× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

কেমন আছেন বাঁশ শিল্পের কারিগররা

অনুপম চৌধুরী

প্রকাশ : ০৫ মার্চ ২০২৩ ১৫:৫৩ পিএম

কেমন আছেন বাঁশ শিল্পের কারিগররা

আমাদের প্রাচীন শিল্পের অন্যতম বাঁশ শিল্প। বাঁশের তৈরি ডালা, ঝুড়ি, চালুন, কুলা, চাটাই, খালুই, ঝাঁকা, চাঙারি, খাঁচা, দোলনা, চারো, ঘুনি, ঠুসি ইত্যাদি পণ্যসামগ্রী সাংসারিক নানা প্রয়োজনে ব্যবহার হয়। আমাদের লোকজ শিল্পের ধারাটি এখনও ধরে রেখেছে বাঁশের পণ্য তৈরির শিল্পীরা। বাঁশির সুরে আমরা প্রত্যেকে মুগ্ধ হই। মন-পাগল করা সুর ওঠে যে বাঁশি থেকে, ওই জিনিসটিও তৈরি হয় বাঁশ থেকে।

গ্রামীণ জীবনের পাশাপাশি নাগরিক জীবনেও এই বাঁশজাত পণ্যের ব্যবহারে প্রসার ঘটেছে। ডাইনিং টেবিলচেয়ার, সাইড টেবিল বা ডিভান, টেবিল ল্যাম্প, কিংবা ঘরে ঝোলানো ল্যাম্পশেডে দেখা যায় এই পরিবেশবান্ধব বাঁশপণ্য। কারও কারও শোবার ঘরে শোভা পায় বাঁশের কারুকাজ করা আয়না। সৌন্দর্যবর্ধনে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয় বাঁশের তৈরি বিভিন্ন আকৃতির ঝুড়ি, র‍্যাক বা শেলফ, টিস্যুহোল্ডারসহ নানা শৈল্পিক সামগ্রী, যা নাগরিক গৃহসজ্জায় সৌন্দর্যের মাত্রা বৃদ্ধি করছে। কিন্তু যাদের তৈরি পণ্য দিয়ে আপনার বাসাবাড়িটি সাজিয়েছেন রুচিসম্মতভাবে, কীভাবে টিকে আছেন সেই শিল্পের নিপুণ কারিগররা? 

যশোর সদরের চাচড়া থেকে এগোলেই সাড়াপোল, মদনপুর, হুগলাডাঙ্গা, খানপুর, বাহাদুরপুর, ঘুরুলিয়া, বালিয়াডাঙ্গা, ইত্তে, তপস্বীডাঙ্গাসহ প্রায় বিশ/পঁচিশটি গ্রামের বাসিন্দারা বাঁশজাত পণ্য তৈরির মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করেন। ভোর হলেই বাঁশের বেতি চাঁছতে বসে পড়ে বাড়ির পুরুষরা। এমন দৃশ্য প্রত্যেকটি বাড়ির আঙিনায় দেখা যায়। পুরুষরা সাধারণত বাঁশের বেতি চেঁছে দেয়। বাড়ির মহিলারা এই কাজে পুরুষ মানুষটিকে পণ্য গড়তে সহযোগিতা করে। বেতি থেকে ধাপে ধাপে তৈরি করে একেকটি কারুপণ্য। প্রতিটি পরিবারের সবাই কোনো না কোনোভাবে এই পণ্য উৎপাদনের সঙ্গে যুক্ত থাকে।

সাড়াপোল গ্রামের লক্ষ্মণ দাস। বংশ পরম্পরায় নিয়োজিত আছেন এই শিল্পের সাথে। নিজ বাড়ির আঙিনায় বসে বাঁশের বেতি তুলছেন। বাঁশের ম-ম গন্ধ চারদিকে ছড়িয়ে পড়েছে। এমন সময় তার সামনে দাঁড়াতেই, সৌজন্য দেখিয়ে বসতে বললেন। পাশে বসে তাকে জিজ্ঞাসা করলাম, কী তৈরি করছেন? উত্তরে- এই তো দাদা ডালা বানাই। বললাম, কত বছর ধরে এই পেশায় আছেন? ঝটপট উত্তরÑ তা তো বিশ বছর হবেই। যশোরের স্থানীয় ভাষায় বলেন, বাপও এই বাঁশের কাজে খেটেছে, বাপের কাছ থেকে আমরাও এই কাজেই আছি। আমার ছেলেমেয়েরাও এই কাজই শিখতেছে।’

এই গ্রামের প্রায় শ’দুয়েক মানুষ লক্ষ্মণ দাসের মতো বাঁশজাত শিল্পের সঙ্গে জড়িত। এরা সবাই ঋষী সম্প্রদায়ের। কেউ তৈরি করেন, কেউ কিনে শহরে বা অন্য কোথায় বিক্রির পেশার সঙ্গে যুক্ত। 

একদিনে একজন কারিগর চার থেকে পাঁচটি ডালা বানাতে পারেন। স্ত্রী বা সন্তানদের সহযোগিতা নেন। একটি বাঁশ থেকে পাঁচ থেকে সাতটি ডালা হয়। একটি বাঁশের মূল্য ২শ টাকা। একটি ডালা বিক্রি হয় ১২০ থেকে ১৩০ টাকায়।

এই গ্রামেরই বাঁশজাত পণ্য বিক্রির স্থায়ী দোকানদার ভীম দাস জানান, অন্যান্য জিনিসের দাম বাড়লেও বাঁশের তৈরি জিনিসের দাম তেমন বাড়েনি। এ কারণে কারিগররাও অনেকে পেশা পরিবর্তন করে অন্য পেশায় যাচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, সারা বছর কম-বেশি চাহিদা থাকলেও শীত মৌসুমে বিভিন্ন পর্ব ও মেলায় বেশি বেচাকেনা হয়। প্লাস্টিকের তৈরি জিনিস আমাদের এসব বাঁশের তৈরি জিনিসের বাজার দখল করেছে। যে কারণে গ্রামের মানুষদের কাছে বাঁশের তৈরি পণ্যের আগ্রহ এখন অনেক কম। শহরের মানুষরা শখের বসে কেউ কেউ বাঁশের বিভিন্ন জিনিস কিনে নেয়। শখের বসে তো সব মানুষ কেনে না।’

কোনোরকমে টিকে আছে যশোরের বাঁশজাত শিল্পের কারিগররা। আমাদের লোকজীবনের সঙ্গে মিশে থাকা এই শিল্পটি 

ধরে রাখতে কারিগরদের উন্নতর প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। তাদের উৎপাদিত শিল্পপণ্যের উপযুক্ত মূল্যে বিক্রির ব্যবস্থা করতে হবে। তাহলে একদিকে যেমন এরা পিতৃপুরুষের পেশা ধরে রাখতে পারবে, অন্যদিকে ক্ষতিকর প্লাস্টিক পণ্য থেকে রক্ষা পাবে পরিবেশ। 

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা