রাতুল মুন্সী
প্রকাশ : ১১ মার্চ ২০২৩ ১২:২৯ পিএম
আটক বক অবমুক্ত করা হচ্ছে
বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস মানেই নানানরকম পাখির কিচিরমিচির, ফুলফলের সঙ্গে পাখির সম্পর্ক। ফুলের সময় দেখা মিলছে মধু খেতে আসা হরেকরকম পাখির ঝগড়াঝাঁটি। ক্যাম্পাসের পুকুরে দেখা যায় শিকারের আশায় বকের এক পায়ে দাঁড়িয়ে থাকার মনোরম দৃশ্য।
আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সবুজ ক্যাম্পাসে হরেকরকমের পাখি বাস করত। এখন আর এসব দেখা যায় না। কারণ তাদের থাকার জায়গা নেই, খাবারের অভাবও প্রকট। আবাসনের চাহিদা মেটাতে কাটা হচ্ছে হরেকরকম ফলের গাছ, ফুলের গাছ। ভরাট করে ফেলা হচ্ছে জলাশয়।
২০০৮ সালের কথা। আমরা কয়েকজন শিক্ষক মিলে বের হতাম পাখি দেখতে। তখন ক্যাম্পাস এখনকার মতো ছিল না। সকালবিকাল অনেক পাখির দেখা মিলত ক্যাম্পাসের বিভিন্ন গাছে, জলাশয়ে। যত দিন যাচ্ছিল তত কমছিল এসব সময়-অসময়ে সঙ্গ দেওয়া পাখির পরিমাণ। ক্যাম্পাস ও ক্যাম্পাসের বাইরে যেটা দেখলাম। চারদিকে অবাধে কাটা হচ্ছে গাছ। পাখি যে বাসা বাঁধবে সেই জায়গাটুকু নেই। বাসা না বাঁধলে পাখির প্রজনন হবে কী করে? খাবারকেন্দ্রিক যেসব গাছ ছিল সেগুলোও কেটে ফেলা হচ্ছে। আবাদি জমিতে দেওয়া হচ্ছে কীটনাশক। কীটনাশকযুক্ত খাবার খেয়ে প্রতি বছর মারা যাচ্ছে শত শত পাখি। এ বিষয়গুলো গভীরভাবে ভাবিয়ে তুলল শিক্ষকদের। তাহলে তো পাখিদের নিরাপদ নিবাস এবং এদের রক্ষা করতে কিছু করা দরকার। আর সেই চিন্তা থেকেই ২০০৮ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষক ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে গড়ে তুললাম ‘বার্ড কনজারভেশন ক্লাব’। কথাগুলো বলছিলেন সংগঠনের আহ্বায়ক প্রফেসর ড. আমিনুজ্জামান রেজা।
প্রথম প্রথম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরেই পাখিদের আবাসস্থল রক্ষা, তাদের সংরক্ষণ করে যথাযথ জায়গায় মুক্ত করে দেওয়াসহ সচেতনতায় কাজ করত সংগঠনটি।
২০১০ সাল থেকে বিভিন্ন প্রকার পাখির ছবি দিয়ে শুরু করে আলোকচিত্র প্রদর্শনী। এর পর থেকে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা অপেক্ষা করতেন কবে হবে পাখির আলোকচিত্র প্রদর্শনী, পাখির নিরাপদ নিবাস ও পরিচিতি নিয়ে।
ব্যক্তি ও সংগঠনের সবার উদ্যোগে রয়েছে গবেষণা। বর্তমানে বার্ড কনজারভেশন ক্লাবের আহ্বায়ক প্রফেসর ড. আমিনুজ্জামান রেজার রয়েছে ২০টির ওপর গবেষণা। প্রকাশ করেছেনে দুটি বই। বর্তমানে পাখিদের নিরাপদ নিবাস ও সংরক্ষণ নিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা শিক্ষিত মানুষই বুঝতে চাইছি না। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষাই পাখির গুরুত্বের কথা। অবাধে চলছে শিকার, আবাদি জমিতে দেওয়া হচ্ছে কীটনাশক। ক্যাম্পাসে আবাসন সংকট নিরসনের জন্য গাছ, জলাশয় ভরাট করে তোলা হচ্ছে ভবন। তাহলে পাখিরা থাকবে কোথায়? আমরা যখন কোনো ভবন গড়ি, তখন যদি পাখিসহ বন্য জীবজন্তুর আবাসস্থল মাথায় রেখে ডিজাইন করি তাহলেই পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করা যাবে। জীববৈচিত্র্য, প্রাণ বাঁচবে।
পাখি রক্ষায় ও তাদের নিরাপদ আবাস্থল রক্ষায় বার্ড কনজারভেশন ক্লাব নিরসল কাজ করে যাচ্ছে প্রতিষ্ঠার পর থেকে। সংগঠনের কাজ এখন শুধুই ক্যাম্পাসের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। এর সদস্যরা রাজশাহীসহ আশপাশের জেলায় সচেতনতা বৃদ্ধিতে কাজ করছে নিরলস। পাখি শিকার চলছে কোথাও, শুনলেই সেখানে চলে যায় সংগঠনের সদস্যরা । উদ্ধার করে উপযোগী পরিবেশে ছেড়ে দেয়া হয় পাখিদের। সাধারণ মানুষের সচেতনতা বৃদ্ধিতে প্রতি বছর আলোকচিত্রের পাশাপাশি এ বছরের ২৫ ফেব্রুয়ারি সংগঠনের পক্ষ থেকে শুরু হয়েছে পাখিমেলা। কাজের সম্মাননাস্বরূপ সংগঠনটি পেয়েছে বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের বন্যপ্রাণী গবেষণায় বঙ্গবন্ধু সম্মাননা ২০২১।