছে তার মূল চালিকাশক্তি। সুতরাং একবার যদি মোটর নষ্ট হয়ে যায়, সেক্ষেত্রে ব্লেন্ডারটি অচল হয়ে যায়। খুচরা দোকান থেকে আমরা যেসব ব্লেন্ডার কিনি তাতে কোনো ওয়ারেন্টি থাকে না। তাই ব্লেন্ডার কেনার সময় অবশ্যই কোম্পানির আউটলেট থেকে ক্রয় করে ওয়ারেন্টি নিশ্চিত করতে হবে।
আরও পড়ুন : সুবিধায় ডাবল ডোর ফ্রিজ
ব্লেন্ডার ব্যবহারে সাবধানতা
ব্লেন্ডার ব্যবহার করার সময় কিছু সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। যেমন-
অতিরক্ত গরম তরল পদার্থ : ব্লেন্ডারে কখনও অতিরিক্ত গরম তরল পদার্থ ব্লেন্ড করা ঠিক নয়। অতিরিক্ত গরম কোনো কিছু ব্লেন্ড হওয়ার সময় এর ভেতরের চাপ ও তাপমাত্রা বেড়ে যায়। এর ফলে ঘটতে পারে মারাত্মক দুর্ঘটনা। তাই অতিরিক্ত গরম কোনো কিছু ব্লেন্ডারে দেওয়া যাবে না।
সিদ্ধ আলু : ব্লেন্ডারে সিদ্ধ আলু ব্লেন্ড করা যায় না। কারণ সিদ্ধ আলুতে অতিরিক্ত স্টার্চ থাকায় ব্লেন্ডারের ব্লেড তা ভেদ করতে পারে না। বিদ্যুতের অপচয় আর মেশিনের ওপর অযথা চাপ পড়ে। সেই সঙ্গে সময়
নষ্ট হয়।
শুকনো ফল : ব্লেন্ডারে শুকনো ফল ব্লেন্ড করার সময় ব্লেডগুলো ক্ষয়প্রাপ্ত হয়। তাই রোদে শুকানো টমেটোসহ যেকোনো ফল ব্লেন্ড করার আগে পানিতে ভিজিয়ে নিতে হবে। তবে ভালো মানের ব্লেন্ডার হলে কোনো সমস্যা নেই। তবে সতর্ক থাকাই ভালো।
শক্ত মসলা : শক্ত মসলা সরাসরি ব্লেন্ডারে না দিয়ে তা কেটে একটু ছোট করে নিতে হবে। তারপর মেশিনে দিয়ে ব্লেন্ড করতে হবে। তা হলে খুব তাড়াতাড়ি আর মেশিনের কোনো ক্ষতি ছাড়াই ব্লেন্ড হবে।
কফি বিন : অনেকেই কফি বিন ব্লেন্ডারে দিয়ে থাকি। কিন্তু এতে কাজের কাজ কিছুই হয় না। বরং সময় ও মেশিনের ক্ষতি হয়। কফির দানা ব্লেন্ড করার জন্য বাজারে আলাদা মেশিন রয়েছে।
হিমায়িত খাদ্য সরাসরি ব্যবহার : অতিরিক্ত হিমায়িত কিছু ব্লেন্ড করলে ব্লেডগুলো ভেঙে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। তাই ঠান্ডা কিছু ব্লেন্ড করার আগে তাপমাত্রা স্বাভাবিক করে নিতে হবে।
ব্লেন্ডার মেশিনের দাম
বর্তমানে বাজারে অনেক ব্র্যান্ডের ব্লেন্ডার মেশিন মেলে। বিভিন্ন কোম্পানি তাদের ব্লেন্ডার মেশিনে ভিন্ন রকমের ফিচার এবং নতুনত্ব এনেছে। সুতরাং যাচাই-বাছাই করে পছন্দের মেশিনটি কেনা ভালো। জনপ্রিয় কিছু ব্র্যান্ড যেমন- ওয়ালটন, মার্সেল, ভিশন, সিঙ্গার, ফিলিপস, কিয়ামসহ নানা ব্র্যান্ডের ব্লেন্ডার মেশিন রয়েছে। যার দাম পড়বে হাজার থেকে শুরু করে নয় বা দশ হাজার টাকা পর্যন্ত।