× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

ঢাকাই বাকরখানি

জিয়াউল জিয়া

প্রকাশ : ০১ মার্চ ২০২৩ ১৩:৪৪ পিএম

ঢাকাই বাকরখানি

আলু বেচো ছোলা বেচো, বেচো বাখরখানি/বেচো না বেচো না বন্ধু, তোমার চোখের মণি। সমীর রায়ের কথা ও প্রতুল মুখোপাধ্যায়ের সুর ও কণ্ঠে পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী খাবার বাকরখানি নিয়ে এ কালজয়ী গানই বলে দেয় এর জনপ্রিয়তা। এ খাবারটি তৈরির পেছনে রয়েছে অমর প্রেমকাহিনি। আগা বাকের নামে একজন তুর্কিস্তান থেকে ক্রীতদাস হয়ে বাংলার মাটিতে এসেছিল। তৎকালীন বাংলার নবাব মুর্শিদকুলি খান সেই ছেলেটিকে দেখে বুঝতে পেরেছিলেন, এটি কোনো সাধারণ ছেলে নয়। তিনি আগা বাকের খানকে তার দত্তকপুত্র হিসেবে গ্রহণ করে লেখাপড়ার সঙ্গে সমরবিদ্যাও শেখাতে শুরু করেন। কিছুদিনের মধ্যেই সমরবিদ্যায় পারদর্শী হয়ে ওঠেন আগা বাকের। নবাব মুর্শিদকুলি খান আগা বাকেরকে চট্টগ্রাম অঞ্চলের ফৌজদারির দায়িত্ব দেন। সে সময় খনি বেগম নামে একজন নর্তকীকে ভালো লেগে যায় বাকেরের। কিন্তু তার সব আশার রাস্তায় বাধা হয়ে দাঁড়ান তৎকালীন উজির জাহেন্দা খাঁর পুত্র নগর কোতোয়াল জয়নাল খাঁ। জয়নাল খাঁ খনি বেগমকে প্রেমপ্রস্তাব জানিয়ে প্রত্যাখ্যাত হয়ে তাকে তুলে নিয়ে দক্ষিণবঙ্গের দিকে চলে যান। খবর পেয়ে আগা বাকের ছোটেন খনি বেগমকে উদ্ধার করতে। বাকেরের কাছে জয়নাল খাঁ পরাজিত হন। জয়নাল পরাজিত হয়ে বাকেরের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করেন। তিনি তার পিতা তৎকালীন উজিরের কাছে লোকমারফত খবর পাঠান যে, আগা বাকের তাকে হত্যা করে লাশ গুম করেছে। এ খবর পেয়ে উজির নবাবের কাছে বিচার চান। নবাব নিরপেক্ষ বিচার করে বাকেরকে বাঘের খাঁচায় নিক্ষেপের মাধ্যমে মৃত্যুদণ্ড দেন। বাকের ক্ষুধার্ত বাঘকে হত্যা করে বাঘের খাঁচা থেকে বীরের মতো বেরিয়ে আসেন। ততক্ষণে জয়নালের মিথ্যা মৃত্যুর খবর চারদিকে প্রচার হয়ে যায় এবং উজির নিজে নিজের ছেলেকে তলোয়ারের আঘাতে হত্যা করেন। আঘাতপ্রাপ্ত জয়নাল মৃত্যুর আগে খনি বেগমকে হত্যা করেন। বর্তমান বরিশাল জেলার পূর্বনাম বাকেরগঞ্জ এই আগা বাকেরের নামানুসারেই হয়েছিল। বাকের তার প্রিয়তমার স্মৃতি বুকে ধারণ করে এক বিশেষ ধরনের শুকনো রুটির প্রচলন করেছিলেন। নিজের নামের সঙ্গে খনি বেগমের নাম মিলিয়ে যার নাম তিনি রেখেছিলেন বাকেরখনি। এ বাকেরখনিই লোকমুখে প্রচলিত হতে হতে বর্তমানে বাকরখানি নামে পরিচিত হয়েছে। পুরান ঢাকার প্রখ্যাত লেখক নাজির হোসেন তার ‘কিংবদন্তী ঢাকা’ নামক গ্রন্থে বাকরখানির এ ইতিহাস উল্লেখ করেছেন।

জনশ্রুতি রয়েছে, লালবাগ কেল্লার কাছেই প্রথম পুরান ঢাকার বাকরখানি দোকান গড়ে উঠেছিল। এরপর ধীরে ধীরে চানখাঁরপুল, আগা নবাব দেউড়ী, কোতোয়ালি, চকবাজার, বংশাল, হাজারীবাগ ও সূত্রাপুরে বিস্তার লাভ করে এ বাকরখানির দোকান। এ ছাড়া পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোডের দুই পাশেও গড়ে উঠেছে বাকরখানির বেশ কয়েকটি দোকান। এখনও সেরা বাকরখানি মেলে লালবাগেই। তবে বাকরখানির বর্তমান বাজার সম্পর্কে সূত্রাপুরের বাকরখানি কারিগর ও বিক্রেতা কালাম ভিন্ন কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘এখন অনেক বড় বড় দোকানে প্যাকেটজাত বাকরখানি পাওয়া যায়। নতুন ঢাকার মানুষ এখন সেসব রুটিই কেনে। বাজারের প্যাকেটজাত বাকরখানি মূলত পুরান ঢাকার বাকরখানির সুনাম নষ্ট করছে। চকচকে প্যাকেটজাত বাকরখানির জন্য আমাদের বিক্রিও কিছুটা কমেছে। কিন্তু ওসব বাকরখানি স্বাদে পুরান ঢাকার বাকরখানির ধারেকাছেও না। ওসব রুটি বাকরখানি সম্পর্কে বিরূপ ধারণা তৈরি করছে।’

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা