× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

বিজ্ঞানী কিছুমিছু কান্ডিক

নাসরীন মুস্তাফা

প্রকাশ : ১০ মার্চ ২০২৩ ০৯:৫৭ এএম

আপডেট : ১০ মার্চ ২০২৩ ১৩:৩০ পিএম

অলঙ্করণ: নিঝুম নিসর্গ, চতুর্থ শ্রেণি, সরকারি করোনেশন মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়, খুলনা।

অলঙ্করণ: নিঝুম নিসর্গ, চতুর্থ শ্রেণি, সরকারি করোনেশন মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়, খুলনা।

রান্নাঘরের চুলা নষ্ট হয়ে গেছে সকালে। হোটেল থেকে পরোটা আর আলু ভাজি কিনে আনার জন্য ডাকা হলো সাত্তার চাচাকে। বাবা হুকুমের মতো করে বললেন, মিস্ত্রি খুঁজে আন।

লিশ্চয় স্যার, লিশ্চয়। মাশাল্লা আছে একজন। কিছুমিছু।

বাবা পত্রিকা পড়া রেখে সাত্তার চাচার দিকে তাকালেন। সাত্তার চাচা মাথা চুলকান। বলেন, ওর নামটা বললাম স্যার।

বাবা গরগর করে বললেন, মিস্ত্রির নাম দিয়ে কী হবে? কাজ জানলেই তো হলো, নাকি?

ও বিজ্ঞানী। বিরাট বিজ্ঞানী। আসল নাম মনে নাইক্কা। আমরা নাম দিছি কিছুমিছু। বিজ্ঞান নিয়া ইয়া-টিয়া করে তো, তাই আমরারা কই বিজ্ঞানী। বিজ্ঞানী কিছুমিছু কান্ডিক।

বাবা রাগের চোটে কেঁপে উঠলেন। ধমক দিয়ে বললেন, বিজ্ঞান নিয়ে ইয়া-টিয়া... ফাজলামি নাকি? বিজ্ঞান নিয়ে লেখাপড়া থাকতে হয়, গবেষণা করতে হয়, তবেই না বিজ্ঞানী হওয়া যায়। ও ছেলের লেখাপড়া কতদূর?

ইস্কুলে পড়ত। ছাইড়া দিছে।

লেখাপড়া ছেড়ে দিয়ে বিজ্ঞানী হয়েছে? এও সম্ভব!

আমার ইচ্ছা হচ্ছিল বাবাকে বলি, দুনিয়ার সব বিজ্ঞানী ক্লাসের ফার্স্ট বয় কিংবা গার্ল ছিলেন না। বাবার ধমক খেলে পানি খেতে হয় তিন গ্লাস। এজন্য কিছু বললাম না।

চুলা নষ্ট হয়ে গেছে। এর জন্য স্রেফ একজন মিস্ত্রিই যথেষ্ট।

সাত্তার চাচা করুণ মুখ করে দাদির দিকে তাকালেন। দাদি অগত্যা মুখ খুললেন। বললেন, বিজ্ঞানী চুলা ঠিক করলে অসুবিধা কী?

কিন্তু... মা! বিজ্ঞানীদের একটা প্রেস্টিজ আছে না।

হোটেলের খাবার খেয়ে পেটে গ্যাঞ্জাম হলে প্রেস্টিজ দিয়ে কাজ হবে না মনে রেখো। দাদি চোখ পাকিয়ে বললেন।

সাত্তার চাচা লম্বা বাবরি চুলের এক রোগা লোক নিয়ে এলেন। চোখ দুটো বড় বড়, সারাক্ষণ এদিক-ওদিক ঘুরছে। শার্টের গায়ে বেশ কটা তালি। না না, তালি না। ওগুলো ছোট ছোট পকেট মনে হচ্ছে। কেমন ফুলে আছে।

চাচা বুক ফুলিয়ে বলেন, স্যার! বিজ্ঞানী কিছুমিছু কান্ডিক! দেখবেন কিছুমিছু করে সেরে ফেলবে চুলাটা।

বিজ্ঞানীর কাঁধে চাপড় দিয়ে বলেন, কী, পারবে না?

আমরা অবাক হয়ে দেখলাম, চাপড় দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে লোকটার শার্টের গলার ফাঁক দিয়ে কী যেন লাফিয়ে উঠল। ঝটপট শব্দ হলো আর লোকটা ঝট করে ওপরে উঠে গেল। লোকটার মাথার ওপরে একটা কালো ছাতি খুলে গেছে। ছাতির হুকের সঙ্গে আবার অনেক ছোট ছোট ফ্যান ঘুরছে। লোকটা বাতাসে ভাসছে!

