শাহীন হাসনাত
প্রকাশ : ২৮ মার্চ ২০২৩ ১২:৫৯ পিএম
আপডেট : ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১৫:৩৭ পিএম
রোজার জন্য সেহরি খাওয়া মুস্তাহাব। সেহরি খাওয়া যে উত্তম, তা প্রকাশ করার জন্য মহানবী (সা.) সেহরিকে বরকতময় খাদ্য বলে অভিহিত করেছেন। সেহরি রোজাদারকে সবল রাখে এবং রোজার কষ্ট তার জন্য হালকা করে। সেহরি বিষয়ে আলোকপাত করেছেন ধর্মীয় গবেষক ও লেখক শাহীন হাসনাত
সেহরি খাওয়ার দ্বারাই নিয়ত হয়ে যায়?
হ্যাঁ, রোজার জন্য সেহরি খেলেও রোজার নিয়ত হয়ে যায়।Ñ ফাতাওয়া হিন্দিয়া : ১/১৯৫
সেহরির মাসয়ালা
সেহরি খাওয়া সুন্নত। পেটভরে খাওয়া জরুরি নয়, এক ঢোক পানি পান করলেও সেহরির সুন্নত আদায় হবে। হজরত আনাস ইবনে মালেক (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, তোমরা সেহরি খাও। কেননা সেহরিতে বরকত রয়েছে।-সহিহ বোখারি : ১৯২৩
অন্য হাদিসে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, সেহরি খাওয়া বরকতপূর্ণ কাজ। সুতরাং তোমরা তা পরিত্যাগ করো না। এক ঢোক পানি দিয়ে হলেও সেহরি করো। যারা সেহরি খায় আল্লাহ তাদের ওপর রহমত বর্ষণ করেন এবং ফেরেশতারা তাদের জন্য রহমতের দোয়া করেন।- মুসনাদে আহমাদ : ৩/১২
হজরত আমর ইবনে আস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আমাদের এবং আহলে কিতাবের (ইহুদি ও নাসারা) রোজার মধ্যে পার্থক্য হলো সেহরি খাওয়া। (আমরা সেহরি খাই আর তারা সেহরি খায় না।)Ñ সহিহ মুসলিম : ১০৯৬
সেহরির খাবারের ধরন
প্রত্যেক ব্যক্তি আপন রুচি অনুসারে সেহরি খাবে। চাই তা ভাত হোক কিংবা রুটি বা অন্য কিছু। পেটভরে খাওয়া জরুরি নয়। অতএব কেউ যদি এক-দুই লোকমা খাবার কিংবা দুই-চারটি খেজুর খেয়ে নেয় অথবা শুধু কিছু পানি পান করে নেয়, তা হলেও সে সেহরির সওয়াব পেয়ে যাবে।- আল বাহরুর রায়েক : ২/২৯৫
সেহরি খাওয়া ছাড়া রোজা কি হবে?
অনেক সাধারণ মুসলমান মনে করেন যে, সেহরি না খেলে রোজা সহিহ হবে না। তাদের এ ধারণা সঠিক নয়। তবে সেহরি না খেলে সেহরির সওয়াব পাওয়া যাবে না। কিন্তু রোজা সহিহ হয়ে যাবে।Ñ ফাতাওয়া আলমগিরি : ১/১৯৪
কখন সেহরি খাবেন?
রাতের শেষভাগে সেহরি খাওয়া উত্তম। অর্থাৎ সতর্কতামূলক সময় হাতে রেখে সুবহে সাদিকের পূর্ব-নিকটবর্তী সময়ে সেহরি খাওয়া উত্তম। তবে এ পরিমাণ বিলম্বিত করবে না যে, সুবহে সাদিক হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয় এবং রোজা সহিহ হওয়ার ব্যাপারে সন্দেহ সৃষ্টি হয়।-হেদায়া : ১/২২৫
সেহরি নিয়ে বাড়াবাড়ি নয়
অর্ধরাতে সেহরি খেয়ে ঘুমিয়ে পড়া, এ রকম বাড়াবাড়িও উচিত নয়। আবার এই পরিমাণ বিলম্ব করে সেহরি খাওয়া যে, সুবহে সাদিক হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়, এ ধরনের ছাড়াছাড়িও ঠিক নয়।Ñ হেদায়া : ১/২২৫
কখন সেহরি খাওয়া মাকরুহ?
সুবহে সাদিক হয়ে যাওয়ার ব্যাপারে সন্দেহ তৈরি হলে সেহরি বা কোনো কিছু পানাহার করা মাকরুহ। তা সত্ত্বেও যদি কিছু খেয়ে নেয় আর ওই সময় বাস্তবেও সুবহে সাদিক হয়ে গিয়ে থাকে, তা হলে ওই রোজা সহিহ হবে না। তার কাজা করে নেবে। আর যদি সুবহে সাদেক হওয়ার ব্যাপারে সন্দেহ রয়েই যায়, নিশ্চিতরূপে কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছতে না পারা যায়, তা হলেও সতর্কস্বরূপ ওই রোজার কাজা করে নেবে।Ñ হেদায়া : ১/২২৫
সেহরির পর কি চা-পান খেতে পারবে?
হ্যাঁ, সেহরি খেয়ে চা-পান ইত্যাদি খেতে পারবে। তবে এই পরিমাণ বিলম্ব করে খাবে না যে, রোজা সহিহ হওয়ার ব্যাপারে সন্দেহ সৃষ্টি হয়। চা-পান ইত্যাদি খাওয়ার পর সুবহে সাদিক হওয়ার আগেই কুলি করে মুখ পরিষ্কার করে নেবে।