× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

আমৃত্যু কষ্ট মতির লাশটি না পাওয়া

অনুলিখন : মঈনুল ইসলাম সবুজ

প্রকাশ : ২১ মার্চ ২০২৩ ১৩:০৪ পিএম

বীর মুক্তিযোদ্ধা
বেনীলাল দাশগুপ্ত
জন্মস্থান : বানারীপাড়া পৌরসভার
৫নং ওয়ার্ড
জেলা : বরিশাল
জন্ম : ১৯৪১
মুক্তিযুদ্ধে ছিলেন বেস কমান্ডার 
বানারীপাড়া উপজেলা, পিরোজপুরের স্বরূপকাঠি উপজেলার আটঘর কুড়িয়ানা ইউনিয়ন, ছারছিনা দরবার শরিফ, ঝালকাঠি সদর উপজেলার গাভা-রামচন্দ্রপুর ইউনিয়ন ও উজিরপুর উপজেলার গুঠিয়া ইউনিয়নের নেতৃত্ব দিয়েছেন 
সেক্টর : ৯ 
সেক্টর কমান্ডার : মেজর এমএ জলিল
সাব সেক্টর কমান্ডার : মো. শাহজাহান ওমর, বীর উত্তম

বীর মুক্তিযোদ্ধা বেনীলাল দাশগুপ্ত জন্মস্থান : বানারীপাড়া পৌরসভার ৫নং ওয়ার্ড জেলা : বরিশাল জন্ম : ১৯৪১ মুক্তিযুদ্ধে ছিলেন বেস কমান্ডার বানারীপাড়া উপজেলা, পিরোজপুরের স্বরূপকাঠি উপজেলার আটঘর কুড়িয়ানা ইউনিয়ন, ছারছিনা দরবার শরিফ, ঝালকাঠি সদর উপজেলার গাভা-রামচন্দ্রপুর ইউনিয়ন ও উজিরপুর উপজেলার গুঠিয়া ইউনিয়নের নেতৃত্ব দিয়েছেন সেক্টর : ৯ সেক্টর কমান্ডার : মেজর এমএ জলিল সাব সেক্টর কমান্ডার : মো. শাহজাহান ওমর, বীর উত্তম

তখন আমি বামপন্থি রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। ন্যাপ (ভাসানী) বানারীপাড়া উপজেলা শাখার সভাপতির দায়িত্ব পালন করছি। ৭ মার্চের বঙ্গবন্ধুর ভাষণ শোনার পর যুদ্ধে যাওয়ার জন্য অনুপ্রাণিত হই। সেখান থেকে এসে আমরা বানারীপাড়ার প্রগতিশীল রাজনৈতিক কর্মীরা এক হই। চলতে থাকে যুদ্ধের প্রস্তুতি। 

যুদ্ধ শুরুর পর ২ মে মুসলিম লীগের তৎকালীন নেতা আক্কাস খানের সহায়তায় নরেরকাঠি এবং গাভা গ্রামের ৭৬ জন নর-নারীকে পাকিস্তানি বাহিনী ব্রাশফায়ার করে হত্যা করে। পরে তাদের নরেরকাঠি সমাদ্দারবাড়ির খালের মধ্যে ফেলে রাখে। আমি তখন বরিশালের বানারীপাড়া উপজেলার গাভা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। ওই ঘটনার পর রাজ্জাকপুরে মরহুম মোসলেম মল্লিকের বাড়িতে আমরা মুক্তিবাহিনী গঠনের জন্য বসি। কেশবচন্দ্র দাস, হায়দার আলী খা, এনায়েত হোসেন, বিমল কৃষ্ণ দাস, মানিক, মজিবুর রহমান, গোলাম সালেহ (মঞ্জু মোল্লা)সহ বেশ কয়েকজন নিয়ে একটি বাহিনী গড়ে তুলি। নাম দেওয়া হয় আমার নামে ‘বেণু’ বাহিনী। এর কয়েকদিন পর আমাদের সঙ্গে তৎকালীন দৈনিক সংবাদের সাংবাদিক গোলাম সারওয়ার (পরে দৈনিক যুগান্তর ও সমকালের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক) যুক্ত হন। ওই সময়ে স্থানীয় কয়েকজনের কাছ থেকে অস্ত্র সংগ্রহের পাশাপাশি প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নিই। আমরা গাভা বিল্মবাড়ির ডাকাত সরদার আব্দুল মান্নান ওরফে মনা ডাকাতের কাছে যাই। তাকে ভয় দেখিয়ে তার কাছে থাকা একটি রাইফেল ছিনিয়ে নিয়ে আসি। কিন্তু তখন পর্যন্ত আমরা কেউ রাইফেল চালাতে জানি না। 

সংবাদ পাই আর্মির একজন ল্যান্স নায়েক এলাকায় এসেছেন। আমরা তার কাছে যাই। তাকে বাধ্য করি আমাদের রাইফেল চালানো শেখাতে। এরপর আরও কয়েকটি রাইফেল সংগ্রহ করি। তখন স্থানীয় লোকজন আমাদের খাবার ও থাকার ব্যবস্থা করত।

বাহিনীর সদস্যদের নিয়ে গাভা স্কুলে ক্যাম্প গঠন করে তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। ৯নং সেক্টর কমান্ডের অধীনে আমাকে বানারীপাড়া, পিরোজপুরের স্বরূপকাঠি উপজেলার আটঘর কুড়িয়ানা ইউনিয়ন, ছারছিনা দরবার শরিফ, ঝালকাঠি সদর উপজেলার গাভা-রামচন্দ্রপুর ইউনিয়ন ও উজিরপুর উপজেলার গুঠিয়া ইউনিয়নের বেস কমান্ডারের দায়িত্ব দেওয়া হয়। একই সঙ্গে মেজর এমএ জলিল আমাকে কিছু অস্ত্র ও গোলাবারুদ সরবরাহ করেন। তখন আমাদের দলে একমাত্র মহিলা মুক্তিযোদ্ধা শাহানারা পারভীন শোভা যোগ দেন। পর্যায়ক্রমে আমাদের দলে প্রায় ৪শ মুক্তিযোদ্ধা অংশ নেন।

এ অঞ্চলে বেশ কয়েকটি ছোট বড় পাকবাহিনীর সঙ্গে সরাসরি সম্মুখযুদ্ধে অংশ নিই। তার মধ্যে ছিল জম্মুদীপে মিলিটারি গাংবোট আক্রমণ, পার্শ্ববর্তী থানার ছারছিনা পীরের বাড়ির ক্যাম্পে যৌথ আক্রমণে অংশগ্রহণ, পেয়ারা বাগানে একাধিকবার আক্রমণ, বানারীপাড়া থানা দখল। এর মধ্যে পীরের বাড়ি আক্রমণ এবং বানারীপাড়া থানা দখলের বিষয়ে উল্লেখ না করলেই নয়। সম্ভবত ২২ নভেম্বর। আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেন স্বরূপকাঠি কমান্ডার জাহাঙ্গীর বাহাদুর। তিনি ছারছিনার দরবার শরিফে পাকিস্তানি ঘাঁটিতে আক্রমণের বিষয়ে সহযোগিতা চাইলেন। আমি তার আহ্বানে সাড়া দিই। কথা অনুযায়ী রাত ৮টার দিকে বাকপুরের কাজী মতিয়ার রহমানকে ওই অপারেশেনের টিমপ্রধান করে আমি, অনুকূল, হাবিব, দেলোয়ারসহ প্রায় ৩০-৩৫ জন নিয়ে রওনা হই। রাতে স্বরূপকাঠির সংগীতকাঠি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অবস্থান করি।

রাত সাড়ে ১২টার দিকে দরবার শরিফের উত্তর-পূর্ব দিক থেকে আমরা এবং জাহাঙ্গীর বাহাদুরের দল দক্ষিণ দিক থেকে একযোগে আক্রমণ করি। সারারাত যুদ্ধ। চারদিকে অবস্থান নিয়েছি। সময় ভাগ করে বিশ্রামে যাই। দলের সদস্য মতি কাজী পীরের বাড়ির পেছনে একটি কলা বাগানে বিশ্রামের জন্য বসেছিলেন। এ সময়ে নিরস্ত্র মতি কাজীকে পীরের বাড়ি থেকে আলবদর বাহিনী গুলি করে। পরে তাকে ছারছিনা পীরের বাড়ির ভেতর নিয়ে যায়। এ খবর পেয়ে আমরা আবার সকালে আক্রমণ করি। কিন্তু আমাদের গোলাবারুদ শেষ হয়ে গেলে ফিরে আসি।

এরপর থেকে মতি কাজীকে আর পাওয়া যায়নি। মতি কাজীকে ফেরত পেতে তার বাবা মোশারাফ কাজী ছারছিনার পীরের হাত-পা ধরে মাফও চেয়েছিলেন। কিন্তু লাভ হয়নি। পরে মুক্তিযোদ্ধাদের সোর্স থেকে শুনেছি, মতি কাজীকে কেটে টুকরো টুকরো করে সন্ধ্যা নদীতে ভাসিয়ে দেওয়া হয়েছে। এ রকম অনেক যোদ্ধাকে ধরে নিয়ে ছারছিনা দরবার শরিফে হত্যা করা হয়েছে। লাশ টুকরো টুকরো করে সন্ধ্যা নদীতে ভাসিয়ে দেয়। 

বানারীপাড়া থানা দখল নিতে তিনবার আক্রমণ করেন মুক্তিযোদ্ধারা। প্রথমে জুলাই মাসের শেষদিকে থানার অস্ত্রগুলো লুটে নেওয়ার জন্য সিরাজ সিকদার ও আব্দুল মজিদসহ কয়েকজন একত্রিত হয়ে থানা আক্রমণ করেছিলেন। ওই সময়ের পুলিশের সঙ্গে যুদ্ধ করে মাত্র ২৫ মিনিটের মতো টিকে থাকার পর পিছু হটি। অস্ত্রগুলো নিতে পারিনি। ২৬ নভেম্বর সাব সেক্টর কমান্ডার শাহজাহান ওমরের নির্দেশে কাউখালির মুক্তিযোদ্ধা হাবিবুর রহমানের নেতৃত্বে একটি দল থানা অ্যাটাক করে। 

কিন্তু তারাও সফল হতে পারেনি। তারা ফিরে যাওয়ার পথে আমার সঙ্গে দেখা হয়। ২৭ নভেম্বর রাত ১০টায় দুই বাহিনী একত্রিত হয়ে থানা আক্রমণ শুরু করি। সারারাত সম্মুখযুদ্ধ হয়। তারা মোট ২৫/৩০ জন ছিলেন। ভোররাতে মুক্তিযোদ্ধারা থানা দখল করতে সমর্থ হয়। এতে পাকবাহিনীর বেশ কয়েকজন মারা যান। পরের দিন ২৮ নভেম্বর থানা আমাদের দখলে চলে আসে। মূলত সেই দিনই বানারীপাড়া মুক্ত হয়েছিল।


অনুলিখন : মঈনুল ইসলাম সবুজ

বরিশাল প্রতিবেদক

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা