আলোকজ্বালা
মুহাম্মদ শফিকুর রহমান
প্রকাশ : ১৫ মে ২০২৩ ১২:১৩ পিএম
আপডেট : ১৫ মে ২০২৩ ১২:১৫ পিএম
নাহিদা এ পর্যন্ত ৩০০টির বেশি ছবি এঁকেছেন
ছোটবেলা থেকে তার ছবি আঁকার প্রতি খুব আগ্রহ। বোটানিতে স্নাতক পাস করার পর চাকরি করার কথা ভাবলেও শেষ অবধি বেছে নেন ছবি আঁকার কাজ। বর্তমানে বাসায় বসে ছবি এঁকে মাসে তার আয় পনেরো হাজার টাকা। তিনি একজন গৃহিণী। একজন ফুলটাইম আর্টিস্ট।
সফল এই আর্টিস্টের নাম নাহিদা ইসলাম তাহারাত। বাড়ি গোপালগঞ্জ হলেও বর্তমানে পরিবার নিয়ে ঢাকায় থাকেন। এ পর্যন্ত তিনি ৩০০টির বেশি ছবি এঁকেছেন। ২০২২ সালে তিনি প্রথম সাত হাজার টাকায় কয়েকটি ছবি বিক্রি করেন। এটিই তার ছবি বিক্রির প্রথম আয়। ইউটিউবে তার চ্যানেলের নাম Taharat Art School. একই নামে ফেসবুকে তার পেজ রয়েছে।
প্রাতিষ্ঠানিকভাবে কোথাও তার ছবি আঁকা শেখা হয়নি। কিন্তু নিজের আগ্রহ থেকে চর্চা করেছেন। দেখেছেন বিখ্যাত আর্টিস্টদের ছবি। আর ইউটিউব, গুগলের সহায়তা তো ছিলই। বলা যায় আঁকতে আঁকতে আঁকিয়ে হয়ে উঠেছেন তিনি। ছবি আঁকা তার পেশা হলেও কাজটা তিনি উপভোগ করেন। মন থেকে করার চেষ্টা করেন বলে জানান।
নিজে ছবি আঁকলেও এক সময় তিনি অন্যদের ছবি আঁকা শেখানোর কথা ভাবেন। এ পর্যন্ত তিনি চারটি পেইন্টিং কোর্স করিয়েছেন বলে জানান। এ ছাড়া ইউটিউবে তার ভিডিও টিউটোরিয়াল দেখে শত শত স্টুডেন্টস আর্ট শেখে। আর্ট শেখার সুযোগ সবার জন্য উন্মুক্ত। তার পেজে গিয়ে যে কেউ ছবি অর্ডার করতে পারেন। পাশাপাশি তার কাজ দেখার সুযোগ হয়েছে। কেউ পরামর্শ চাইলে তিনি তাও দেন।
ছবি তো অনেকেই আঁকে। তার ছবির কোনো বিশেষত্ব আছে কি না জানতে চাইলে নাহিদা ইসলাম তাহারাত বলেন, আমার ছবির বিশেষত্ব হচ্ছে- আমি এক্রেলিক পেইন্টিংয়ে ওয়াটার কালার ইফেক্ট আনতে পারি। অনেকেই আমার পেইন্টিং দেখে কনফিউজড হয়ে যান- এটি এক্রেলিক, নাকি ওয়াটার কালার পেইন্টিং।
কাস্টামার যেভাবে যে সাইজে চান, তিনি সেভাবে ছবি এঁকে বাসায় পৌঁছানোর ব্যবস্থা করেন। তিনি Way to Artistry Dream Art Exhibition নামে একটি এক্সিবিশনে অংশ নিয়েছেন। সময়-সুযোগ পেলে তিনি দেশ এবং দেশের বাইরে আরও এক্সিবিশনে অংশ নিতে চান। তার আঁকা বেগুনি শাপলা ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচুর জনপ্রিয়তা পেয়েছে। বেগুনি শাপলা এবং জারুলের পেইন্টিং শিল্পপ্রেমীদের কাছে ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হয়েছে বলে জানা যায়।
বর্তমানে তিনি সফল আর্টিস্ট হলেও তার শুরুটা একদম ভালো ছিল না। শুরুতে তেমন সাড়া পাননি। নানা ধরনের সমালোচনা তাকে সহ্য করতে হয়েছে। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, শুরুর দিকে আমার নিজের কাছের মানুষেরাই অনেক নেতিবাচক সমালোচনা করত। এ ব্যাপারটি আমার জন্য অনেক কষ্টের ছিল। তবে পেইন্টিং পেশা হিসেবে নিতে পারায় তিনি বেশ আনন্দিত। তিনি বলেন, আমি পেইন্টিংকে আমার পেশা হিসেবে নিতে পেরেছি এটা আমার কাছে অনেক আনন্দের। আর সবাই আমার পেইন্টিং অনেকে পছন্দ করে- এ বিষয়টি আমাকে সব সময় আনন্দিত করে; অনুপ্রেরণা জোগায়।
নতুন আর্টিস্টদের জন্য কিছু পরামর্শ রয়েছে তাহারাতের। অভিজ্ঞতার আলোকে তিনি বলেন, কেউ একদিন এ ভালো ছবি আঁকে না। কখনই হাল ছেড়ে দেওয়া যাবে না। ক্রমাগত চর্চা চালিয়ে যেতে হবে। নিজের মন থেকে ভালোবেসে পেইন্টিং করুন। পেইন্টিংকে ভালোবাসতে হবে। বাস্তব জিনিস দেখে ছবি আঁকতে চেষ্টা করুন। ভালো ভালো আর্টিস্টদের আর্ট দেখুন, সেখান থেকেও অনেক কিছু শিখতে পারবেন।
তাহারাত শুধু নিজেকে নিয়ে ভাবেন না। তার ইচ্ছা পেইন্টিংয়ের কোর্স শিক্ষার্থীদের অনলাইন, অফলাইন দুভাবেই শেখাবেন। নিজের একটা আর্ট স্কুল হবে। এটাও তার স্বপ্ন। তার ইউটিউব চ্যানেল লিংক youtube.com/@taharatartschool1565
এই চ্যানেলে গিয়ে একদম বিনে পয়সায় আর্ট শেখা যাবে। ১৫৪টি ভিডিও আছে। যেখানে তাহারাত আর্টের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বিস্তারিত ভিডিও দিয়েছেন।