কালের ধ্বনি
আমিরুল আবেদিন আকাশ
প্রকাশ : ০৪ মার্চ ২০২৩ ১৩:৫২ পিএম
সর্বোচ্চ আইকিউধারী কিম উন জং নিজের মতো সুখেই আছেন এখন
২০১৪ সালে কিম উন জংয়ের ইচ্ছা পূরণ হয়। দক্ষিণ কোরিয়ার ইয়ুংগি প্রদেশের শিহান বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রফেসর হিসেবে নিয়োগ পান তিনি। কিন্তু এরপরও লোকে তাকে ‘পথভ্রষ্ট মেধা’ বলেই ডাকতো। কিন্তু সেটা কেন এ বিষয় জানতে একটু পেছন ফিরে যেতে হবে।
১৯৬২ সালে জন্ম নেওয়া কিম উন জং আদতে ছিলেন দারুণ মেধাবী। খুব ছোট বয়স থেকেই তিনি সবার থেকে আলাদা ছিলেন তার মেধার কারণে। মাত্র এক বছর বয়সেই কোরিয়ান বর্ণমালা তার আয়ত্তে চলে আসে। শুধু সেটাই নয় ওই বয়সেই ষষ্ঠ শতকের চীনা কবিতা থেকে ১ হাজার চীনা অক্ষরও তার শেখা হয়ে যায়! চমক এখানেই শেষ নয়। তিন বছর বয়সে কিম উন জং জটিল ক্যালকুলাসের সমাধান করায় ব্যস্ত হয়ে পড়েন। কিমের মন এক জায়গায় আটকে থাকার মতো ছিল না বলেই তার প্রতিভা নিয়ে এত হইচই। পাঁচ বছর বয়সে সে মোটমাট পাঁচটি ভাষা আয়ত্ত করে নেন। সেটাও আবার কোরিয়ান, ফ্রেঞ্চ, ইংরেজি, জার্মান ও জাপানিজের মতো কঠিন ভাষা। বিষয়টি গণমাধ্যমের চোখ এড়ায়নি। জাপানের ফুজি টিভি তার একটি সাক্ষাৎকার প্রকাশ করে। যার মাধ্যমে কিমের কথা গোটা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। অল্প বয়সের এক এক কিংবদন্তি যেন সে। সংবাদপত্রগুলোও তাকে নিয়ে সুযোগ পেলেই হইচই ফেলে দেয়।
কয়েকটি প্রতিবেদনে তো বলাই হলো, মাত্র আট বছর বয়সে কিম নাসার সঙ্গে কাজ শুরু করে দিয়েছেন। ১৯৭৮ সালে কিম উন জং গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে সবচেয়ে বেশি আইকিউধারী (২১০) হিসেবে ঠাঁই করে নেন। কথায় বলে, প্রতিভা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই পথ হারায়। একাডেমিয়ায় যখন কিমের নামে জয়জয়কার, তখনই বোধহয় পথ হারালেন। জ্ঞানের জগতে প্রতিষ্ঠার পথে হুট করে একটা যতি টেনে দিলেন যেন। ১৯৭৮ সালে কিম দক্ষিণ কোরিয়ায় চাংবাক ন্যাশনাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। সেখানে উচ্চশিক্ষার পাট চুকিয়ে পুরকৌশলে (সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং) পিএইচডি সম্পন্ন করেন। এ সিদ্ধান্তে অনেকেই হতাশ হয়েছিলেন। প্রতিভা পথ হারালেও নিজের ইচ্ছামতো পথ করে নিতে পারে। কিমের ক্ষেত্রেও এ কথা সত্য। ছোটবেলা থেকেই সবার চোখে ‘জন্মগত প্রতিভা’ ভূষণটি তার ওপর বাড়তি চাপ সৃষ্টি করেছিল।
এক সাক্ষাৎকারে আক্ষেপ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘এতদিন একটা মেশিনের মতো নিজেকে চালিয়েছি। ঘুম ভাঙলেই ক্যালকুলেশনের জটিল সমীকরণ মেলাতে মেলাতেই দিন শেষ। আমি আসলে কী করছিলাম, কোথায় চলেছিলাম তা বোঝার ফুরসত মেলেনি। নিজেকে ভীষণ একা মনে হতে শুরু করে। ’ সারা জীবন নিজেকে বেড়াজালে আটকে রেখেছিলেন বলে স্বাভাবিক-আটপৌরে জীবনের সবকিছুই রয়ে গেছে অনাস্বাদিত। ঠিক সেজন্যই তিনি এমন এক জীবনের খোঁজে যাত্রা করলেন যা তার নিজস্ব পরিচয় গড়ে তুলবে। এমন এক পরিচয় যা ‘জন্মগত প্রতিভা’ ভূষণের চাপে পিষ্ট করবে না তাকে।
সূত্র : কোরিয়াবু