হাফিজ
প্রকাশ : ১২ এপ্রিল ২০২৩ ১২:৫৪ পিএম
সিলেটের ক্বীন ব্রিজসংলগ্ন ফুটপাথে বসার জায়গা করছেন একদল তরুণ। তখন সন্ধ্যা ৬টা। একটু পরই ইফতার। সবার মাঝে ব্যস্ততা। বিছানো হয়েছে দীর্ঘ চট। থরে থরে সাজানো ইফতারির প্যাকেট। বিছানো চটে বসেছেন শতাধিক মানুষ। অনেকেই বসার অপেক্ষায়। কর্মব্যস্ততা সেরে আসছেন! আগতদের মধ্য ভিক্ষুক, রিকশাচালক, কেউবা আবার পথচারী। সবাই মিলে সারলেন ইফতার। সবাইকে নিয়ে এক কাতারের ইফতারের এই আয়োজন করেছে ‘ সেভ সিলেট।’
এ বছর রমজান মাসজুড়েই সুবিধাবঞ্চিত মানুষের জন্য সিলেট শহরের বিভিন্ন জায়গায় ইফতারের আয়োজন করে সাড়া ফেলে দিয়েছে এই সামাজিক সংগঠনটি। শুধু সিলেট শহরই নয়, বিভাগের প্রতিটি উপজেলায় এবং শহরের প্রতিটি ওয়ার্ডে ইফতারির আয়োজন করেছে এই সংগঠনটি। শুধু ইফতারিই নয়, এর পাশাপাশি রয়েছে সেহরির আয়োজনও। সিলেট বাইকার্স ক্লাবের রাইডারদের মাধ্যমে রাতের আঁধারে শহরের ওলি-গলিতে ঘুরে ঘুরে সেহরি বিতরণ করেন তারা।
সংগঠনটির শহর-টিম সরাইখানার রান্নাঘরে রান্না খাবার প্রস্তুত এবং প্যাকেট করে শহরের বিভিন্ন পয়েন্টে প্রতিদিন ইফতারি বিতরণ করেন। পাশাপাশি আম্বরখানা, চৌহাট্টা, বন্দরসহ বিভিন্ন এলাকার ফুটপাতে বসে সুবিধাবঞ্চিত মানুষের সঙ্গে ইফতার করেন সংগঠনের স্বেচ্ছাসেবীরা। ছেলেদের পাশাপাশি সংগঠনের নারীরাও (সিলেট ওয়ান্ডার ওমেন) সক্রিয়। নামিদামি হোটেলে অনেক মানুষের সাধ্য নেই খাবারের। তাদেরকে নিয়েই সংগঠনের নারী সদস্যরা রেস্তোরাঁয় খাওয়ানোর ব্যবস্থা করেছেন।
এমন উদ্যোগ সম্পর্কে সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা আয়ান মুমিনুল হক বলেন, ‘পবিত্র মাসে মানুষের জন্য কিছু করার চেষ্টা থেকেই আমাদের আয়োজন। আমরা এই রমজানে ইনশাআল্লাহ ১ লাখ রোজাদারকে ইফতারি ও সেহরি খাওয়ানোর উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। আমাদের ৪০টা উপজেলা টিম নিজ নিজ উপজেলায় ১৫০০ জন রোজাদারকে খাওয়াবেন। আর সিটি টিম ৪২টা ওয়ার্ডে ১০০০ জন করে খাওয়ানোর ব্যবস্থা করবেন। সেই লক্ষ্যে সবাই মিলে কাজ করছেন।’ তিনি আরও বলেন, আমাদের সবচেয়ে বড় শক্তির জায়গা হচ্ছে ১ লাখ সতেরো হাজার মেম্বার। যারা ৪০ টি উপজেলা ছাড়াও বিশ্বের ৩৬টি দেশে আছেন। আমরা একা কাজ করি না। আমাদের মূলমন্ত্র হচ্ছে একতাবদ্ধ হয়ে কাজ করা। সবচেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে, আল্লাহ সবকিছু ম্যানেজ করে দিচ্ছেন। সবাই সহায়তা করছেন। সবাই নিজ থেকে যুক্ত হচ্ছেন।’
শুধু রমজান উপলক্ষে খাবারের আয়োজনই নয়। সেভ সিলেট অসহায় মানুষকে বিনামূল্যে আতিথেয়তার জন্য প্রায় ২ বছর আগে শুরু করে ভ্রাম্যমাণ রেস্টুরেন্ট ‘সরাইখানা’।
২০২০ সালের ২৬ মার্চ ‘সেভ সিলেট’-এর যাত্রা। যখন করোনা মহামারিতে বিপর্যস্ত পুরো বিশ্ব। সেভ সিলেটের জন্ম তখন একটি মিশন নিয়েই। সিলেট বিভাগের এক লাখ অসহায় পরিবারকে মহামারির সময় যেন বাড়িতে রাখা যায়। তারা যেন বাড়ি থেকে বের না হন। যেহেতু সবাই খেটে খাওয়া মানুষ, তাই তাদের যদি বাড়িতে রাখা যায়। তাহলে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কমিয়ে আনা সম্ভব। সেই থেকে শুরু। তবে মিশন এখন আরও বড়, বিস্তৃত। ২৬৩টি প্রজেক্ট নিয়ে আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে সেভ সিলেট। এর মধ্যে সিলেট ব্ল্যাড সেন্টারে ৬২ হাজারের বেশি ব্ল্যাড ডোনার আছেন। এ পর্যন্ত দেড় লাখের বেশি মানুষের ব্ল্যাড গ্রুপ টেস্ট করেছেন তারা। ‘সিলেট ওয়ান্ডার ওমেন’ আরেকটি প্রজেক্ট। যাতে সাড়ে ৬ হাজারের বেশি নারী আছেন।
কম সময়ে ‘ সেভ সিলেট’ সিলেট বিভাগের সবচেয়ে বড় ও দেশের অন্যতম সামাজিক প্ল্যাটফর্ম হতে পেরেছে। অর্জনও কম নয় তাদের। ‘ শেখ হাসিনা ইয়ুথ ভলান্টিয়ার অ্যাওয়ার্ড ২০২০’ অর্জন, এ ছাড়া ওআইসি ইয়ুথ ক্যাপিটাল ঢাকার অনুষ্ঠানে সম্মাননা লাভ, দুবাইয়ে গ্লোব্যাল পিস অ্যান্ড হিউম্যানিটারিয়ান অ্যাওয়ার্ড ২০২১ এবং থাইল্যান্ডে গ্লোব্যাল ইয়ুথ লিডারশিপ অ্যাওয়ার্ড ২০২২ লাভ করেন সংগঠন এবং এর প্রতিষ্ঠাতা।