× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

ষাটগম্বুজে মধ্যদুপুর

এস এম মুন্না

প্রকাশ : ০৯ মার্চ ২০২৩ ১৩:৪৯ পিএম

ষাটগম্বুজ মসজিদ              ছবি : লেখক

ষাটগম্বুজ মসজিদ ছবি : লেখক

শীত থাকলেও সেদিন ছিল না ঘন কুয়াশা। মনোমুগ্ধকর রৌদ্রকরোজ্বল এক আবহাওয়া। ঢাকা থেকে ভোরবেলায় রওনা দিয়ে পদ্মা সেতুসহ চারদিকে প্রাকৃতিক দৃশ্যাবলি দেখতে দেখতে ছুটছিলাম খুলনার উদ্দেশে। একের পর এক মাঠ-গ্রাম অতিক্রম করছি আর আবুল বাশারের সঞ্চালনায় নতুন-পুরোনো সব স্মৃতিজাগানিয়া গান শুনছি। সড়কের ডানে-বামে জলাশয়সদৃশ অসংখ্য ঘের। সবুজ ধান ক্ষেত তো আছেই। 

খুব কাছের কয়েকজন বন্ধু মিলে প্রথমেই ছুটলাম দেশের দক্ষিণাঞ্চলীয় জেলা বাগেরহাটে। ১৫ শতকের দিকে খান জাহান আলী নামের প্রখ্যাত সুফি দরবেশ মসজিদটি নির্মাণ করেন। ‘ষাটগম্বুজ মসজিদ’ কেন বলা হয়, এর নির্ভরযোগ্য কোনো ব্যাখ্যা পাওয়া যায় না। মসজিদটি ছাড়াও এর আশপাশে বেশকিছু ঐতিহাসিক নিদর্শন রয়েছে। রয়েছে অজানা কয়েকজনের কবর। আছে বিশাল কয়েকটি গাছ। সে গাছগুলোর ছায়াতলে বসে খানিক জিরিয়ে নেন ক্লান্ত পর্যটকরা। আমরাও খানিক বিশ্রাম নিলাম গাছের ছায়াতলে। মসজিদের ঠিক পশ্চিমে সুবিশাল দিঘি ও পীর খান জাহান আলীর সমাধি। বাগেরহাটের ষাটগম্বুজ মসজিদ খুব প্রসিদ্ধ। সারা বছর এখানে পর্যটকদের আনাগোনা চোখে পড়ার মতো। যখন ষাটগম্বুজে পৌঁছাই তখন সূর্য ঠিক মাথার ওপর অর্থাৎ মধ্যদুপুর। ভ্রমণসঙ্গী ছিলেন বন্ধু সাইফুল, আদনান, কামাল, বাশার, শাওন, সজল ও কামরুল। নামাজ শেষে মসজিদের ভেতর দিকটা খুব আগ্রহভরে দেখতে থাকি। প্রাচীন ইমারতের চোখ ধাঁধানো নির্মাণশৈলী যারপরনাই বিস্মিত করে তোলে। মসজিদের উত্তর-দক্ষিণে বাইরের দিকে প্রায় ১৬০ ফুট ও ভেতরের দিকে প্রায় ১৪৩ ফুট লম্বা এবং পূর্ব-পশ্চিমে বাইরের দিকে প্রায় ১০৪ ফুট ও ভেতরের দিকে প্রায় ৮৮ ফুট চওড়া।

জনশ্রুতি রয়েছে হজরত খান জাহান আলী (রহ.) ষাটগম্বুজ মসজিদ নির্মাণের জন্য সমুদয় পাথর সুদূর চট্টগ্রাম, মতান্তরে ভারতের ওড়িশার রাজমহল থেকে তার অলৌকিক ক্ষমতাবলে পানিপথে ভাসিয়ে এনেছিলেন। ইমারতটির গঠনবৈচিত্র্যে তুঘলক স্থাপত্যের বিশেষ প্রভাব পরিলক্ষিত হয়। এই বিশাল মসজিদের চারদিকে প্রাচীর আট ফুট চওড়া, এর চার কোণে চারটি মিনার। দক্ষিণ দিকের মিনারের শীর্ষে কুঠিরের নাম রোশনাই কুটির এবং এ মিনারে ওপরে ওঠার সিঁড়ি আছে।

