× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

বন্যপ্রাণী সুরক্ষা

পিটাছড়ায় মাহফুজের একার লড়াই

রাতুল মুন্সী

প্রকাশ : ১১ মার্চ ২০২৩ ১১:৩৯ এএম

পিটাছড়া বনে মাহফুজ রাসেল

পিটাছড়া বনে মাহফুজ রাসেল

কয়েক যুগ আগেও আমাদের বন, পাহাড় বন্য জীবজন্তু ও পাখির কলকাকলিতে মুখর ছিল। একটা সময় আমরা বনে-পাহাড়ে ঘুরতে গিয়ে নানা, দাদু, মা-বাবার কাছে নানা রকম বন্যপ্রাণী, পাখির গল্প শুনতাম। গল্প শুনে অনেক সময় ভয়ে জড়সড়ো হয়ে মায়ের আঁচলেরর মধ্যে লুকাতাম। এই বুঝি বাঘ-সিংহ এলো হুঙ্কার দিয়ে। এখন বনকেন্দ্রিক পশু-পাখি কিংবা বন্য জীবজন্তুর এসব গল্প রূপকথার দৈত্য দানবের গল্পে পরিণত হয়েছে।

আমাদের বন-পাহাড়গুলো অবাদে কেটে ফেলার ফলে বন, পাহাড় মরুভূমিতে রূপান্তরিত হচ্ছে। দেওয়া হচ্ছে আগুন। প্রথমতো গাছ কেটে বন জঙ্গল পরিষ্কার করে সব ‍জীবজন্তুকে বাস্তুচ্যুত করা হচ্ছে আবার আগুন দিয়ে শেষমেশ সকল জীবজন্তুকে পুড়িয়ে মারা হচ্ছে। বিশেষ করে পার্বত্য চট্টগ্রামের তিন জেলায় প্রতিদিন ঘটছে এসব ঘটনা। 

এই বিষয়গুলো নিয়ে দায়িত্বে থাকা কারও কোনো মাথা ব্যথা নেই। অথচ পৃথিবীটা শুধু মানুষের বসবাসের জন্য নয়। মানুষকে বেঁচে থাকতে হলে এসব পশু-পাখির ওপর, প্রকৃতির ওপর নির্ভর করেই বেঁচে থাকতে হবে। বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ করা দরকার। সেই চিন্তা থেকে আমরা অনেক সরে এসেছি। যেমন : চীনে চড়ুই পাখি নিধন করার ফলে যে খাদ্যসংকট তৈরি হয়েছিল, সেই ঘটনা থেকেও আমরা শিক্ষা গ্রহণ করতে পারি।

ইংল্যান্ডের মোটা বেতনে চাকরি, নিজের বাড়ি, আয়েশি জীবন। মন বসছিল না মাহফুজ রাসেলের। প্রকৃতি সব সময় টানত। যারা শতভাগ প্রকৃতি নির্ভরশীল তারা কতটুকু সুখে আছে। জানার প্রবল ইচ্ছা হলো। ২০১২ সালে চলে গেলেন পৃথিবীর ফুসফুসখ্যাত ব্রাজিলের অ্যামাজন বনে।

লজ্জাবতী বানর

লম্বা সময় সেখানে কাটানোর পর পরিবেশ-প্রকৃতির ওপর মায়া তৈরি হয়ে গেল। বাবার মৃত্যুর পর স্থায়ীভাবে দেশে ফেরার সিদ্ধান্ত নিলেন। চিন্তা করলেন দেশে ফিরে থাকবেন কই? ঢাকা শহর তার ভালো লাগে না। মাঝখানে কয়েক মাসের জন্য দেশে এলেন। বিভিন্ন জায়গায় জমি দেখলেন। আর তখনই সন্ধান পেলেন খাগড়াছড়ির মাটিরাঙা পাহাড়ের। বন্ধুদের সহযোগিতায় কিনেও ফেললেন। ২০১৬ সালে ম্যানচেস্টারের বাড়ি বিক্রি করে ফিরে এলেন ঢাকায়। ঢাকায় ফিরে ছয় দিনের মাথায় চলে এলেন মাটিরাঙায়। এখানে পূর্ব খেদাছড়া গ্রামে একটি বাড়ি ভাড়া নিয়ে শুরু করলেন নিজের থাকার ঘর তৈরির কাজ। ঘর তৈরির সময় তিনি যেটা লক্ষ করলেন চারদিকে বন কাটার মহোৎসব। বনে থাকা বন্যপ্রাণীরা হচ্ছে বাস্তুচ্যুত। সন্ধ্যা হলেই পাহাড়ে দেওয়া হচ্ছে আগুন। শিকারিদের উপদ্রব। অসহায় হয়ে ছুটে বেড়াচ্ছে বন্যপ্রাণীসহ সব জীবজন্তু। আশ্রয় নেওয়ার কোনো গাছ নেই। কোথাও খাবার নেই। এসব বাস্তুচ্যুত বন্যপ্রাণীদের বাঁচাতে হলে বনকে আগে রক্ষা করতে হবে। মানুষকে সচেতন করতে গিয়ে পড়লেন রোষানলে। তখন শিকারিদের বুঝিয়ে শিকার করা থেকে বিরত রাখা খুব কঠিন কাজ ছিল।

তিনি বুঝতে পারলেন শিকার এবং বন কাটা এখানের স্থানীয়দের দীর্ঘদিনের জীবন-জীবিকা। তাদের বিকল্প আয়ের ব্যবস্থা না করলে বন্যপ্রাণী শিকার এবং বন কাটা থেকে বিরত রাখা যাবে না। আর বন্যপ্রাণী ও বন বাঁচানোর ব্রত নিয়ে কয়েকজন বন্ধুকে নিয়ে গড়ে তুললেন ‘পিটাছড়া বন ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ উদ্যোগ’।আর শুরু হলো সংগ্রাম।

বনের ওপর নির্ভরশীল স্থানীয় মানুষদের স্বাবলম্বী করতে তাদের শেখালেন হস্তশিল্প, কুটির শিল্পের কাজ। তাদের সন্তানদের শিক্ষিত করে তোলার জন্য গড়ে তুললেন পাঠাগার, স্বাস্থ্যসেবার জন্য গড়ে তুললেন চিকিৎসাকেন্দ্র। মাহফুজ রাসেল দেখলেন কিছু মানুষ সচেতন হলেই এখানে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণসহ বন রক্ষা সহজ হয়।

বিলুপ্তপ্রায় হলুদ কাছিম

২০১৬ সালে গড়ে তোলা পিটাছড়া বন বর্তমানে প্রায় ১০০ থেকে ১৫০ প্রজাতির পশুপাখির অভ্যয়াশ্রম। দেখা মিলছে বিরল প্রজাতির অনেক পশুপাখির। সচরাচর যেসব পাখি দেখা যায়, তার মধ্যে লাল কপাল ছাতারে, ডোরা টিট ছাতারে, বসন্ত বাউরী, চুনীমুখী, মৌটুসি, ডোরা পাকড়া ছোট, বাবুনাই/শ্বেতাক্ষী, মেটে হাঁড়িচাঁচা, সবুজ চান্দি ফটক, নীলরাজ, লাল মাথা কুচকুচি জলপাই বুলবুল ও লালপিঠ ফুলঝুরি ল্যানজা রাতচরা। আছে হরেক রকমের ব্যাঙ। দেখা মিলছে বিলুপ্ত হওয়া হলুদ কাছিমের।

এ ছাড়াও চোখে পড়ে লজ্জাবতী বানর, কাঁকড়া ভুক বেজি, বনমোরগসহ কয়েক প্রকারের সাপ। দেখা মিলেছে বিলুপ্ত হওয়া রামকুত্তার। এই বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ নিয়ে মাহফুজ রাসেল বলেন, ‘আগে আমাদের বনটাকে বাঁচাতে হবে। বন না বাঁচাতে পারলে আমরা বন্যপ্রাণী দিয়ে কী করব? বন না থাকলে তো বন্যপ্রাণীরা এমনি এমনি মারা যাবে।’


শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা