‘যে পথে চলেছ বন্ধু, সে পথে হারাবে যে সত্তা, মায়াবী আলোর প্রতারণায় মোহিত, আঁধারে তুমি, কত প্রেমের বসন্ত, কত বৃহৎ দিগন্ত, এত সুখের তাড়নায়, যে যাও হারিয়ে, কীভাবে ভুলেছ বন্ধু পুরনো দিনের সেই কথা।’ গানটি ওয়ারফেজ ব্যান্ডের।
মানুষ বন্ধুপ্রিয়। বেশিরভাগ মানুষই চায় তার খুব কাছের কেউ থাকুক। যাকে সে সব বলতে পারে, তার বিপদে-সুখে-দুঃখে তার পাশে পাবে। কিন্তু কখনও কখনও এমনও হয় তুমি কোনো একজনের খুব প্রিয় বন্ধু, তার পাশে সব সময় ছিলে। কিন্তু জীবন বাস্তবতায় আজ সে মানুষটিকে আর পাশে পাচ্ছ না। বন্ধুটি হঠাৎ পরিবর্তন হয়ে গেছে। তার মাঝে দেখতে পেলে অস্বাভাবিক আচরণ। যদি তার বদলে যাওয়াটা খুব প্রকটভাবে দেখা দেয়, তখন তাকে ফিরিয়ে আনার দায়িত্বও বন্ধুর। আবার বন্ধু যদি কোনো কারণে টানা বিষণ্ন আচরণ করে, সেটা থেকে বেরিয়ে আনতেও সাহায্য করতে পারে অন্য বন্ধুরা। এ জন্য কিছু বিষয়ের দিকে গুরুত্ব দিতে হবে।
মনের কথা মনে রয়
তোমার বন্ধু তোমার কাছ থেকে এমন কিছু গোপন করছে বা এমন কোনো মিথ্যা বলছে, যা তুমি সহজেই ধরে ফেলতে পারছ।
কথায় অস্বাভাবিকতা
বন্ধুটির কথায় কোনো অস্বাভাবিকতা লক্ষ করছ কি না। খেয়াল করো, হঠাৎ করে সে উগ্রবাদী, সাম্প্রদায়িক কথা বলা শুরু করেছে কি না এবং এসব নিয়ে তর্কে জড়িয়ে পড়ছে কি না।
হঠাৎ নিখোঁজ
বন্ধুটি তোমার বা বাড়িতে কাউকে না বলে দিন কয়েকের জন্য নিখোঁজ হচ্ছে কি না এবং তখন তার মুঠোফোন বন্ধ আছে কি না।
ঘুমের পরিবর্তন
সারা রাত জেগে থাকা আর সারা দিন ঘুমাচ্ছে কি না, চোখ লাল থাকছে কি না, কথা জড়িয়ে যাচ্ছে কি না।
মোবাইলফোনের নম্বর পরিবর্তন
ঘন ঘন মোবাইলফোনের নম্বর পরিবর্তন করছে। এক নম্বর বেশি দিন ব্যবহার করছে না। এমন কিছু নিয়মিত করে থাকলে কেন করছে, কোনো সমস্যা কি না বন্ধুকে জিজ্ঞেস করো।
বন্ধুত্বের পরিবর্তন
আগে যাদের সঙ্গে মিশত তাদের সঙ্গে মেশা বন্ধ করে রহস্যজনক নতুন বন্ধুদের সঙ্গে মিশছে কি না এবং এই নতুন বন্ধুদের কাউকে পরিবার বা আগের বন্ধুদের সঙ্গে পরিচয় করাচ্ছে না। এমনকি আগে যদি কারও সঙ্গে তার প্রেমের সম্পর্কও থেকে থাকে, তবে কোনো সুনির্দিষ্ট কারণ ছাড়া তাতেও ভাঙন ধরেছে কি না।
কী করতে পারি?
বন্ধু হতে পারে বিভ্রান্ত। হতে পারে বিপথগামী। মাদক, জঙ্গিবাদ, অপরাধজগতে জড়িয়ে পড়ে সে হারিয়ে যেতে পারে অন্ধকার জগতে। বন্ধু হিসেবে তাকে সঠিক পথে রাখার দায়িত্ব আরেক বন্ধুরই।
যা করা প্রয়োজন:
বিচ্ছিন্নতা নয়
বন্ধুর সঙ্গে বিচ্ছিন্নতা নয়, বরং বন্ধুত্ব করেই তাকে সুপথে আনতে হবে। তাকে বোঝাতে হবে। বন্ধুত্বের দাবি নিয়ে তুমি তাকে বোঝাও, সম্মিলিত প্রচেষ্টায় তাকে বিপথগামিতার হাত থেকে সুরক্ষা দেওয়া সম্ভব।
নিজের নিরাপত্তা
বন্ধুকে সাহায্য করবে, তবে নিজের নিরাপত্তার দিকেও খেয়াল রাখতে হবে। অনেক সময় বন্ধুর অপরাধের দায় নিতে হতে পারে নিজেকেও। তাই মুঠোফোন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ইত্যাদিতে এই ঝুঁকিপূর্ণ বন্ধুদের সঙ্গে যোগাযোগে সতর্ক থাকা বাঞ্ছনীয়।
ব্যঙ্গ করবে না
বন্ধুর কোনো বিষয় নিয়ে তাকে ব্যঙ্গ করবে না, উত্ত্যক্ত করা ঠিক হবে না। তার দুর্বল দিক নিয়ে হাস্য পরিহাস করা যাবে না।
ইতিবাচক কাজে অংশগ্রহণ
বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কাজে বন্ধুরা মিলে অংশ নাও। ইতিবাচক কাজ বেশি বেশি করা শুরু করো, তাহলে বিভ্রান্ত তোমাকে বা বন্ধুটিকে স্পর্শ করার সুযোগ কম পাবে। মাদকের বিরুদ্ধে, অপরাধের বিরুদ্ধে, জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে বন্ধুরা সবাই মিলে আলোচনা করো। তাতে যে বন্ধুর মনে এসব নিয়ে অস্পষ্টতা আছে, তা কেটে যাবে।