× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

ভোক্তা অধিকার

কতটা রক্ষা হচ্ছে ভোক্তার অধিকার

আহমাদ শামীম

প্রকাশ : ১৩ মার্চ ২০২৩ ১২:৩৭ পিএম

কতটা রক্ষা হচ্ছে ভোক্তার অধিকার

ঢাকার বাসিন্দা রিফাত রহমান (ছদ্মনাম)। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাস নাগাদ চাল ডাল ডটকমের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরে। তার অভিযোগ ছিল, অনলাইন শপটি থেকে তিনি পণ্য ফিরিয়ে দেওয়া বাবদ টাকা রিফান্ড পেতেন। টাকা পাচ্ছিলেন না বলে কোম্পানিটির সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা জানিয়েছিল, বিকাশে টাকা 

পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু টাকা না পেয়ে বিকাশের সঙ্গে কথা বলে তিনি জানতে পারেন কোনো টাকাই পাঠানো হয়নি। অতঃপর রিফাত ভোক্তা অধিকারে অভিযোগ দাখিল করলে, অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় চাল ডাল ডটকমকে জরিমানা করা হয় এবং তিনি ২৫% হিসেবে ৫ হাজার টাকা পান।

২০২২ সালের আরেকটি ঘটনা। সিরাজুম মুনীরা, তখন ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। একদিন সুপারশপ স্বপ্ন থেকে পণ্য কিনে দেখতে পান, ওই পণ্যের গায়ের মূল্য থেকে বেশি টাকা নেওয়া হয়েছে তার কাছ থেকে। এ বিষয়ে জানালে, স্বপ্নের কর্মীরা জানায় এভাবেই তাদের সিস্টেমে আছে। পরে তিনি ভোক্তা অধিকারে অভিযোগ করলে শুনানির মাধ্যমে তার অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় ২৫ শতাংশ হিসেবে ১২৫০ টাকা ফেরত পান।

সিনিয়র সাংবাদিক সালিম সামাদ। সহজ ডটকম থেকে বাসের টিকিট কিনেছিলেন। ব্যক্তিগত সমস্যার কারণে টিকিটের তারিখ পরিবর্তন করতে চাইলে নিয়ম না মেনে তারা তা অস্বীকৃতি জানায়। ফলে তিনি ভোক্তা অধিকারে জানালে প্রতিষ্ঠানটিকে জরিমানা করা হয় এবং তিনি ফেরত পান ২৫শ টাকা। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বুয়েটের এক ছাত্র জানান, ২০২২ সালের মে মাসে পুরান ঢাকার লালবাগে শাওমির কাস্টমার কেয়ার থেকে মোবাইলের ব্যাটারি পাল্টান। এই মর্মে তারা মোটা দাগে টাকাও নিয়েছিল। কিন্তু কিছুদিন যাওয়ার পর তিনি দেখলেন মোবাইলে পুরনো সমস্যা। 

বুয়েটের ছাত্র বলে তিনি সহজেই ধরে ফেললেন, প্রতিষ্ঠানটি ব্যাটারি না বদলেই তার কাছ থেকে টাকা নিয়েছে। উপযুক্ত প্রমাণসহ বিষয়টি ভোক্তা অধিকারে জানালে তাকে ২৫ শতাংশ হিসেবে ৩৭৫০ টাকা পান।

ভোক্তা, অধিকার ও আইন

অর্থনীতির ভাষায়, যিনি নিজের ভোগের জন্য পণ্য ক্রয় করেন তাকে ভোক্তা বলে। ওই পণ্য সম্পর্কিত প্রতিটি বিষয় যেমন- উৎপাদনের সময়কাল, মেয়াদ উত্তীর্ণের সময়, পণ্যের গুণাগুণ, মূল্য, ওজন ইত্যাদি যাবতীয় বিষয় জানার অধিকার রয়েছে ভোক্তার। এর কোনো বিষয় যদি লঙ্ঘিত হয়, তখন লঙ্ঘিত হবে ভোক্তার অধিকার। 

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে প্রায় প্রতিনিয়তই বিভিন্ন সময় বিভিন্নভাবে প্রতারণার শিকার হতে হয় ভোক্তাকে। ভোক্তার সুরক্ষায় ২০০৯ সালে বাংলাদেশ সরকার ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ নামে আইন প্রণয়ন করলেও থেমে নেই এসব প্রতারণা। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে আলাদা অধিদপ্তরের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটি ভোক্তার অধিকার রক্ষায় কাজ করে যাচ্ছে। কিন্তু সাধারণ মানুষের সচেতনতার অভাব এবং ব্যবসায়ীদের একাংশের অতিমুনাফা লাভের মনোভাবের কারণে এই আইনের সুফল কমই পাচ্ছে মানুষ। অপরাধের কারণে আইনে সর্বোচ্চ শাস্তির বিধান রয়েছে তিন বৎসর কারাদণ্ড বা অনধিক দুই লাখ টাকা কিংবা উভয় দণ্ড। এ ছাড়াও অধিদপ্তরের উদ্যোগে পরিচালিত হয়ে থাকে নিয়মিত বাজার অভিযান। এই অভিযানে ব্যবসায়ীদের কোনো গায়িলতি বা সমস্যা থাকলে জরিমানা ও শাস্তি দেওয়া হয়ে থাকে।

