× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েব

বিশ্ব যেভাবে হাতের মুঠোয়

দেবাশীষ বিশ্বাস

প্রকাশ : ০৬ মে ২০২৩ ১৩:৫৫ পিএম

আপডেট : ০৭ মে ২০২৩ ১৫:১৬ পিএম

বিশ্ব যেভাবে হাতের মুঠোয়

ইন্টারনেট আমাদের জীবনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে, তা বলাই বাহুল্য। তথ্য ও গবেষণা, শিক্ষা, আর্থিক লেনদেন, প্রিয়জনের সঙ্গে যোগাযোগ থেকে শুরু করে দৈনন্দিন নানা কাজে আমরা ইন্টারনেটের ওপর নির্ভর করে থাকি। কিন্তু আপনি কি কখনও খেয়াল করেছেন ইন্টারনেট ব্যবহার করার সময় ব্রাউজারে ওয়েবসাইটের ঠিকানার আগে www লেখা থাকে। এর অর্থ কী, এর কাজ কী, কে আবিষ্কার করেছেন কিংবা এর ইতিহাসই বা কী? 

আজ থেকে ৩৩ বছর আগে তৈরি হয়েছিল ইন্টারনেট ব্যবহারের এই সহজ ব্যবস্থা। কিন্তু তা সবার জন্য উন্মুক্ত করা হয় ৩০ বছর আগে, ১৯৯৩ সালের ২৯ এপ্রিল। www বা ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েব জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত হওয়ার ফলে বিশ্বজুড়ে যে বিপ্লব সাধিত হয়েছে বা গোটা দুনিয়াই আমাদের হাতের মুঠোয় চলে এসেছে।  তা বলাই বাহুল্য।

ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েব কী

ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েব (World Wide Web) হাইপারটেক্সট মার্ক-আপ ভাষা বা এইচটিএমএল ব্যবহার করে হাইপারমিডিয়াকে বোঝায়, যা সংক্ষেপে WWW, W3 বা ওয়েব নামেও পরিচিত। এটি এমন একটি পদ্ধতি, যা অনেক সার্ভারের (ওয়েব সার্ভার) সংযুক্তির মাধ্যমে গঠিত হয়। এসব ওয়েব সার্ভার ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের যেকোনো ধরনের তথ্য যেমন- টেক্সট ফাইল, ছবি, ভিডিও বা অন্য যেকোনো ধরনের তথ্য সরবরাহ করতে সক্ষম।

ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েবের ইতিহাস

ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েবের মূল ধারণাটি ছিল কম্পিউটার, ডেটা নেটওয়ার্ক ও হাইপারটেক্সটের উন্নত প্রযুক্তিগুলোকে শক্তিশালী এবং সহজে ব্যবহারযোগ্য বৈশ্বিক তথ্যব্যবস্থায় রূপান্তর করা। যার পরিপ্রেক্ষিতে এর জন্ম হয়েছিল ১৯৮৯ সালে ইউরোপিয়ান অর্গানাইজেশন ফর নিউক্লিয়ার রিসার্চ (সিইআরএন) প্রতিষ্ঠানে। তখনকার সময়ে সিইআরএন ছিল বিভিন্ন দেশের বিজ্ঞানীদের একটি কমিউনিটি। যার প্রধান কার্যালয় ছিল সুইজারল্যান্ডের জেনেভা শহরে।

১০০টি দেশের প্রায় ১০ হাজারের অধিক বিজ্ঞানীর এই বিরাট পরিমণ্ডলের মধ্যে যেকোনো উপায়ে একটি কার্যকর যোগাযোগব্যবস্থা গড়ে তোলা দরকার ছিল। যার মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী বিশ্ববিদ্যালয় এবং বিজ্ঞান সংস্থার বিজ্ঞানীদের মধ্যে স্বয়ংক্রিয় তথ্য আদান-প্রদানের চাহিদা পূরণের জন্য কাজ করবে। 

সেই চাহিদা থেকেই ব্রিটিশ বিজ্ঞানী টিম বার্নার্স-লি ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েব বা WWW-এর ধারণা দেন প্রথম। খুব সহজে ও নিরাপদে তথ্য আদান-প্রদানের জন্য ইনফরমেশন ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমের জন্য টিম বার্নার্স-লি ওয়েব পেজ সৃষ্টির চিন্তা করেছিলেন। ১৯৮৯ সালের মার্চ মাসে তিনি এ বিষয়ে প্রথম প্রস্তাব করেছিলেন। কিন্তু সেই প্রস্তাবটি তার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ‘অস্পষ্ট, তবে ইন্টারেস্টিং’ বলে উড়িয়ে দিয়েছিলেন।

বার্নার্স-লি দমে না গিয়ে আবার কাজে মন দেন। প্রায় এক বছর পর ১৯৯০ সালে তিনি আগের ভাবনায় কিছু যোগ-বিয়োগ করে দ্বিতীয় প্রস্তাব দেন। তার এবারের ধারণা পছন্দ হয় সবার। একই বছরের ২০ ডিসেম্বর থেকে সিইআরএন এটিকে নিজেদের অভ্যন্তরীণ কাজে ব্যবহার শুরু করে। 

১৯৯১ সালে আগস্ট মাস থেকে প্রতিষ্ঠানটি তাদের সদস্যভুক্ত দেশে ও বিজ্ঞানীদের জন্য ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েব উন্মুক্ত করা হয়। তবে এর দুই বছর পর সিইআরএন ৩০ এপ্রিল, ১৯৯৩ সালে ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েব সিস্টেমকে পাবলিক ডোমেইনে রাখে। যাতে সারা বিশ্বের মানুষই ইন্টারনেটের সুবিধা নিতে পারে। তবে এর জন্য একটি ওপেন লাইসেন্সের ব্যবস্থা রাখা হয়। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বর্ধিত ও সমৃদ্ধ হতে হতে সেই ওয়েব এখন একটি বিরাট প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। যার মাধ্যমে পুরো বিশ্বই এখন কোটি মানুষের হাতের মুঠোয় চলে এসেছে।

৩৩ বছর আগে টিম বার্নার্স-লি নিজের কম্পিউটারে এই আবিষ্কার নিয়ে কাজ করছিলেন। সেই কাজকে হাইপারটেক্সট ট্রান্সফার প্রোটোকল (এইচটিটিপি) হিসেবে ব্যাখ্যা দিয়েছিলেন তিনি। অতি সামান্য এক ধারণা থেকে তিনি শুরু করেছিলেন ইনফরমেশন ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম বা তথ্যপ্রযুক্তি নিয়ে। তার সেই ক্ষুদ্র চিন্তা তিন দশক পর বিরাট এক মহিরুহতে পরিণত হয়েছে। আধুনিক বিশ্বের অগ্রগতিতে বার্নার্স-লির এই আবিষ্কার ইতিহাসের পাতায় ঠাঁই করে নিয়েছে নিঃসন্দেহে।

ব্রিটিশ বিজ্ঞানী টিম বার্নার্স-লি ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েব-এর ধারণা দেন প্রথম

ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েবে কীভাবে কাজ করে

কোনো ব্যবহারকারী ওয়েব ডকুমেন্ট খুললে এর জন্য ওয়েব ব্রাউজার নামে এক ধরনের অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহার করা হয়। ওয়েব ব্যবহার করার জন্য প্রয়োজন পড়ে অপারেটিং সিস্টেম, যেমন- লিনাক্স, মিন্ট, অ্যান্ড্রয়েড ইত্যাদি। ওয়েব ব্রাউজারে ডোমেইন বা ইউআরএল লেখা হলে ব্রাউজারটি http-এর ডোমেইন ঠিকানা অনুসন্ধান করে। কারণ প্রতিটি ডোমেইনের নিজস্ব আলাদা ঠিকানা থাকে। এর পর ব্রাউজার ডোমেইন নামটি সার্ভারের আইপি ঠিকানায় রূপান্তর করে। যাকে www সার্ভারে অনুসন্ধান করে। যখন ডোমেইনটি নিজস্ব সার্ভারের ঠিকানাটি খুঁজে পায় তখন সার্ভার সেই পৃষ্ঠাটি ব্রাউজারে ফেরত পাঠায়, যা আমরা ওয়েব ব্রাউজারে দেখতে পাই।

যেমনÑ আপনি লিখলেন বাংলাদেশ। বাংলাদেশ সংশ্লিষ্ট যত ওয়েবপেজ বা সার্ভার কিংবা তথ্য আছে ইন্টারনেটে সেগুলো প্রস্তাব বা সাজেশন্স আকারে আমাদের ব্রাউজারে চলে আসে। সেখান থেকে আপনি আপনার চাহিদা বা পছন্দ অনুযায়ী ওয়েবসাইটে গিয়ে কাঙ্ক্ষিত তথ্যটি জেনে নিতে পারেন। 

