প্রচ্ছদ
সুবর্ণা মেহ্জাবীন স্বর্ণা
প্রকাশ : ০৫ এপ্রিল ২০২৩ ১৪:০০ পিএম
আপডেট : ০৫ এপ্রিল ২০২৩ ১৬:৩৫ পিএম
মডেল: সূচনা ও বিথী; পোশাক: কিউরিয়াস; মেকআপ: রাজিয়া’স মেকওভার; ছবি: ফারহান ফয়সাল
যেকোনো উৎসবেই নারীর প্রথম পছন্দ থাকে শাড়ি। কেননা শাড়ি কখনও পুরোনো হয় না। ছয় গজ লম্বা এই কাপড়টির আবেদন সব সময়ই আলাদা। হোক তা জামদানি বা সিল্ক- দেশীয় শাড়ির সৌন্দর্যই অন্য রকম। এবার ঈদেও থাকছে শাড়ির নকশায় দেশজ ধাঁচ।
পশ্চিমা সংস্কৃতির প্রভাব যতই থাক, বিশেষ দিনে দেশীয় ঐতিহ্যের প্রিয় শাড়ির কথায় আগে মনে আসে। ছয় গজের লম্বা কাপড়টি ডিজাইনারদের কাছে যেন একটা ক্যানভাস। সাদা বা রঙিন এই ক্যানভাসে তারা ফুটিয়ে তোলেন নানা ধরনের নকশা। কখনও সোনালি-রুপালি জরি, আবার কখনও অ্যাপ্লিক, ভারী ব্লক, কিংবা নকশিকাঁথা ডিজাইন। দেশীয় ফেব্রিকে এসব নকশায় শাড়িতে ফুটে ওঠে নানা গল্প। ফ্যাশন হাউসগুলো সব সময়ই ঈদকে ঘিরে করে নানা আয়োজন। এবারও তার ব্যতিক্রম নয়। নকশার পুনরাবৃত্তি নেই বললেই চলে। ডিজাইনে দেখা যাবে বেশ আধুনিকতা। ফ্যাশন ব্র্যান্ডগুলো সব সময়ই নতুন কিছু করার চেষ্টা করে। পাঁড়, কুঁচি ও আঁচলে দেখা মিলছে এবার নকশার বাহার। কখনও একই নকশা তৈরি করছে নান্দনিকতা, কখনও-বা ভিন্ন ভিন্ন নকশা পাশাপাশি অবস্থান নিয়ে প্রকাশ করছে ভিন্নতা।
শাড়ির ওপর দেশীয় নকশার আবেদন সব সময়ই জনপ্রিয়। জামদানি, ফুল, পুঁতি, কাঁথা ফোঁড়ের নকশায় এক একটা শাড়ি অনন্য। একইভাবে পাশ্চাত্যের নকশাও শাড়িতে দেখা যায়। জ্যামিতিক নকশা, বিদেশি নানা ফুল, ডোরাকাটা, মেক্সিকান চিত্রশিল্প প্রভৃতিও ফুটিয়ে তোলা হয় শাড়িতে। সঙ্গে ন্যাচারাল ডাই, মোমবাটিক, চুনরি প্রিন্ট তো আছেই। প্রথমবারের মতো এবার হাফসিল্ক জামদানি নিয়ে এসেছে জানালেন ফ্যাশন হাউস কিউরিয়াসের হেড অব ডিজাইনার বিপ্লব বিপ্রদাস। তিনি বলেন, ঈদ উপলক্ষে শাড়িতে আমরা রেখেছি অর্নামেন্টাল ও ইসলামিক মোটিফ। এ ছাড়া কন্টেম্পরারি লিনিয়ার মোটিফ প্রাধান্য পেয়েছে। গরমের মধ্যে যেহেতু ঈদ, তাই ফেব্রিক এবং ডিজাইন করা হয়েছে আরামের ব্যাপারটা মাথায় রেখে। যা একদিকে হবে আরামদায়ক; অন্যদিকে দেখাবে আকর্ষণীয়।
আরও পড়ুন : শিশুর রঙিন ঈদ
হাউসটিতে মিলবে নানা ফেব্রিকের শাড়ি। যার মধ্যে আছে সিল্ক, কাতান, জামদানি, হাফসিল্ক প্রভৃতি। হাফসিল্কের মধ্যে দুটো ভাগে মিলবে শাড়ি। সিল্কের সঙ্গে কটন আর সিল্কের সঙ্গে লিনেনের মিশেলে এক্সক্লুসিভ শাড়ি কালেকশন পাওয়া যাবে। এ ছাড়া আছে মসলিন ও কটন। ১০০ কাউন্টের খাদি মিহি সুতার তৈরি কটন শাড়ি। সেটা বেশ পাতলা আর সুন্দর। খাদি মানেই যে কাপড়টি মোটা হবে, এটা আসলে ঠিক নয়। শাড়িগুলোতে দেখা যাবে সমসাময়িক আবেদন, অপ্রতিসম মোটিফ ও আটওয়ার্কের ব্যবহার। এ ছাড়া প্রিন্টিংয়ের ক্ষেত্রে দেখা যাবে বেশকিছু বৈচিত্র্য। সিল্কে অ্যাসিড কালারে প্রিন্ট, কটনে রি-অ্যাকটিভ প্রিন্ট, তাঁতপ্রিন্ট, এমব্রয়ডারি, কাটওয়ার্ক আরও অনেক কিছু। মোটিফে দেখা যাবে অর্নামেন্টাল ও ইসলামিক মোটিফ। শাড়ির পাড় ও আঁচলে প্রাধান্য পেয়েছে আলাদা কাজ। কিছু কিছু শাড়িতে কুঁচির মধ্যে দেখা যাবে আলাদা নকশা। যা শাড়িগুলোকে করে আকর্ষণীয়। মাঝে মধ্যে চোখে পড়ে যায় চুমকির ছটা। কিছু শাড়িতে আবার কাচের মতো অনুষঙ্গের সঙ্গে সুতার নকশাও দেখা যাবে। আলাদা করে লেস দিয়েও ডিজাইন করা শাড়ি মিলছে। পাড় ও আঁচলে লেস, আবার পুরো শাড়িতে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে চুমকি, পুঁতি, পাইপ বসিয়ে ডিজাইন করা হয়েছে।
উৎসবমুখর আবহ আনতে থাকছে উজ্জ্বল রঙ। ১২টি কালারকে নির্বাচন করে নানা শেডের ব্যবহার দেখা যাবে শাড়িতে। যার মধ্যে আছে লাল, ক্রিমসন রেড, ভার্মিলন রেড, মেরুন, বার্নড অরেঞ্জ, কমলা, নীল, সবুজ প্রভৃতি। সঙ্গে হলুদের কিছু টোন দেখা যাবে। এই ঈদে জারদৌসি আর অ্যাপ্লিকের কাজের শাড়ি বেছে নিতে পারেন। সিল্ক, মসলিন বা জর্জেটের শাড়ির ওপর এসব কাজ দেখতে অনেক সুন্দর লাগে। সকালের জন্য হালকা উপকরণ ও রঙ, বেড়াতে যাওয়ার সময় উজ্জ্বল রঙ আর রাতের অনুষ্ঠানের জন্য একটু জমকালো কাজ- এভাবেই তৈরি করা হয়েছে শাড়িগুলোকে। আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী বেছে নিতে পারেন পছন্দের রঙের শাড়ি।
শাড়ি ও ব্লাউজের রঙে সাদৃশ্য যেমন আছে, তেমন বৈসাদৃশ্যও দেখা যাচ্ছে। এ ধরনের ব্লাউজ ফ্যাশনেবল নকশায় তৈরি করলে বেশ ট্রেন্ডি লুক আসবে। ব্লাউজের হাতা ও গলার অংশে গতানুগতিক নকশা না করে একটু ভিন্ন মাত্রা আনতে পারেন। গলায় দিতে পারেন একটু কুঁচি বা হাই নেক। হাতায় হয়তো হলো ভিন্ন কোনো প্যাটার্ন। ব্লাউজের নকশাকে প্রাধান্য দিলে শাড়িটা খুব বেশি জাঁকজমক না হলেই ভালো দেখাবে। তবে মসলিন, জামদানির মতো ঐতিহ্যবাহী শাড়িতে থাকে ভিন্ন মাত্রার নকশা, যার সঙ্গে প্রথাগত ডিজাইনের ব্লাউজই বেশি মানানসই।