হৃদয় চন্দ্র দাস
প্রকাশ : ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ১২:৩৫ পিএম
জেলা শহর ফেনী থেকে ২৭ কিলোমিটার দূরে বিলোনিয়া। এটি পরশুরাম থানার একটি অংশ। এখানে শিক্ষা-সংস্কৃতি প্রসারের জন্য কোনো সামাজিক প্রতিষ্ঠান ছিল না। তাই পাঠাগারভিত্তিক শিক্ষা, জ্ঞান-বিজ্ঞান, ইতিহাস-ঐতিহ্য, সাহিত্য ও সংস্কৃতিচর্চার লক্ষ্যে ১৫ ডিসেম্বর ২০১৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় ‘ভাটিয়াল মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি পাঠাগার’। এই উদ্যেগের পেছনে রয়েছেন লেখক ও সমাজকর্মী আলমগীর মাসুদ। এলাকার তরুণদের সহযোগিতায় প্রতিষ্ঠিত এই পাঠাগার শুধু বই ও পত্রিকা পাঠের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, বরং এলাকার বিভিন্ন সামাজিক কর্মকাণ্ড পরিচালনার মাধ্যমে বিস্তৃত করে চলছে।
আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত, প্রগতিমুখী, অসাম্প্রদায়িক ও বিজ্ঞানমনস্ক মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে একটি আধুনিক পাঠাগার গড়ার লক্ষ্যে কাজ করার প্রত্যয়ে এগিয়ে চলছে ভাটিয়াল মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি পাঠাগার। যদিও শুরুর গল্প কিছুটা বেদনার। বিলোনিয়ার তালুকে ভাড়া করা একটি পুরাতন টিনের ঘরে ৩শটি বই ও কিছু ম্যাগাজিন আর পত্রিকা নিয়ে পাঠাগারের যাত্রা শুরু হয়েছিল। গত চার বছরে বিভিন্ন লেখক, প্রকাশক ও শুভানুধ্যায়ীদের পাঠানো বই এবং সদস্যদের সংগ্রহ মিলে বর্তমানে ১৫শর অধিক দেশি-বিদেশি বই, পত্রিকা, সাময়িকী ও লিটলম্যাগের সংগ্রহ রয়েছে। পত্রিকা, বই ও ম্যাগাজিন পড়ার জন্য বর্তমানে স্কুলপড়ুয়া, যুবক ও বয়স্ক মিলে প্রতিদিন প্রায় ২০/২৫ জন পাঠক উপস্থিত হন ভাটিয়াল মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি পাঠাগারে।
শিক্ষা, সংস্কৃতি, জাতীয় দিবস, জাতীয় গ্রন্থাগার দিবসসহ পাঠক, সাংস্কৃতিক প্রশিক্ষণ ও সেবামূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে থাকে এই পাঠাগারটি। বই ছাড়াও পাঠের জন্য প্রতিদিন পত্রিকা রাখা; আর ছোটদের জন্য প্রতি সপ্তাহে একদিন ফ্রি ক্লাস চালু রেখেছে এ পাঠাগার। দেশ যখন প্রযুক্তি ব্যবহার করে উন্নত হচ্ছে, তার উল্টোদিকে রয়েছে এই সীমান্তবর্তী এলাকাটি। এই এলাকাকে বলা হয় নেটওয়ার্কহীন একটি অন্ধকার গ্রাম। গোলাপের ফুল নয়, মরা পাপড়ির সঙ্গে এখানকার স্থানীয়রা পরিচিত। কারণ নেটওয়ার্ক না থাকায় এখানকার মানুষ রাষ্ট্রের অনেক কিছু জানা এবং প্রচার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। তাই টাওয়ার স্থাপন ও স্থায়ী নেটওয়ার্ক সমাধানের লক্ষ্যে কাজ করছে ভাটিয়াল মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি পাঠাগার। মাঠ ও খেলাধুলার প্রতি সুদৃষ্টি রয়েছে পাঠাগারের। এ ছাড়া এলাকার শিক্ষার্থীদের আধুনিক প্রযুক্তির সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়া, গ্রামীণ পরিবেশে প্রতিষ্ঠিত এ পাঠাগার নানা শ্রেণি-পেশার মানুষের কল্যাণে কাজ করছে।
এই পাঠাগার থেকে একটি সাহিত্য পত্রিকাও প্রকাশ হয়। সেখানে দেশের গুণী লেখকদের পাশাপাশি স্থানীয় নবীন সাহিত্যিকদের লেখাও প্রকাশ হয়। এ ছাড়াও এদের একটি প্রকাশনাও রয়েছে। এই প্রকাশনার অর্জিত আয় দিয়ে পাঠাগার পরিচালনার কিছুটা ব্যয়ভার বহন করা হয়। পাঠাগারের প্রতিষ্ঠাতা সভপাতি আলমগীর মাসুদের সঙ্গে কথা হয়। তিনি জানান, ফেনীর কৃতীসন্তান ভাষাশহীদ আবদুস সালামÑ যিনি বাংলা ভাষার জন্য প্রাণ উৎসর্গ করেছেন। তাই আমরা এই ভাষার মাসে ভাটিয়ালের আয়োজনে ও জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় স্বল্প পরিসরে পাঁচ দিনব্যাপী একটি বইমেলা শুরু করেছি। মেলাটি শুক্রবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) ২০২৩ তারিখ থেকে শুরু হয়েছে। নবীনচন্দ্র সেন পাবলিক লাইব্রেরি প্রাঙ্গণে বসেছে এই বইমেলা। ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চলবে।
পাঠাগারের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা জানতে চাইলে তিনি জানান, পাঠাগারটি বর্তমানে একটি ভাড়া করা রুমে রয়েছে। সাংস্কৃতিক প্রশিক্ষণ ও সেবামূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনার জন্য নিজস্ব জমি ও ভবনের প্রয়োজন। জেলা প্রশাসক ও পরশুরাম উপজেলা নির্বাহী অফিসার ভাটিয়াল মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি পাঠাগারের জন্য জায়গা ও ভবন নির্মাণের আশ্বাস দিয়েছেন।
সপ্তাহে একদিন চিত্রাঙ্কন, সংগীত ও আবৃত্তির ক্লাস; গ্রামীণ জাদুঘর কর্নার করার পরিকল্পনা রয়েছে। এলাকায় মাঠ না থাকায় শত-শত যুবক ও শিক্ষার্থী খেলা থেকে দূরে রয়েছে। মাঠ ও খেলাধুলার ওপর কাজ করবে ভাটিয়াল পাঠাগার।