পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে
আবদুল্লাহ আল মামুন
প্রকাশ : ১৪ মে ২০২৩ ১২:১৮ পিএম
বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীদের আঁকা মোট ৭২টি ছবি জায়গা পেয়েছে ছবি : লেখক
ক্লাস, পরীক্ষা, সাংবাদিকতা এসব নিয়েই সময় যাচ্ছে। বেলা সাড়ে ১১টার বাস ধরে ক্যাম্পাসে যাওয়া, আড়াইটার বাসে ক্যাম্পাস থেকে ফিরে আসা নিত্যদিনকার রুটিন। ক্লাসের পড়া, অফিসের অ্যাসাইনমেন্ট এসব নিয়েই যত ব্যস্ততা। একটু অবসর নিয়ে কারও সঙ্গে দুই লাইন গান ধরব, দুয়েকটা আবৃত্তি শুনব সেই ফুরসত নেই। এই ব্যস্ততার মাঝে মন ভিন্ন কিছু খুঁজছে, যেখানে মনটা একটু অবসর পাবে।
একুশে ফেব্রুয়ারিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আলপনা এঁকে একটা সংগঠনের যাত্রা হয়, নাম ‘চিত্র’। কয়েকদিন থেকেই লাইব্রেরির নিচতলায় চিত্রর সদস্যদের ব্যস্ততা দেখছি। বিশ্ববিদ্যালয়ে চিত্র প্রথমবারের মতো চিত্রপ্রদর্শনীর আয়োজন করতে যাচ্ছে, নাম ‘সমারম্ভ’। আমার মন তাহলে ভিন্ন কিছুর সন্ধান পেল! ক্যাম্পাসে নাটক, আবৃত্তি, বিতর্ক অনেক দেখা হয়েছে কিন্তু চিত্রপ্রদর্শনী কখনও দেখা হয়নি। তাই অপেক্ষার প্রহর একটু বাড়ল।
সোমবার দুপুরে একটা ক্লাস করে বন্ধুকে নিয়ে প্রদর্শনী দেখতে গেলাম। এর আগে উপাচার্য ম্যাম প্রদর্শনীর উদ্বোধন করে গেলেন। দুই টাকা প্রবেশ ফি দিয়ে ভেতরে ঢুকলাম। দুই টাকার বিষয়টা অবাক করেছে। আয়োজকরা বললেন, শিল্পীর শিল্পের মূল্যায়নের জন্য এই ফি। চিত্রপ্রদর্শনীর পাশাপাশি দেখলাম মেহেদি কর্নার, ফেস আর্ট কর্নার, ক্যারিকেচার কর্নার করা হয়েছে। আমার অবশ্য সেদিকে মন নেই। প্রথমবারের মতো বিশ্ববিদ্যালয়ে চিত্রপ্রদর্শনী, ছবি দেখে মনের খোরাক মেটাতেই এখানে আসা।
আমাদের মতো শিক্ষার্থীই এসেছেন দেখতে, তারা ঘুরে ঘুরে দেখছেন। লাইব্রেরির পুব পাশের করিডোর ধরে আমরাও দেখতে শুরু করলাম। আমাদের সামনের পথটা সুন্দর, সামনের দেয়ালটা ঝিলমিল করছে। যতই সামনে যাচ্ছি ততই মুগ্ধ হচ্ছি। এত সুন্দর করেও আঁকা সম্ভব! রঙ আর তুলির আঁচড়ে যেন এক একটা ছবি প্রাণ ফিরে পেয়েছে। একটা ছোট্ট ছেলেকে দেখলাম, মনে হচ্ছে সে আমার সামনে দাঁড়িয়ে হাসছে। হ্যারি পটারের যে ছবিটি দেখেছি মনে হচ্ছে সে আমাকে জাদু করার জন্য এগিয়ে আসছে। প্রকৃতির ছবিগুলো শিক্ষার্থীরা মনের মাধুরী মিশিয়ে এঁকেছেন। বাংলার প্রকৃতি দেখতে যেমন, ছবিতেও তেমন করে তুলে ধরা হয়েছে।
আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে চারুকলা পড়ানো হয় না। স্থাপত্য বিভাগ ছাড়া অন্য বিভাগগুলোয় আঁকাআঁকির তেমন কিছু শেখানো হয় না। এর পরও শিক্ষার্থীদের আঁকাআঁকির হাত দেখে রীতিমতো অবাক হলাম। কিছু ছবি একেবারেই ভড়কে যাওয়ার মতো।
ছবি দেখতে দেখতে কথা বললাম অন্য দর্শনার্থীদের সঙ্গেও। ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগের অনীক জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ে এ ধরনের কার্যক্রম এতদিন অনুপস্থিত ছিল। অন্য ক্যাম্পাসগুলোয় চারুকলার অনেক কাজ দেখলেও আমাদের এখানে চারুকলার তেমন কাজ দেখিনি। চিত্র যেভাবে যাত্রা করেছে তাতে আমার মনে আশার সঞ্চার হয়েছে। আরেফিন মাহমুদ নামে আরেক শিক্ষার্থী জানান, পুরোটা ঘুরে দেখেছি। পুরো আয়োজনটাই ভালো লেগেছে। তবে আমি আশা করছি এবার ক্যাম্পাসের দেয়ালগুলো রঙিন হবে, সেখানে হয়তো বঙ্গবন্ধুর মতো বিপ্লবী মানুষের ছবি থাকবে।
কথা বললাম আয়োজকদের সঙ্গেও। তারা জানান, প্রদর্শনীতে কলম, পেনসিল, রঙ, ডিজিটাল প্রিন্টসহ বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীদের আঁকা মোট ৭২টি ছবি জায়গা পেয়েছে। ছবি ছাড়াও প্রদর্শনের জন্য রয়েছে আটটি ভাস্কর্য, যেগুলো ‘স্থাপত্য’ বিভাগের শিক্ষার্থীদের তৈরি। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ফটোগ্রাফিক সোসাইটির সদস্যদের তোলা কিছু ছবি প্রদর্শনীতে স্থান পেয়েছে। এ আয়োজনে বিশ্ববিদ্যালয়ের ফটোগ্রাফিক সোসাইটি সহযোগী হিসেবে আছে।
চিত্রের পক্ষ থেকে সৈয়দ ইয়ানুর বলেন, ‘সংগঠন হিসেবে চিত্রের যাত্রা মাত্র এক মাস। চারুকলা চর্চার স্বপ্ন নিয়েই আমাদের কাজ শুরু। সবার ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় আমাদের এ আয়োজন। প্রদর্শনীর জন্য আমরা অনেক ছবি পাই, সেখান থেকে বাছাই করা ছবিগুলোকে প্রদর্শনীতে স্থান দেওয়া হয়। আমাদের ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থীদের মধ্যে যে এত প্রতিভা তা এ প্রদর্শনীর আয়োজন না করলে বুঝতে পারতাম না। এখানে আমরা কিছু হিডেন ট্যালেন্টকে খুঁজে পেয়েছি, এটাই আমাদের বড় পাওয়া।’
লাইব্রেরির পুরো করিডোর ঘুরে মনে প্রশান্তি এলো। এবার কাজে মনোযোগ আসবে। আড়াইটা বাজতে দু-তিন মিনিট বাকি, বাস ধরতে হবে। বাসের জন্য দ্রুত পা বাড়াচ্ছি আর ভাবছি শিল্পীর রঙতুলির আঁচড় যদি সবার মনে লাগত, তাহলে মানুষের মনগুলো কত সুন্দর হতো!