উপরে বর্ণিত কেসস্টাডিগুলোয় উল্লিখিত ব্যক্তিরা শিক্ষিত, রাজধানীবাসী; উপরন্তু সচেতন ছিলেন বলেই তাদের সঙ্গে সংঘটিত ঘটনার প্রতিকার পেয়েছেন। কিন্তু দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলসহ শহরবাসী মানুষেরা পণ্য ক্রয়ের মাধ্যমে যে প্রতারণার শিকার হন বিভিন্নভাবে, তার প্রতিকার কী? এই প্রশ্নের কোনো উত্তর নেই যেন। 

এ ছাড়াও আইনে একজন ভোক্তার পক্ষে অধিদপ্তর অভিযুক্ত কোনো প্রতিষ্ঠানকে সর্বোচ্চ শাস্তি ২ লাখ টাকা জরিমানা করতে পারে। এই টাকার ২৫ শতাংশ হিসেবে ৫০ হাজার টাকা পাবেন অভিযোগকারী। কিন্তু যদি কোনো অভিযোগকারী বা ভোক্তার ১০ লাখ ততোধিক টাকার বিষয়ে অভিযোগ করেন, তা হলে এর প্রতিকার কি হবে? যদিও এসব ক্ষেত্রে ফৌজদারি আদালতে মামলা করাই শ্রেয় বলে মনে করেন আইনসংশ্লিষ্টরা। 

অভিযোগ বেশি ই-কমার্স খাতে

ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, বিগত কয়েক বছরে প্রায় ৩০ হাজারের মতো অনিষ্পন্ন অভিযোগের মধ্যে ই-কমার্স বা অনলাইন কেনাকাটা সংক্রান্ত অভিযোগ রয়েছে ১৬ হাজারের বেশি। ই-কমার্স খাতের মধ্যে সবচেয়ে বেশি অভিযোগ ইভ্যালির বিরুদ্ধে। এরপর রয়েছে আলেশা মার্ট, কিউ কম, ই-অরেঞ্জ, ধামাকা ও দালাল প্লাস। এ ছাড়া টেলিকম সেবার বিরুদ্ধেও আছে অভিযোগ। অধিকাংশ অভিযোগের ধরন হলো- সঠিক সময়ে পণ্য সরবরাহ না করা, দাম বেশি নেওয়া, প্রতিশ্রুতি অনুসারে সেবা না দেওয়া, মানহীন পণ্য বা সেবা ইত্যাদি।


ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের কয়েক বছরের কাজ

ভোক্তার অধিকার রক্ষায় অধিদপ্তরের প্রতিটি বিভাগ ও প্রতিটি জেলায় রয়েছে কার্যালয়। এসব কার্যালয় থেকে নিয়মিত পরিচালিত হয় বাজার অভিযান, পাশাপাশি ব্যক্তির অভিযোগেরও নিষ্পত্তি করা হয়। চলতি অর্থবছরসহ বিগত পাঁচ অর্থবছরের কার্যক্রমে সংক্ষেপে জেনে নেওয়া যাক। 

২০১৭-১৮ অর্থবছরে ৯০১৯টি অভিযোগের মধ্যে ৮১২২টি অভিযোগের নিষ্পত্তি হয়েছে। অভিযোগ নিষ্পত্তির মাধ্যমে দণ্ডিত প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ছিল ১৯৩৪টি। আদায়কৃত জরিমানার পরিমাণ ছিল ১,৬১,৯৬,৫০০ টাকা। আইন অনুযায়ী আদায়কৃত জরিমানার ২৫% টাকা পেয়েছেন ১৯১০ জন, যার পরিমাণ ছিল ৩৯,৪০,৫০০ টাকা। এ ছাড়াও এ সময় বাজার অভিযান পরিচালিত হয়েছিল ৪০৭৭টি। বাজার অভিযানের মাধ্যমে ১১,৭১৮ দণ্ডিত প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে আদায়কৃত জরিমানার পরিমাণ ছিল ১২,৫২,৮১,৭০০ টাকা।

২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৭,৫১৫টি অভিযোগের মধ্যে ৭,১৮৫টি অভিযোগের নিষ্পত্তি হয়েছে। অভিযোগ নিষ্পত্তির মাধ্যমে দণ্ডিত প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ছিল ১৪৬৯টি। আদায়কৃত জরিমানার পরিমাণ ছিল ৯৮,০৪,৮০০ টাকা। আইন অনুযায়ী আদায়কৃত জরিমানার ২৫% টাকা পেয়েছেন ১৪৩৬ জন, যার পরিমাণ ছিল ২৪, ৩৮,৮২৫ টাকা। এ সময় বাজার অভিযান পরিচালিত হয়েছিল ৭৩৪৩টি। বাজার অভিযানের মাধ্যমে ১৯,২৩৪টি দণ্ডিত প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে আদায়কৃত জরিমানার পরিমাণ ছিল ১৪,৭৪,৩৩,০৫০ টাকা।

২০১৯-২০ অর্থবছরে ৯১৯৫টি অভিযোগের মধ্যে ৭৩৩০টি অভিযোগের নিষ্পত্তি হয়েছে। অভিযোগ নিষ্পত্তির মাধ্যমে দণ্ডিত প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ছিল ১০৬৯টি। আদায়কৃত জরিমানার পরিমাণ ছিল ৮৬,১৩৪০০ টাকা। আইন অনুযায়ী আদায়কৃত জরিমানার ২৫% টাকা পেয়েছেন ১০৫৫ জন, যার পরিমাণ ছিল ২১,২৬,৭২৫ টাকা। এ ছাড়াও এ সময় বাজার অভিযান পরিচালিত হয়েছিল ১২,৩৫১টি। বাজার অভিযানের মাধ্যমে ২২,২৪৪ দণ্ডিত প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে আদায়কৃত জরিমানার পরিমাণ ছিল ১১,০৫,৩৩,৮০০ টাকা।

২০২০-২১ অর্থবছরে ১৪,৯১০টি অভিযোগের মধ্যে ১৩,৪৮৮টি অভিযোগের নিষ্পত্তি হয়েছে। অভিযোগ নিষ্পত্তির মাধ্যমে দণ্ডিত প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ছিল ৬৮৫টি। আদায়কৃত জরিমানার পরিমাণ ছিল ৪৭,০৪,৬০০ টাকা। আইন অনুযায়ী আদায়কৃত জরিমানার ২৫% টাকা পেয়েছেন ৬৭১ জন, যার পরিমাণ ছিল ১১,৬৮,২৭৫ টাকা। এ ছাড়াও এ সময় বাজার অভিযান পরিচালিত হয়েছিল ১১,৯৫৩টি। বাজার অভিযানের মাধ্যমে ২২,৯৯৬টি দণ্ডিত প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে আদায়কৃত জরিমানার পরিমাণ ছিল ১৩,৩৬,০৩,৭০০ টাকা।

২০২১-২২ অর্থবছরে ১৬,০৫৪টি অভিযোগের মধ্যে ১১,৪৮৭টি অভিযোগের নিষ্পত্তি হয়েছে। অভিযোগ নিষ্পত্তির মাধ্যমে দণ্ডিত প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ছিল ৬২১টি। আদায়কৃত জরিমানার পরিমাণ ছিল ৪৪,৫১,৭০০ টাকা। আইন অনুযায়ী আদায়কৃত জরিমানার ২৫% টাকা পেয়েছেন ৬০৭ জন, যার পরিমাণ ছিল ১০,৯২,০৫০ টাকা। এ সময় বাজার অভিযান পরিচালিত হয়েছিল ১০,৬২৫টি। বাজার অভিযানের মাধ্যমে ২৫,৬১৩টি দণ্ডিত প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে আদায়কৃত জরিমানার পরিমাণ ছিল ১৭,৫৯,১২,৯০০ টাকা।

২০২২-২৩ অর্থবছরের ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত ভোক্তাদের অভিযোগ দায়েরের হিসাব পাওয়া যায়নি। তবে এ সময়ে দণ্ডিত প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ছিল ৭৭২টি। আদায়কৃত জরিমানার পরিমাণ ছিল ৫৬,৮৪,৬০০ টাকা। আদায়কৃত জরিমানার ২৫% টাকা পেয়েছেন ৭৪৫ জন, যার পরিমাণ ছিল ১৩,৫২,৪০০ টাকা। এ সময় বাজার অভিযান পরিচালিত হয়েছে ৮১৭৫টি। বাজার অভিযানের মাধ্যমে ১৭,৭০০টি দণ্ডিত প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে আদায়কৃত জরিমানার পরিমাণ ছিল ১৪,১০,৪০,৪০০ টাকা।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা