ডা. হুমায়ুন কবীর হিমু
প্রকাশ : ২৯ মার্চ ২০২৩ ১৪:১১ পিএম
হৃদরোগীরা রোজা পালন করতে পারবেন কি না, রোজার মাস এলেই হৃদরোগ বিশেষজ্ঞদের প্রতিনিয়ত এমন প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়। এক কথায় বলতে গেলে হৃদরোগীদের রোজা রাখতে তেমন সমস্যা নেই। রোজা রাখলে বরং শরীরের জন্য আরও ভালো। গবেষণায় দেখা গেছে, রোজা পালন করলে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রিত হয়। সেই সঙ্গে রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা ও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রিত হয়। সে হিসেবে রোজা পালন কিন্তু শরীরের জন্য খারাপ নয়, বরং উপকারী।
উচ্চ রক্তচাপ রোজা পালনে কোনো প্রতিবন্ধক নয়। তবে উচ্চ রক্তচাপের রোগীদের রোজা পালনের আগে অবশ্যই চিকিৎসকের মাধ্যমে ওষুধের ডোজ পরিবর্তন করে নিতে হবে। যেসব ওষুধ দিনে তিনবার খেতে হয়, সেগুলো বাদ দিয়ে দিনে একবার খেলেই চলেÑ এমন ওষুধ খেতে পারেন। চিকিৎসককে বললে আপনাকে দিনে একবার খেলেই চলেÑ এমন ওষুধ প্রেসক্রাইব করে দেবেন। অ্যানজাইনা পেকটোরিস, হার্ট অ্যাটাকের রোগী এমনকি যাদের হৃৎপিণ্ডের রক্তনালিতে রিং লাগানো আছে, তারাও রোজা রাখতে পারবেন। এ জন্য আপনাকে ওষুধের ডোজ পরিবর্তন করে নিতে হবে। আপনাকে যদি অ্যাসপিরিন সেবন করতে হয়, তবে তা সেহরির সময় সেবন করবেন। যদি অ্যাসিডিটির সমস্যা দেখা দেয়, তাহলে ওমিপ্রাজল খেতে পারেন।
এ বছরে আমাদের দেশের আবহাওয়ার আর্দ্রতা অনেক বেশি। এজন্য আমাদের শরীর থেকে অতিরিক্ত ঘাম বের হচ্ছে। অনেক হৃদরোগীকেই ডাইইউরেটিক যেমন ফ্রুসেমাইড, স্পাইরোনোল্যাকটোন, টোলাজেমাইড ইত্যাদি ওষুধ খেতে হয়। এ ওষুধগুলো দেহ থেকে পানি বের করে দেয়। ঘামের সঙ্গে সঙ্গে এ ওষুধ দেহ থেকে বেশি পরিমাণে পানি বের করে দেওয়ায় সমস্যা দেখা দিতে পারে। এ ক্ষেত্রে আপনার চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে রোজার সময় এ ওষুধ সেবন না করাই ভালো। যদি সেবন করতেই হয়, তবে ওষুধের ডোজ কমিয়ে দিতে হবে। এ জাতীয় ওষুধগুলো সন্ধ্যার পর সেবন করুন।
রোজা পালন করতে গিয়ে যদি হঠাৎ করে সিস্টোলিক রক্তচাপ ১৮০ মিলিমিটার পারদ চাপের বেশি ও ডায়াস্টোলিক রক্তচাপ ১১০ মিলিমিটার পারদ চাপের বেশি হয়। তাহলে রোজা ভেঙে ফেলতে হবে। যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসকের পরামর্শ মতো ওষুধ সেবন করতে হবে।
রোজা রাখলে যদি শ্বাসকষ্ট ও বুকে বেশি ব্যথা অনুভূত হয়, তবে রোজা না রাখাই ভালো। যদি উচ্চ রক্তচাপের সঙ্গে কিডনির সমস্যা থাকে, তবে রোজা রাখতে হলে একজন কিডনি রোগের বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া যেতে পারে। বুকের দুধ পান করাচ্ছেনÑ এমন উচ্চ রক্তচাপের রোগীরা রোজা পালনে কোনো সমস্যা নেই।
হৃদরোগীদের ইফতারিতে ভাজা-পোড়া খাওয়া সম্পূর্ণ নিষেধ। অতিরিক্ত খাবারও খাবেন না। প্রচুর পরিমাণ ফলমুল ও শাক-সবজি খেতে হবে। ইফতারিতে ফল হিসেবে খেজুর খেতে পারেন বেশি করে। পানি পান করুন বেশি করে।
যেটা সব সময় মনে রাখতে হবে, কোনো ওষুধেরই ডোজ নিজে নিজে পরিবর্তন করবেন না। চিকিৎসক যদি মনে করেন, রোজা পালনে আপনার জীবন ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে বা অসুখ মারাত্মক আকার ধারণ করার আশঙ্কা থাকে, তবে রোজা না রাখাই ভালো। পরবর্তী সময়ে রোজাগুলো আদায় করতে পারেন বা বদলি রোজাও পালন করতে পারেন।
লেখক : রেজিস্ট্রার, ইন্টারভেনশনাল
নিউরোলজি বিভাগ, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস (নিনস)