× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

সৌদি আরবের ইফতার সংস্কৃতি

মাহির জামিল

প্রকাশ : ২৭ মার্চ ২০২৩ ১৩:৩৪ পিএম

সৌদি আরবের ইফতার সংস্কৃতি

সৌদি আরব ধারণ করে আছে মুসলিমদের সবচেয়ে সম্মানিত দুটি মসজিদকে। ইসলামের শেষ নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর জন্মস্থান মক্কা এবং তাঁর ওফাতের স্থান মদিনা সৌদি আরবেই অবস্থিত। ফলে, সৌদি আরবের প্রভাব গোটা মধ্যপ্রাচ্যেই নয় মুসলিম বিশ্বের প্রতিটি দেশেই বিস্তৃত। সৌদি আরব নিজেকে মুসলিম বিশ্বের ধর্মীয় অভিভাবক ভাবতে পছন্দ করে। ফলে, দেশটিতে রমজানের উদযাপনটা যে বিশেষ জাঁকজমকপূর্ণ হবে, সে কথা সহজেই অনুমেয়।

রমজান শুরু হওয়ার কিছুটা আগে থেকেই সাধারণ সৌদিদের মধ্যে শুরু হয়ে যায় রোজার প্রস্তুতি। রমজানকে স্বাগত জানাতে সৌদিয়ানরা বাড়িঘর সাজিয়ে তোলে বিভিন্ন রঙ ও বাহারি শৈলীর বাতি দিয়ে। প্রাচীন আরবীয় ধাঁচের কুপিবাতি দিয়ে সাজানোর প্রথাটি তারা রপ্ত করেছে পশ্চিমা ও চৈনিক রীতিকে অনুসরণ করে। একই সঙ্গে সাজসজ্জার তালিকায় থাকে ফুল, কাগজ ও নকশাদার বাহারি পর্দা। সেসবে রমজানকে স্বাগত জানিয়ে লেখা হয় বর্ণিল শুভেচ্ছা বার্তা। 

রোজার অন্যতম আকর্ষণ ইফতারি। ইফতারকে ঘিরে আলাদা একটি আবহ তৈরি করে রাখে তারা। সৌদি ইফতারের অনেকগুলো চমকপ্রদ দিক আছে। তার মধ্যে একটি হচ্ছে, ইফতারকে কেন্দ্র করে তাদের জমায়েত বা লোকসমাগমের সংস্কৃতি। সৌদি আরবের মানুষজন একসঙ্গে অনেকে মিলে ইফতার করতে ভালোবাসে।‌ এ জন্য তারা ঘর তো বটেই, বাড়ির সামনেও তাঁবু খাটিয়ে ইফতারের আয়োজন করেন। ফলে যা হয়, শহরে শহরে লাল নীল তাঁবুর চোখ ধাঁধানো সব পসরা জমে থাকে মাসজুড়ে।

সৌদি ইফতারের আরেকটি ব্যতিক্রমী দিক হচ্ছে, অধিকাংশ সৌদি নাগরিকই রোজা ভাঙেন শুধু খেজুর ও পানি দিয়ে। সঙ্গে কখনও-সখনও স্যুপ থাকে। এমন হালকা খাবার খেয়েই তারা মাগরিবের নামাজটি পড়ে ফেলেন। এরপর শুরু হয় তাদের মূল ইফতারপর্ব। যেখানে বিভিন্ন বিচিত্র খাবারে ভরপুর থাকে তাদের টেবিল বা দস্তরখান!

ইফতারে কিছু খাবার সৌদি আরবের সব জায়গাতেই সমানভাবে খাওয়া হয়। অঞ্চলভেদে যুক্ত হয় নতুন নতুন আরও খাবার। সাধারণ খাবারের তালিকায় প্রথমেই আসে ‘সরবা’ নামে এক প্রকার স্যুপ। এর পরই থাকে ‘সামবোসা’– মাংস, সবজি আর চিজ দিয়ে তৈরি হয় এই পিঠা। ভেড়া বা মুরগির মাংস দিয়ে তৈরি খাবসাও বেশ জনপ্রিয়। এ ছাড়াও ‘তামিজ’ নামের এক ধরনের রুটি, ‘সালাতা’ নামের সালাদ, ‘বোরাক’ নামের পিঠা- সবই সমান তালে চলে সৌদি ইফতারে।

সৌদি আরবের মধ্যাঞ্চলের অধিবাসীদের মধ্যে নজদিরাই সংখ্যাগরিষ্ঠ। তাদের নিজস্ব খাবার হিসেবে ইফতারি যুক্ত হয় হানিনিÑ খেজুর, আটা, ঘি আর চিনি দিয়ে তৈরি এক প্রকার জাউ। দুম্বার গোশতের সঙ্গে আটা এবং সবজি মিশিয়ে রান্না করা জারিশ দস্তরখানের শোভা বাড়ায়। পূর্ব সৌদি আরবে ইফতারি মেনুতে থাকে গোশত ও সবজি দিয়ে বানানো সালুনা, বালাতিত নামে এক প্রকার নুডলস আর সাগু নামের মিষ্টান্ন। পশ্চিম সৌদি আরবের আঞ্চলিক ইফতারি খাবার হচ্ছে তামিজ নামক রুটি এবং ফাবা নামক শিম বিচির একপ্রকার তরকারি। পানীয় হিসেবে থাকে সোবিয়া নামক শরবত ।

সৌদি আরবের ইফতারি হালুয়া বা মিষ্টান্নের বিভিন্ন পদ বেশ ভালো জায়গা দখল করে আছে। কোনাফা, ত্রোম্বা, বাছবুন্দারসহ আরও বিভিন্ন ধরনের হালুয়া ইফতারি সৌন্দর্য বাড়ায়। রমজানে তারা ‘ভিমতো’ নামক এক প্রকার বেভারেজ বিশেষভাবেই পান করে থাকে।

সৌদি আরবের মানুষজন রমজান মাসে প্রতিবেশীদের ঘরে ব্যাপক হারে খাবার পাঠায়। সে দেশে থাকা প্রবাসীদের মাঝেও প্রচুর ইফতারি বিতরণ করেন তারা। মাসজিদুল হারাম ও মসজিদে নববীতে হয় সবচেয়ে বড় ইফতারের আয়োজন। প্রতিদিন লাখো রোজাদার ইফতার করেন দুই মসজিদে।

তবে, সৌদি আরবের ইফতার সংস্কৃতিতে প্রতিনিয়ত আসছে নানা পরিবর্তন। সোস্যাল মিডিয়া এসব পরিবর্তনে গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামক হিসেবে কাজ করছে। কিন্তু আশার কথা, যেকোনো নতুনত্বই হাজির হচ্ছে আরবীয় মোড়ক ধারণ করে এবং মৌলিক সংস্কৃতিকে অবলম্বন করে তো বটেই!


শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: protidinerbangladesh.pb@gmail.com

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: pbad2022@gmail.com

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: pbonlinead@gmail.com

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: pbcirculation@gmail.com

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা