নাঈমুল হাসান তানযীম
প্রকাশ : ০৯ এপ্রিল ২০২৩ ১৬:২৫ পিএম
সমাজে কিছু পুরুষ আছে যারা তাদের বউয়ের কাছে বিড়ালের মতো নত হয়ে থাকেন। দিন নাই রাত নাই বউয়ের ঝাড়ির ওপর থাকেন সব সময়। পান থেকে চুন খসলেই বউদের অত্যাচারের শিকার হন। এককথায় বউয়েরা থাকেন স্বামী আর স্বামীরা হয়ে যান বউ- এমন অবস্থা আরকি। তেমনই এক জুটি সারওয়ার-তানিয়া। পারতপক্ষে তারা দুজন স্বামী-স্ত্রী হলেও আচার-ব্যবহার দেখে যে কেউ বলবেন, ‘ম্যাডাম আর চাকর’। তানিয়ার আদেশ শুনতে শুনতে এবং পালন করতে করতেই সারওয়ারের সারা দিন কাটে। তার ওপর সামান্য ভুল হলে খবর আছে।
এই তো সেদিনের ঘটনা। তানিয়া সারওয়ারকে বললেন মাছ কিনে নিয়ে আসতে। সারওয়ার বাজারে গেলেন মাছ আনতে। অনেক খোঁজাখুঁজি করে মনমতো একখান মাছ পেলেন তিনি। বড় এক রুই। মাছটা পছন্দসই হলেও দামটা ছিল বাজেটের বেশি। সাড়ে পাঁচশ টাকা! শেষমেশ ভেবেচিন্তে আল্লাহর ওপর ভরসা করে নিয়েই নিল এ দামে। বউয়ের ব্যাপারটা আপাতত আমলে নিল না। ভুলভাল একটা বুঝ দিয়ে চালিয়ে দেবেন এমনটিই পরিকল্পনা তার।
মাছ নিয়ে ফুরফুরে মেজাজে বাড়ি ফিরলেন সারওয়ার। অনেক দিন পর খুব মজা করে মাছ ভুনা খাবেন। ভাবতেই জিভে জল চলে এলো যেন। ঘরে ঢুকতেই হুড়হুড় করে তেড়ে এলেন তানিয়া। মাছটা দেখেই চক্ষু যেন চড়কগাছ তার।
-কী সর্বনাশের কাম করেছে! কত বড় মাছ নিয়া আইছে, টাকা-পয়সা না জানি সব শেষ হয়া গেছে আইজকা!
-আরে কী বলতাছ টাকা-পয়সা শেষ হয়ে গেছে! জানো কত সস্তায় নিয়া আইলাম মাছটা!
-কত?
মাত্র দেড়শ টাকা নিছে।
হাঁফ ছেড়ে বাঁচলেন তানিয়া। সারওয়ার বেচারাও একটু স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললেন। আসল দামটা জানলে এই মহিলা যা করতেন তা আর ভাবতেও পারছেন না তিনি।
বউকে বললেন- শুনো, আমি আসরের নামাজটা পইড়া আসি। পারলে কয়েক পিস ভাইজা রাইখ। নামাজ পইড়া আইসা খামু।
-আচ্ছা যাও, আমি ভাজতাছি।
সারওয়ার এ বলে গেলেন নামাজ পড়তে। তানিয়া মনে মনে ভাবলেন, এত বড় একটা মাছ। আমাদের তো আর পুরোটা লাগছে না। পাশের ঘরের ভাবিকে জিজ্ঞেস করি গিয়ে অর্ধেকটা নেবে কি না। দামও একটু বাড়িয়ে নিলাম। যেই ভাবা সেই কাজ। সারওয়ারের নামাজ পড়তে যাওয়ার ফাঁকে তানিয়া পাশের ঘরে গিয়ে অর্ধেক মাছ বিক্রি করে দিলেন ১০০ টাকায়। কেনা হয়েছিল দেড়শ টাকায়। অর্ধেক বিক্রি করে পাওয়া গেল ১০০ টাকা। ৫০ টাকাই লাভ!
সারওয়ার মসজিদ থেকে ঘরে এলেন। তানিয়া হাস্যোজ্জ্বল মুখে তার কাছে খুলে বললেন অর্ধেক মাছ বিক্রি করে দেওয়ার ব্যাপারটা। সব শুনে সারওয়ার যেন আসমান থেকে পড়লেন। এ মুহূর্তে তার মেজাজটা হয়ে গেল অনেকটা এমনÑ না কইতে পারি, না সইতে পারি...