মসজিদটি ছোট ইট দিয়ে তৈরি, এর দৈর্ঘ্য ১৬০ ফুট, প্রস্থ ১০৮ ফুট, উচ্চতা ২২ ফুট। মসজিদের সম্মুখ দিকের মধ্যস্থলে একটি বড় খিলান এবং এর দুই পাশে পাঁচটি করে ছোট খিলান আছে। মসজিদের পশ্চিম দিকে প্রধান মেহরাবের পাশে একটি দরজাসহ ২৬টি দরজা আছে। মসজিদ দর্শনীয় স্থানে রূপান্তরিত হওয়ায় সামনের আঙিনাকে সাজিয়ে তোলা হয়েছে বাহারি ফুল গাছের সমারোহে। এসব গাছের নানা রকম ফুলও দূর-দূরান্ত থেকে আসা পর্যটকদের মনে দোলা দিতে থাকে।

ষাট গম্বুজের পশ্চিম দিকে বিরাট একটি দিঘি আছে।  ষাটগম্বুজ মসজিদের আশপাশ ও পূর্ব-পশ্চিম তীরের জলাশয় ভ্রমণের পর ছুটলাম খুলনা ক্লাবের উদ্দেশে। এখানেই আমাদের রাত্রিযাপন। তখনও কিন্তু আমাদের মধ্যাহ্ন আহার হয়নি। সূর্য পশ্চিমে হেলে পড়ার আগেই পৌঁছলাম খুলনা ক্লাবে। মিনিট দশেকের জন্য খান জাহান আলীর সমাধিতে এসে দাঁড়াল আমাদের বহনকারী গাড়িটি মধ্যদুপুরের আগে। এর মধ্যেই গ্রুপ সেলফিটা তুলতে একটুও ভুল করল না সুবোধ বালক সাইফুল। দক্ষ চালক বাবু সাবধানে গাড়ি চালিয়ে চলছিল নির্দিষ্ট গন্তব্যে। 

বাগেরহাট শহর থেকে তিন মাইল পশ্চিমে ঘোড়াদিঘির পূর্ব পাড়ে অবস্থিত ষাটগম্বুজ মসজিদটি। প্রাচীরবেষ্টিত মসজিদ প্রাঙ্গণে প্রবেশের জন্য আদিতে দুটি প্রবেশপথ ছিল, একটি পূর্বদিকে এবং অন্যটি উত্তর দিকে। পূর্ব দিকের প্রবেশপথটি বর্তমানে পুনর্নির্মাণ করা হলেও উত্তর দিকেরটি বর্তমানে সম্পূর্ণ নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। পূর্ব দিকের প্রবেশপথটি, যা নিজেই একটি স্বতন্ত্র ভবনের দাবিদার, মসজিদের কেন্দ্রীয় খিলানপথ বরাবর স্থাপিত। প্রবেশপথের খিলানগুলো দ্বিকেন্দ্রিক ধরনের। সর্বমোট ষাটটি স্তম্ভ রয়েছে, যার বেশিরভাগই সরু প্রস্তর নির্মিত। তবে এর মধ্যে ছয়টি বিশালাকার।

খান জাহানের সর্বপ্রথম ও সর্বোৎকৃষ্ট স্থাপত্যিক নিদর্শন হিসেবে বিদ্যমান এটি। আভিধানিকভাবে ‘ষাটগম্বুজ’ অর্থ হলো ষাটটি গম্বুজসংবলিত। তবে সাধারণভাবে মসজিদটিতে একাশিটি গম্বুজ পরিলক্ষিত হয়। এর মধ্যে ছাদে সাতাত্তরটি এবং বাকি চারটি চার কোণের কর্ণার টাওয়ারের ওপর। কেন্দ্রীয় নেভের ওপর স্থাপিত সাতটি চৌচালা ভল্ট মসজিদটিকে ‘সাতগম্বুজ’ মসজিদ হিসেবে পরিচিত করে, কিন্তু সময় পরিক্রমায় এই ‘সাতগম্বুজ’ই ‘ষাটগম্বুজ’ হিসেবে রূপান্তরিত হয়ে যায়। দ্বিতীয় ব্যাখ্যানুসারে মসজিদের বিশাল গম্বুজ-ছাদের ভারবহনকারী মসজিদ অভ্যন্তরের ষাটটি স্তম্ভ সম্ভবত একে ‘ষাট খামবাজ’ (খামবাজ অর্থ স্তম্ভ) হিসেবে জনপ্রিয় করে তোলে। এটি অসম্ভব নয় যে, এই ‘খামবাজ’ শব্দটিই পরবর্তীকালে ‘গম্বুজ’-এ পরিণত হয়ে মসজিদটিকে ষাটগম্বুজ হিসেবে জনপ্রিয় করে তুলেছে। 

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা