রাতুল মুন্সী
প্রকাশ : ১১ মার্চ ২০২৩ ১২:১২ পিএম
চলছে সাপ উদ্ধার কার্যক্রম
সাপের গল্প শুনে, সাপ দেখে ভয় পায় না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া খুব কঠিন। শৈশব থেকেই সাপকে ভয়ংকর জন্তু হিসেবে জানি। আমাদের দেশে প্রায় ৯০ প্রজাতির সাপ আছে। আমাদের চারপাশে বনজঙ্গল কেটে সাবাড় করার ফলে সাপ হারাচ্ছে তার আবাসস্থল। সচেতনতার অভাব এবং নিরাপত্তার খাতিরে পিটিয়ে মারা হচ্ছে পরিবেশ-প্রকৃতির ভারসাম্য ঠিক রাখা এসব সাপকে।
বন অধিদপ্তরের দেওয়া তথ্যমতে, অজ্ঞতা ও কুসংস্কারের বশে মানুষ উপকারী অনেক সাপ মেরে ফেলছে। সাপের প্রধান খাদ্য ইঁদুর। ইঁদুর খেয়ে সাপ কৃষকের বন্ধু হিসেবে কাজ করে। অন্যদিকে ৯০ প্রজাতির মধ্যে ২৬ প্রজাতির সাপ বিষধর। এর মধ্যে আছে ১০ প্রজাতির সামুদ্রিক সাপ, যা মানুষের আশপাশে থাকে না।
মারতে যাওয়া এসব সাপ উদ্ধার, সংরক্ষণ ও উপযোগী পরিবেশে ছেড়ে দেওয়াসহ সাপ কোনো ভয়ংকার জন্তু না, অধিকাংশ সাপ আমাদের বন্ধু হিসেবে কাজ করে, সেই বিষয়গুলো নিয়ে সচেতনতায় কাজ করছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল শিক্ষার্থী। সাপ রক্ষায় এবং উদ্ধারে তারা গড়ে তুলেছে একটি সংগঠন। নাম ‘ডিপ ইকোলজি অ্যান্ড স্নেক রেসকিউ ফাউন্ডেশন’।
২০১৮ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের উদ্যোগে সংগঠনটি যাত্রা শুরু করে। বর্তমানে সারা দেশে সংগঠনের সাড়ে ৬০০ স্বেচ্ছাসেবী কাজ করছেন। আর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক প্রাইভেট গ্রুপে সাপ নিয়ে সচেতন এবং সাপকে তার পরিবেশ উপযোগী জায়গা দিতে হবে- এর পক্ষের মানুষের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে প্রায় লাখের উপরে। ফাউন্ডেশনের ডিরেক্টর তাসবীন সাকীব জানান, সাপ এবং মানুষের মধ্যকার সহবস্থান নিশ্চিত করা আমাদের মূল লক্ষ্য। শুধুমাত্র সাপের কামড়ে মানুষের অপ্রত্যাশিত মৃত্যুরোধ করলেই মানুষ ও সাপের মধ্যে সহাবস্থান নিশ্চিত করা সম্ভব। সাধারণ মানুষকে সচেতন করা এর সবচেয়ে প্রায়োগিক দিক এবং এটি আমাদের প্রধান উদ্দেশ্যগুলির মধ্যে একটি। সংগঠনের সভাপতি মাহফুজুর রহমান বলেন, ‘শুধু যে সাপ উদ্ধার করি আমরা বিষয়টা এমন নয়। বিপদে পড়া অনেক বন্যপ্রাণীও উদ্ধার করে থাকি আমরা। উদ্ধার কাজে সরাসরি অংশ নিয়ে থাকেন ১০ জন, এর মধ্যে রয়েছেন দুজন নারী। সাপ যেহুতু বিষধর, তাই উদ্ধারকারীদের দেওয়া হয় প্রশিক্ষণ। প্রতিষ্ঠার পর থেকে এখন পর্যন্ত উদ্ধার করা হয়েছে এক হাজার ৫০০ সাপসহ ৪০০ অন্য বন্যপ্রাণী। যেহেতু স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সব খরচ নিজেদেরই বহন করতে হয় সব সময়।’
বর্তমানে আমেরিকার একটি এনজিও HBB (Humanity Beyond BarrIers) অর্থায়নে একটি প্রজেক্টের কাজ চলছে। RJSC কর্তৃক নিবন্ধিত বাংলাদেশের প্রথম বিশেষায়িত সংগঠন হিসেবে কাজ করছে ডিপ ইকোলজি অ্যান্ড স্নেক রেসকিউ ফাউন্ডেশন।