এবার নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছেন WWW কী। এটি ওয়েব সার্ভার, ওয়েবসাইট, ব্রাউজার, ওয়েবপেজ, http, হাইপারটেক্সট এবং অবশেষে হাইপারলিংকের সঙ্গে কাজ করে। যাতে সব পেজের ঠিকানা এবং পৃষ্ঠা সংযুক্ত করার ক্ষমতা রয়েছে। সাধারণত ইউআরএল, ওয়েব ব্রাউজার, এইচটিটিপি এবং এইচটিএমএলÑ এই চারটি প্রযুক্তি ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েব চালানোর জন্য ব্যবহার করা হয়। এসব ছাড়া ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েবের অস্তিত্ব নেই।

কিছু জানা-অজানা

 ** ম্যারি লি উডস ও কনওয়ে বার্নাস-লি, টিম বার্নার্স-লির বাবা-মা। তারা ছিলেন গণিত বিশেষজ্ঞ এবং কম্পিউটার সায়েন্টিস্ট। তারা উভয়ই বিশ্বের প্রথম দিককার বাণিজ্যিক কম্পিউটার ‘ফেরানটি মার্ক-ওয়ান’ তৈরিতে কাজ করেছিলেন। 

** কলেজে পড়ার সময় বার্নাস-লি পুরোনো টেলিভিশন সেট ব্যবহার করে একটি কম্পিউটার তৈরি করেন।

** টিম বার্নাস এই তথ্য যোগাযোগ ব্যবস্থা তৈরির আগে ‘এনকোয়ারি’ নামের আরেকটি বিষয় নিয়ে কাজ করেছিলেন। ভিক্টোরিয়ান যুগের একটি তথ্যবহুল বইয়ের নাম থেকে এ নামটি নিয়েছিলেন তিনি। যদিও এনকোয়ারির কোড কালের গর্ভে হারিয়ে গিয়েছিল পরবর্তী সময়ে। 

 ** ইন্টারনেটে কিছু খোঁজার প্রযুক্তি তো আবিষ্কা হলো। কিন্তু কিসের মাধ্যমে খুঁজতে হবে তার জন্য প্রথম ওয়েব ব্রাউজারটি তৈরি করে আমেরিকার ইলিনয় বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিষ্ঠিত ন্যাশনাল সেন্টার ফর সুপার কম্পিউটিং অ্যাপ্লিকেশনস নামের সংস্থা। ১৯৯৩ সালে তাদের তৈরি মোজাইক ব্রাউজারটি ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েবের জনপ্রিয়তা বাড়িয়ে দেয় বিশ্বজুড়ে। 

** তথ্য খোঁজার জন্য সার্চ ইঞ্জিন এখন বেশ জনপ্রিয়। ১৯৯০ সালে এ ধারণা প্রথম নিয়ে আসে আর্চি নামের একটি সার্চ ইঞ্জিন। তার দেখানো পথ ধরেই পরবর্তী সময়ে আসে গুগল, ইয়াহুর মতো জনপ্রিয় সার্চ ইঞ্জিন।

** ওয়েবের মাধ্যমে ইন্টারনেটে প্রথম আপলোড করা ছবিটি হলো সিইআরএনের কয়েকজন নারী কর্মীর সমন্বয়ে গড়ে তোলা ‘লেস হরিবলেস করনেত্তেস’ নামের একটি ব্যান্ডদলের সদস্যদের।

** জানলে হয়তো অবাক হবেন, ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েবের মাধ্যমে বিশ্বে প্রতিদিন পাঁচশত ১৮ কোটিরও বেশি মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার এবং তথ্য খুঁজে থাকে।

** কোনো ওয়েবসাইট তৈরি করতে চাইলে ডোমেইনের জন্য বর্তমানে টাকা খরচ করতে হয় বা কিনে নিতে হয়। কিন্তু একটা সময় পর্যন্ত এটা ছিল সম্পূর্ণ ফ্রি! ১৯৯৫ সালের পর থেকে ডোমেইন কিনে ওয়েবসাইট তৈরি করতে হয়। 

** বিশ্বজুড়ে বর্তমানে একশত ১৩ কোটিরও বেশি ওয়েবসাইট রয়েছে। 

** অবাক হওয়ার মতো তথ্য হলো, বিশ্বজুড়ে ওয়েবসাইটের সঙ্গে সংযুক্ত কম্পিউটার, মোবাইল এবং এ ধরনের যত ডিভাইস আছে তা পৃথিবীর জনসংখ্যার চেয়ে বেশি!



শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা