উদ্যোক্তা
মুহাম্মদ শফিকুর রহমান
প্রকাশ : ১৩ মার্চ ২০২৩ ১২:১৫ পিএম
উদ্যোক্তা সাদিকা আক্তার সোনালী
অনার্স দ্বিতীয় বর্ষে পড়ছেন সবে, কিন্তু এই বয়সেই নিজ চেষ্টা আর পরিশ্রমে হয়ে উঠেছেন উদ্যোক্তা। পড়াশোনার পাশাপাশি নিজের হাতে তৈরি হ্যান্ড পেইন্ট ও ব্লক প্রিন্টের পোশাক যেমনÑ শাড়ি, পাঞ্জাবি, কুর্তি, ফতুয়া, থ্রি-পিস বিক্রি করছেন। পাশাপাশি জুয়েলারিসহ ঘর সাজানোর পণ্য, কাঠের জুয়েলারি, সুপারি পাতার প্লেট পেইন্টিং, ক্যানভাস পেইন্ট, ক্যানভাসে আরবি ক্যালিওগ্রাফি, হুপ এম্ব্রয়ডারি ইত্যাদি নিয়ে কাজ করে নজর কেড়েছেন সবার।
সফল এই উদ্যোক্তার নাম সাদিকা আক্তার সোনালী। রাজশাহী সরকারি মহিলা কলেজে প্রাণিবিদ্যা বিভাগে অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী তিনি। বাড়ি দিনাজপুরের নবাবগঞ্জ থানায়। সেখানেই তার বেড়ে ওঠা। ফেসবুকে পেজের নাম Decor Queen.
২০২০ সালে লকডাউনে পেজটা শখের বসেই খুলেছিলেন তিনি। তখন টুকটাক কাজ করতেন। কখনও ভাবেননি, মানুষ তার কাজ এত পছন্দ করবে। ২০২১ সালের দিকে তিনি কাজের প্রতি পূর্ণ মনোযোগ দেন।
বাবা ব্যবসা করতেন। তাই ব্যবসায় ঝোঁক ছিল আগে থেকেই। নিজে কিছু করার কথা ভেবেছেন সব সময়। সাদিকা জানান, এসএসসি পাসের পর সোনালী ব্যাংকের ‘হাউস হোল্ড ডাটাবেস’-এ কাজ করেন। বিনিময়ে পেয়েছিলেন ১০,৩০০ টাকা। এটাই তার প্রথম আয়। ওই বয়সে এই আয় তাকে দারুণ উৎসাহ দেয়।
সাদিকা যে পণ্যগুলো নিয়ে কাজ করেন, সেগুলোর কাঁচামাল তিনি নিজে বাজারে গিয়ে সংগ্রগ করেন। কারণ, কাঁচামাল ভালো না হলে পণ্য টেকসই হবে না। দুর্বল পণ্য তিনি ক্রেতাদের দিতে চান না। সব নিয়মকানুন মেনেই তিনি ব্যবসা করেন। নিজে সব পণ্য তৈরি করলেও পেজের পণ্যগুলো ফটোগ্রাফির জন্য সাদিক, মুমু এবং পণ্যের মডেল হিসেবে তার বান্ধবী ঐশী, বর্ণী সহায়তা করেন। তার যা আয় হয়, তাতে তিনি সন্তুষ্ট। আয়ের টাকা কিছু বিনিয়োগ করেন, কিছু অসহায় দুস্থদের মধ্যে দান করেন।
সাদিকার রিপিট ক্রেতা অনেক। একবার যিনি পণ্য নেন, তিনি আবার নেন। এভাবে তিনি একটি ক্রেতাগোষ্ঠী গড়ে তুলেছেন। সব বয়সি মানুষই তার ক্রেতা। শৌখিন মানুষেরা বেশি পণ্য ক্রয় করে বলে জানান সাদিকা। কেউ কেউ অন্যকে উপহার দেওয়ার জন্যও তার থেকে পণ্য ক্রয় করেন। নারী উদ্যোক্তাদের জন্য সবচেয়ে প্রয়োজন পরিবারের সদস্যদের সমর্থনÑ এমনটাই বলেন সাদিকা। তিনি পরিবার থেকে সব ধরনের সমর্থন পেয়ে আসছেন। তার ভাষায়, ‘পরিবার হচ্ছে শান্তির জায়গা। আমি সেই শান্তিটা পাই। পুরো পরিবার আমাকে আমার সব কাজে সহযোগিতা করে।’
সাদিকার মিলেছে অনেক স্বীকৃতি। ২০২২ সালে ওয়েব ফাউন্ডেশন আয়োজিত ‘বিজয়িনী সম্মাননা’ পেয়েছেন। চলতি বছর বাংলাদের নারী ও যুব উদ্যোক্তা ফোরাম থেকে সফল নারী উদ্যোক্তা হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছেন।
নতুন উদ্যোক্তাদের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘কী দিয়ে শুরু করবেন এমন ভাবতে ভাবতে সময় নষ্ট করেন। নিজের ওপর বিশ্বাস রাখা চাই। ভুল হবে, হোক। ভুল করতে করতে তো মানুষ সঠিকটা শিখতে পারে। নিজেরা বুদ্ধি খাটিয়ে কাজ করলেই এগোনো সম্ভব। চারপাশ থেকে নেগেটিভ কথা আসলেও তা পাত্তা দিতে নেই।’