ডে ট্রিপ
গোলাম কিবরিয়া
প্রকাশ : ১৩ মে ২০২৩ ১২:১৭ পিএম
মুন্সীগঞ্জ শহরের প্রাণকেন্দ্রে ইদ্রাকপুর কেল্লা অবস্থিত
মুন্সীগঞ্জ প্রাচীন একটি জেলা, যা ইতিহাস-ঐতিহ্যে পরিপূর্ণ। এখানে রয়েছে প্রাচীন ইতিহাসের সঙ্গে সম্পর্কিত নানা ঐতিহাসিক স্থাপনা ও নিদর্শন। এ কারণে এ জেলার ব্র্যান্ডিং হিসেবে নির্ধারিত হয় ‘প্রত্ননগরী মুন্সীগঞ্জ’।
এ জেলার প্রাচীন নাম বিক্রমপুর। বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় রয়েছে অনেক দর্শনীয় স্থান। পাঠকের জন্য আজ তুলে ধরছি স্বল্পদূরত্বে মুন্সীগঞ্জের কোথায় এক দিনেই ঘুরে আসা যায়।
ইদ্রাকপুর কেল্লা
মুন্সীগঞ্জ শহরের প্রাণকেন্দ্রে ইদ্রাকপুর কেল্লা অবস্থিত। মুঘল সম্রাট আওরঙ্গজেবের সেনাপতি ও বাংলার সুবাদার মীর জুমলা কর্তৃক ১৬৬০ সালে বিক্রমপুরের এ অঞ্চলে ইদ্রাকপুর কেল্লা নির্মিত হয়। সে সময় মগ জলদস্যু ও পর্তুগিজদের আক্রমণ থেকে এলাকা রক্ষার জন্য দুর্গটি নির্মিত হয়। জনশ্রুতি আছে, সুড়ঙ্গপথে এ দুর্গের সঙ্গে ঢাকার লালবাগ দুর্গের যোগাযোগ ছিল। শত্রুদের উদ্দেশ্যে গোলা নিক্ষেপের জন্য দুর্গটির দেয়ালে অসংখ্য ছিদ্র রয়েছে। প্রাচীরঘেরা এ দুর্গের চার কোনায় রয়েছে একটি করে গোলাকার বেষ্টনী। এ দুর্গটি পুরাকীর্তি হিসেবে ঘোষিত হয়। বহু উচ্চ প্রাচীরবেষ্টিত এ গোলাকার দুর্গটি এলাকায় এসডিও কুঠি হিসেবে পরিচিত।
কীভাবে যাওয়া যায়
মুন্সীগঞ্জ সদরের কাছে পুরাতন কোর্ট অফিস সংলগ্ন এর অবস্থান। ঢাকার গুলিস্তান থেকে ঢাকা ট্রান্সপোর্ট বা দীঘিরপাড় ট্রান্সপোর্টের মাধ্যমে মুক্তারপুর আসা যায়। মুক্তারপুর থেকে অটোরিকশায় ১০ টাকা জনপ্রতি বা রিকশায় ২০-২৫ টাকায় ইদ্রাকপুরের কেল্লায় যাওয়া যায়। এ ছাড়া সদরে নেমে অটোরিকশাচালককে ইদ্রাকপুরের কথা বললেই নিয়ে যাবেন।
মোল্লার চর
প্রথমে ইদ্রাকপুর দুর্গ ঘুরে দেখলাম আমরা। তারপর চিন্তা এলো নদীর পাড়ে যাব। অটোরিকশাচালক বললেন, মোল্লার চর যেতে পারেন। ব্যস, ইদ্রাকপুর থেকে মোল্লার চর যাত্রা করলাম। অটোতে দুজন মাত্র ২০ টাকা দিয়ে মোল্লার চরের কাছাকাছি এসে নামলাম। এরপর বাঁশের সাঁকো পেরিয়ে মোল্লাবাড়ীর বাজারের ভেতরের গলি ধরে এগিয়ে চলা। একটু পরই প্রকৃতির অনন্য রূপ নজরে এলো। সড়কের দুই ধার ধরে বেশ গাছ। একটু এগোলে দূরে তাকালেই চোখে পড়ে নদী। জায়গাটির আসল নাম চরকিশোরগঞ্জ, মোল্লার বাড়ী। স্থানীয়রা ডাকেন মোল্লার চর বলে। খানিক বাদেই দেখা মিলল দুটি রেস্টুরেন্টের। এ পরিবেশে চা না খেলে হয়! তবে চা না পেয়ে নাকিব আর আমি কফি খেয়ে নিলাম। অসাধারণ এক পরিবেশে কাটিয়ে দিলাম বেশ খানিকটা সময়। রেস্টুরেন্টের বাইরের পরিবেশে কফি খেতে খেতে নদীর কলতান উপভোগ করলাম। নদীর ঢেউ পাড়ে আছড়ে পড়া দেখে মনে হবে শান্ত সমুদ্রের উদাস করা ঢেউ। যে কেউ চাইলেই স্বল্প সময়ের দূরত্বের এ জায়গাটি ঘুরে আসতে পারেন। প্রথমে ইদ্রাকপুর ঘুরে সেখান থেকেই মোল্লার চরের কথা বললে অটোরিকশা নিয়ে যাবে। ভাড়া ২০ টাকা।
অতীশ দীপঙ্করের বাস্তুভিটা
মোল্লার চর ঘুরে আমরা অটোতে রওনা দিলাম অতীশ দীপঙ্করের বাস্তুভিটা দেখতে। শ্রীজ্ঞান অতীশ দীপঙ্কর হলেন একজন প্রখ্যাত পণ্ডিত, যিনি পাল সাম্রাজ্যের আমলে একজন বৌদ্ধ ভিক্ষু ও ধর্ম প্রচারক ছিলেন। তিনি ৯৮২ খ্রিস্টাব্দে বিক্রমপুর পরগনার বজ্রযোগিনী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। এটি বর্তমানে মুন্সীগঞ্জের অন্তর্ভুক্ত। তাঁর জন্মস্থানের বাস্তুভিটাকে এখনও স্থানীয়রা ‘পণ্ডিতের ভিটা’ বলে অভিহিত করেন।
বিক্রমপুর বৌদ্ধ বিহার, রঘুরামপুর
নাটেশ্বর ঘুরে রঘুরামপুরে বিক্রমপুর বৌদ্ধবিহার দেখতে যেতে পারেন। বিক্রমপুর বিহার মুন্সীগঞ্জের বিক্রমপুরের অন্তর্গত রঘুরামপুর গ্রামে অবস্থিত একটি প্রাচীন বৌদ্ধবিহার। এটি মহারাজ ধর্মপালের শাসনামলে নির্মিত ৩০টি উল্লেখযোগ্য বিহারের অন্যতম। ধর্মপাল ছিলেন পাল সাম্রাজ্যের দ্বিতীয় সম্রাট। ঐতিহাসিকভাবে এ মঠটি অতীশ দীপঙ্করের সঙ্গে সম্পর্কিত, যিনি তিব্বতি বৌদ্ধধর্মের ইতিহাসেও একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব। অতীশ দীপঙ্করের জীবদ্দশায় এ অঞ্চলটি ছিল বৌদ্ধধর্ম শিক্ষার কেন্দ্রবিন্দু। চীন, তিব্বত, নেপাল ও থাইল্যান্ডের মতো দূরবর্তী অঞ্চল থেকে হাজার হাজার শিক্ষার্থী এখানে অধ্যয়ন করতে আসতেন। সেসব দেশের অধ্যাপকরাও এখানে অধ্যাপনা করতেন।