যেভাবে যাবেন
রায়হান আহমেদ তামীম
প্রকাশ : ২৩ মার্চ ২০২৩ ১৩:৪৯ পিএম
ছবি : সাদিক খান
ঢাকার অদূরে তুরাগ নদের তীরে অবস্থিত গ্রাম বিরুলিয়া। জমিদার রজনীকান্তের সুদৃশ্য বাড়ি এবং আরও বিখ্যাত কয়েকটি প্রাচীন স্থাপনার জন্য গ্রামটি বিখ্যাত। ইতিহাসের সাক্ষী কিংবা প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন দেখতে অনেকেই দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছুটে গেলেও বিরুলিয়ার ইতিহাস-ঐতিহ্য বহনকারী জমিদার বাড়িটি এক প্রকার লোকচক্ষুর অন্তরালেই রয়ে গেছে। বাইরে থেকে বোঝা না গেলেও গ্রামে ঢুকতেই চোখে পড়ে জমিদার রজনীকান্তের জমিদারবাড়ি।
লালচে ধূসর বাড়িটির বিভিন্ন জায়গায় খসে পড়েছে পলেস্তারা, বের হয়ে এসেছে ইট-সুড়কি। প্রায় শত বছর বয়সী বাড়িটি কালের সাক্ষী হয়ে এখনও দাঁড়িয়ে আছে জীর্ণশীর্ণ অবয়ব নিয়ে। জমিদারবাড়িসংলগ্ন ভবন ছিল ১৪-১৫টি। কালের পরিক্রমায় এখন টিকে আছে সাত-আটটি দৃষ্টিনন্দন ভবন। প্রাচীন বিখ্যাত নানা কাঠামোর স্থাপনায় সমৃদ্ধ বিরুলিয়া গ্রাম এখনও মনোমুগ্ধকর সৌন্দর্য ও আভিজাত্য বহন করে চলছে।
প্রচলিত আছে যে প্রায় একশ বছর আগে জমিদার নলিনী মোহন সাহার কাছ থেকে আট হাজার ৯৬০ টাকা ৪ আনার বিনিময়ে রজনীকান্ত ঘোষ বাড়িটি কিনেছিলেন। পুরান ঢাকা, নারায়ণগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় তার আরও কয়েকটি বাড়ি ছিল, যা ১৯৬৪ সালের দাঙ্গার সময় অন্যের দখলে চলে যায়। এরপর থেকে বিরুলিয়ার এই বাড়িটি ছাড়া জমিদার রজনীকান্তের আর কোনো সম্পত্তি অবশিষ্ট নেই।
মন্দির লাগোয়া তিনতলা জমিদারবাড়িটি বণিকবাড়ি নামেও পরিচিত ছিল। এটিই ছিল জমিদার রজনীকান্তের আবাসঘর। নকশাবহুল এই বাড়িতে আছে ঝুলবারান্দা। ইট বিছানো রাস্তা, সারা বাড়ি গাছে ছাওয়া। বাড়ির দেয়াল ফুল, পাখি, লতাপাতার নকশায় সজ্জিত। প্রমাণ সাইজের মোটা মোটা কাঠের দরজা। একটু পা চালিয়ে ছাদে উঠে গেলে প্রাণ জুড়িয়ে যাওয়া সৌন্দর্য চোখে পড়ে। বাড়ির দেয়ালের গায়ে কোথাও কোথাও শ্রীশ্রী রাধাকৃষ্ণ খোদাই করা। আগে বাড়িতে ঢাল, তলোয়ার ও জমিদারদের ব্যবহারের নানা জিনিস ছিল, যা বহুদিন আগে চুরি হয়ে গেছে। জমিদার বাড়ির আশপাশের আরও কয়েকটি ভবন। সেখানে একসময় বসতি ছিল আদি ঢাকেশ্বরী বস্ত্রালয়ের কর্ণধারের পিতৃপুরুষদের। ভবনগুলোতে বসবাস করতেন তারকচন্দ্র সাহা, গোপিবাবু, নিতাইবাবু, রজনী ঘোষ প্রমুখ ব্যবসায়ী। এখনও কালের সাক্ষী হিসেবে গ্রামের শেষ মাথায় রয়েছে শতবর্ষী একটি বিখ্যাত বটগাছ। রজনীকান্ত ছিলেন বিরুলিয়ার বিখ্যাত জমিদার। প্রতি বৈশাখী ও দুর্গাপূজায় দশমী মেলা বসাতেন নিজ বাড়ির আঙিনায়। তার বংশধররা এখনও বেঁচে আছে।
যেভাবে যাবেন
রাজধানী ঢাকার যেকোনো স্থান থেকে প্রথমে মিরপুর-১ নম্বর সেক্টরে চলে আসুন। সেখান থেকে বাসে চড়ে সরাসরি বিরুলিয়া ব্রিজ যেতে পারবেন। এ ছাড়া মিরপুর-১ থেকে বিরুলিয়া ব্রিজগামী লেগুনা পাওয়া যায়। বিরুলিয়া ব্রিজ থেকে যে কাউকে বললে বিরুলিয়া জমিদারবাড়ি দেখিয়ে দেবে।
কোথায় খাবেন?
বিরুলিয়া জমিদার বাড়ির আশপাশে কোনো খাবারের হোটেল নেই। খাওয়াদাওয়া করার জন্য রিকশায় চলে যেতে হবে বিরুলিয়া বাজারে।