শাদমান শাবাব
প্রকাশ : ১২ মার্চ ২০২৩ ১২:২০ পিএম
টিম ‘সাস্ট অলীক’
টিম মহাকাশ
নাসার ‘স্পেস অ্যাপস চ্যালেঞ্জ প্রতিযোগিতা’য় চ্যাম্পিয়ন দুই দল ‘সাস্ট অলীক’ ও ‘মহাকাশ’। অনেক চড়াই-উতরাই পেরিয়ে আজ রাতের ফ্লাইটে যুক্তরাষ্ট্রে যাচ্ছেন বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা। তাদের এই নাসাযাত্রার শুরু থেকে শেষ জানিয়েছেন শাদমান শাবাব
সাস্ট অলীক
নাসা স্পেস অ্যাপস চ্যালেঞ্জ–২০১৮ প্রতিযোগিতায় ‘বেস্ট ইউজ অব ডেটা’ ক্যাটাগরিতে বাংলাদেশ থেকে প্রথমবারের মতো চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করে ‘সাস্ট অলীক’। ‘লুনার ভিআর’ নামক প্রকল্পের কারণে তারা চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। এই দলের সদস্যরা হলেন- শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশবিদ্যা বিভাগের শিক্ষার্থী আবু সাবিক মাহদি, কাজী মইনুল ইসলাম, সাব্বির হাসান, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী এসএম রাফি আদনান এবং অলীক দলের মেন্টর কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (সিএসই) বিভাগের সহকারী অধ্যাপক বিশ্বপ্রিয় চক্রবর্তী।
শুরুর গল্প
‘সাস্ট অলীক’ দলের দলনেতা আবু সাবিক মাহদি বলেন, ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হই ভূগোল ও পরিবেশবিদ্যা বিভাগে। ভর্তির পরে আমি আর মঈনুল সেকেন্ড মেজর হিসেবে পছন্দের সাবজেক্ট ‘সিএসই’ নিয়েছিলাম। সিএসইর ফাইনাল ইয়ারের প্রজেক্টে আমরা ভার্চুয়াল রিয়েলিটি বা ভিআর প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করি।
এই ভিআর প্রজেক্টে আমরা ‘সাস্ট ভার্চুয়াল ট্যুর’ নামের একটি অ্যাপস তৈরি করি, যার মাধ্যমে পৃথিবীর যে কোনো প্রান্ত থেকে পুরো শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস ভার্চুয়ালি দেখা যাবে। এই প্রজেক্টই আমাদের নাসার মূল প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে প্রেরণা দিয়েছে। এই প্রজেক্টে আমাদের তত্ত্বাবধায়ক ছিলেন সিএসই বিভাগের সহকারী অধ্যাপক বিশ্বপ্রিয় চক্রবর্তী। পরবর্তী সময়ে আমাদের সঙ্গে যুক্ত হন পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী এসএম রাফি আদনান এবং ভূগোল ও পরিবেশবিদ্যা বিভাগের ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী সাব্বির হাসান।
প্রজেক্ট ‘লুনার ভিআর’
‘সাস্ট অলীক’ দলের সদস্য এসএম রাফি আদনান জানান তাদের ‘লুনার ভিআর’ প্রকল্প সম্পর্কে। তিনি বলেন, “২০১৮ সালে টুইটারের মাধ্যমে নাসার প্রতিযোগিতার কথা জানতে পারি। তখন থেকেই নাসা স্পেস অ্যাপস চ্যালেঞ্জ ওয়েবসাইটে নিয়মিত চোখ বোলানো হতো। প্রতিযোগিতার এক মাস আগে প্রতিযোগিতার বিষয়বস্তু সম্পর্কে জানিয়েছিল নাসা। পরে আমরা নাসার স্পেস অ্যাপস চ্যালেঞ্জ ওয়েবসাইট থেকে প্রতিযোগিতায় ভিআর সম্পর্কিত কোনো সমস্যা আছে কি না, সে বিষয়টি খোঁজা শুরু করি। অতঃপর ২০১৮ সালের ৮ অক্টোবর ভিআর সম্পর্কিত সমস্যা সমাধানের বিষয়টি জানতে পারি। প্রতিযোগিতার শর্ত ছিলÑ নাসার তথ্য-উপাত্ত ব্যবহার করে ভিআর সমস্যার সমাধান করতে হবে। এরপর ‘সাস্ট ভার্চুয়াল ট্যুরের’ ধারণা ও অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে আমরা প্রজেক্ট ‘লুনার ভিআর’–এর কাজ শুরু করি।”
‘লুনার ভিআর’ একটি ভার্চুয়াল রিয়েলিটি অ্যাপ। এই অ্যাপ ব্যবহার করে একজন মানুষ চাঁদে না গিয়েও চাঁদ ভ্রমণের অভিজ্ঞতা পাবেন। অ্যাপটির মাধ্যমে নাসার অ্যাপোলো-১১ অভিযান, মহাকাশ যানটির অবতরণ এলাকা, চাঁদ থেকে সূর্যগ্রহণ দেখা ও চাঁদকে একটি স্যাটেলাইটের মাধ্যমে ভার্চুয়ালি আবর্তন করা যায়।
অবশেষে...
‘নাসা স্পেস অ্যাপস চ্যালেঞ্জ প্রতিযোগিতা-২০১৮’তে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পরে ২০১৯ সালের ২১ জুন নাসা থেকে সাস্ট অলীকের প্রত্যেক সদস্যকে ২১-২৩ জুলাই নাসার অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। আমন্ত্রণপত্র পাওয়ার পরে দূতাবাসে ভিসার আবেদন করলে দূতাবাস ভিসা প্রত্যাখ্যান করায় তারা সেবার নাসার আমন্ত্রণে অংশ নিতে পারেননি। গত বছরের ২ ডিসেম্বর আবারও নাসা থেকে আমন্ত্রণ জানানো হয় ‘সাস্ট অলীক’ দলের সদস্যদের। এতে অংশগ্রহণের জন্য আবেদন করে আমেরিকার ভিসা পেলেও আর্থিক সংকটের কারণে এবারও অনিশ্চিত হয়ে পড়েছিল তাদের নাসায় যাত্রা। অবশেষে ঋণ করে সেই অনিশ্চয়তার মেঘ দূরদিগন্তে তাড়িয়ে স্বপ্নের পথে হাঁটলেন তারা। এর সঙ্গে শোনালেন আশার বাণী। অলীকের একাধিক সদস্য জানান, ‘যুক্তরাষ্ট্রের বাঙালি কমিউনিটির পক্ষ থেকে তাদের সহযোগিতা করার চেষ্টা চলছে। আশা করছি ঋণের টাকা জোগাড় হয়ে যাবে।’
‘সাস্ট অলীক’–এর দলনেতা আবু সাবিক মাহদি জানান, ‘আর্থ অ্যান্ড সায়েন্স’ কর্তৃক আয়োজিত এই অনুষ্ঠান ১৫ এবং ১৬ মার্চ ওয়াশিংটন ডিসিতে নাসার সদর দপ্তরে অনুষ্ঠিত হবে। এতে আমন্ত্রিতরা নাসার গবেষক এবং অন্য বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের সামনে নিজেদের প্রজেক্টের কাজ উপস্থাপন করতে পারবে।
আরও পড়ুন চ্যাম্পিয়ন টিম সেলেস্টিয়ালস
টিম মহাকাশ
নাসা স্পেস অ্যাপস চ্যালেঞ্জ–২০২১ প্রতিযোগিতায় ‘বেস্ট মিশন কনসেপ্ট’ ক্যাটাগরিতে বাংলাদেশ থেকে বিজয়ী হয় ‘টিম মহাকাশ’। ‘অ্যাডভান্সড রিগোলিথ স্যাম্পলার সিস্টেম-এআরএসএস’ নামক টুলস উদ্ভাবনের কারণে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল তারা। এই দলের সদস্যরা হলেনÑ খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) শিক্ষার্থী সুমিত চন্দ, আলভি রওনক, সামির ইমতিয়াজ, শিশির কাইরি এবং বাংলাদেশ আর্মি ইউনিভার্সিটি অব ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজির তৃষা বসাক ও মমিনুল হক।
যে প্রকল্পে হলো বিশ্বসেরা
‘টিম মহাকাশ’ উদ্ভাবিত টুলসের নাম ‘অ্যাডভান্সড রিগোলিথ স্যাম্পলার সিস্টেম’। এর মাধ্যমে মহাকাশচারীরা ভিনগ্রহের পৃষ্ঠে অভিযানের সময় মুক্তভাবে উড়তে থাকা ধূলিকণা নিয়ন্ত্রণের কাজ করতে পারবেন। মূলত চাঁদের পৃষ্ঠে এক ধরনের ধূলিকণা থাকে। চাঁদে কম মাধ্যাকর্ষণ কাজ করায় এই ধূলিকণাগুলো সহজেই উৎক্ষিপ্ত হয়ে বাতাসে ভাসতে থাকে। ফলে নমুনা সংগ্রহ করতে কষ্ট হতো মহাকাশচারীদের। আবার কখনও কখনও এই ধুলো মহাকাশচারীদের স্পেসস্যুটের গায়ে লেগে থেকে স্যুট ড্যামেজ করার মতো পরিস্থিতি তৈরি করত। ‘টিম মহাকাশ’ এই সমস্যার একটি কার্যকর সমাধান হিসেবে ‘অ্যাডভান্সড রিগোলিথ স্যাম্পলার সিস্টেম’ টুলসেট উদ্ভাবন করে, যেটি এই ধূলিকণাগুলোকে আবদ্ধ চেম্বারে আটকে ফেলে এবং ধূলিকণাগুলোকে ভেসে থাকার মতো পরিস্থিতি তৈরি করতে দেয় না।
নাসার আমন্ত্রণে
ওয়াশিংটন ডিসিতে নাসার সদর দপ্তরে ‘নাসা আর্থ অ্যান্ড সায়েন্স’ কর্তৃক আয়োজিত ১৫ এবং ১৬ মার্চে অনুষ্ঠানে ‘সাস্ট অলীকের’ সাথে আমন্ত্রণ জানানো হয় বাংলাদেশের আরেক চ্যাম্পিয়ন দল ‘টিম মহাকাশ’–এর সদস্যদের। ‘সাস্ট অলীকের’ মতো আর্থিক সংকটে তাদেরও নাসায় যাওয়া অনিশ্চিত হয়ে পড়েছিল। অতঃপর নাসার আমন্ত্রণে অংশ নিতে যাচ্ছেন তারাও।