চাচা তো স্যরি-ট্যরি বলা শুরু করল। বাবা ঢোক গিলে বললেন, ওটা কী?

আমি টিভিতে দেখেছি এ রকম প্যারাসুটের সাহায্যে আকাশে ভাসে মানুষ। বাবার প্রশ্নের জবাবে আমি তাই বললাম, প্যারাসুট।

বিজ্ঞানী কিছুমিছু কান্ডিক শার্টের একটা বোতামে চাপ দিতে দিতে আস্তে করে নিচে নেমে এলো। আমার মাথার চুলে আদর করে বলল, বুদ্ধিমান ছেলে তো! বুঝতে পেরেছে।

কথা বলতে বলতে কিছুমিছু কাঁধের কাছে কী যেন টিপল। ঝটপট শব্দ করে বন্ধ হয়ে গেল ছাতা, চোখের পলকে ঢুকে গেল শার্টের গলা দিয়ে ভেতরে। সাত্তার চাচা গর্বের সঙ্গে বললেন, ঢাকার রাস্তায় যা জ্যাম। তাই তো কিছুমিছু বুদ্ধি করে এ রকম প্যারাসুট বানাইছন।

এটা কি সত্যিকারের প্যারাসুট?

হু। সত্যিকারের।

আকাশে ভেসে থাকা যায়?

যায়। তবে খুব বেশি ওপরে ওঠা যায় না। দোতলা যতটুকু উঁচু, ততটুকু।

কেন যায় না?

অত শক্তি নেই। ছাতাটা ছোট তো, বেশি ফ্যান লাগানো যায়নি। মোটরটাও বেশি বড় না।

প্যারাসুট দিয়ে তুমি কোথায় যাও?

এখনও যাওয়া শুরু করিনি। মাত্র বানালাম এটা।

কোথায় কোথায় যাবে বল না।

খুব বেশি দূর না। জ্যাম যতটুকু দূর, ততটুকু। জ্যাম পার করে টুক করে নেমে পড়ব।

কেন টুক করে নেমে পড়বে? সারাক্ষণ উড়লে কী মজা হবে, তাই না?

আমি আবদার করলাম, কিছুমিছু ও কিছুমিছু! আমাকে এ রকম একটা প্যারাসুট বানিয়ে দেবে? প্লি-ই-জ।

কিছুমিছু আমাকে আদর করে বলে, দেব।

সাত্তার চাচা নাকি নিজের জন্য একখানা অলরেডি বুক করে ফেলেছেন। এখন বাবার জন্য একটা করলেন। কিছুমিছুকে বললেন, তুমি কিন্তুক আমরার স্যারের লাইগা একখান বানাবা। ভালো কইরা বানাবা। স্যার কাউয়ার মতোন উইড়া উইড়া অফিস যাইব। তাই না স্যার?

সেবার দাদির খুব কষ্ট হয়েছিল বাবার মেজাজ ঠিক করতে। বাবার মোবাইলটা বেজে উঠেছিল বলে রক্ষা। আমেরিকা থেকে বাবার জানি দোস্ত মিজান আঙ্কেল ফোন করেছিলেন। কথা বলতে বলতে বাবার রাগ গেল পড়ে। মিজান আঙ্কেল ঠিক সময়ে ফোন না করলে বেচারা সাত্তার চাচার চাকরিটা থাকত না।

কিছুমিছু চুলা ঠিক করতে গিয়ে কী করেছিল বুঝতে পারিনি। তবে গ্যাস পাইপ আর চুলার সংযোগ যেখানে, সেখানে নানানরকমের সুইচ-বাতি-টাতি লাগিয়ে চেহারাটা বানাল সেই রকম। এর পর থেকে চুলাটা হয়ে গেল ফার্স্ট ক্লাস। গরম দুধ পাতিল বেয়ে উপচে পড়বে পড়বে ভাব দেখলেই চুলাটা নিজে থেকে আগুনের তেজ কমিয়ে দেয়। আর রান্না হয়ে গেলেই নিভে যায় একা একা।

খামোখা গ্যাস পোড়ালে দেশের ক্ষতি হয়, এ কথা বলেছিল কিছুমিছু।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা