× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

নকশাকাটা জীবন

রবিউল হুসাইন

প্রকাশ : ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ১৩:২৬ পিএম

আপডেট : ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ১৩:৩৬ পিএম

সোনারগাঁয়ের নকশিকাঁথার কারুশিল্পী হোসনে আরা দীর্ঘদিন যাবৎ এ শিল্পের সঙ্গে জড়িত	ছবি : লেখক

সোনারগাঁয়ের নকশিকাঁথার কারুশিল্পী হোসনে আরা দীর্ঘদিন যাবৎ এ শিল্পের সঙ্গে জড়িত ছবি : লেখক

সভ্যতার শুরু থেকেই পুরুষের পাশাপাশি নারীরা বিভিন্ন ক্ষেত্রে তাদের যোগ্যতা ও দক্ষতার পরিচয় দিয়ে যাচ্ছেন। কৃষি থেকে শুরু করে শিল্প-সংস্কৃতিতে তাদের অবদান অনস্বীকার্য। আমাদের দেশের নারীরা প্রাচীনকাল থেকেই চারু ও কারুশিল্পে বেশ পারদর্শী। গ্রামীণ সমাজে গৃহস্থালি কাজের ফাঁকে ফাঁকে নারীরা নকশিকাঁথা, মাটির পুতুল, নকশিপাখা, শীতলপাটি, পাটের শিকা, চারকা কাটা, তাঁতে কাপড় বোনা, কাগজের ফুল, কাপড়ের পুতুল, বাঁশ ও বেতের সরঞ্জাম তৈরিসহ বিভিন্ন ধরনের কারুপণ্য তৈরি করে আসছেন।

অনেকে বংশপরম্পরায় এ শিল্পের সঙ্গে জড়িত, কেউ আবার বৈবাহিক সূত্রে স্বামীর পরিবারে এসে এসব কাজে যুক্ত হয়েছেন। গত মাসের ১৮ তারিখ সোনারগাঁয়ে বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশনে শুরু হয়েছে মাসব্যাপী লোকজ উৎসব। কারুকর্ম তৈরি, প্রদর্শন ও বিপণনের জন্য এ উৎসবে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ৬৪ জন কারুশিল্পীকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। ৬৪ জন কারুশিল্পীর মধ্যে রয়েছেন ১৭ জন নারী কারুশিল্পী। 

নারীরা তাদের মেধা ও মননশীলতাকে কাজে লাগিয়ে শিল্পকর্ম তৈরি করে সবার কাছে প্রসংশিত হচ্ছেন। শুধু আমাদের দেশে নয়, বিদেশেও বিভিন্ন লোকজ মেলা, প্রদর্শনী ও কারুশিল্প সম্মেলনে অংশ নিচ্ছেন এ নারী কারুশিল্পীরা।

সোনারগাঁয়ের নকশি কাঁথার কারুশিল্পী হোসনে আরা দীর্ঘদিন যাবৎ এ শিল্পের সঙ্গে জড়িত। সোনারগাঁয়ের লোকজ উৎসবসহ দেশের বিভিন্ন কারুশিল্প প্রদর্শনীতে তিনি অংশগ্রহণ করে থাকেন। এ ছাড়া জাপান, শ্রীলঙ্কা, নেপালসহ বিভিন্ন দেশে অনুষ্ঠিত কারুশিল্প মেলায় অংশ নিয়েছেন। কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে সম্মাননাও পেয়েছেন। বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশন থেকে নকশিকাঁথায় বিশেষ অবদানের জন্য স্বর্ণপদকও পেয়েছেন তিনি। 


উৎসবে চট্টগ্রামের চান্দনাইশ থেকে এসেছেন মনোয়ারা বেগম। তিনি তালপাতার নকশিপাখা তৈরি করেন। সুনিপুণ দক্ষতায় তালপাতার বুননে পাখার গায়ে ফুটিয়ে তোলেন নানা ধরনের নকশা। মনোয়ারা বেগম বলেন, তার স্বামীর কাছ থেকে তিনি এ কাজ শিখেছেন। স্বামীর মৃত্যুর পর তিনি এখন এ শিল্পকে আঁকড়ে বেঁচে আছেন।

রংপুরের পীরগঞ্জ থেকে ঐতিহ্যবাহী শতরঞ্জি শিল্প নিয়ে এসেছেন শিউলি আক্তার। পারিবারিকভাবেই তিনি এ শিল্পের সঙ্গে জড়িত। তিনি যেকোনো ধরনের শতরঞ্জি বুনন করতে পারেন বলে জানান। তার বাবা এখন বয়োবৃদ্ধ, মা মারা গেছেন- তাই এ শিল্পটি এখন তাকেই ধরে রাখতে হচ্ছে।

ঠাকুরগাঁও থেকে উৎসবে অংশ নিয়েছেন গলি বালা। তিনি বাঁশের কারুশিল্পী। তার স্বামীও এ শিল্পের সঙ্গে জড়িত। বাঁশ দিয়ে ঐতিহ্যবাহী ডালা, কুলা, ঝুড়ি, ঝাঁপি, ডুলা, চালুনি থেকে শুরু করে বিচিত্র ধরনের কারুপণ্য তৈরি করেন তিনি। উৎসবে অংশ নিতে পেরে তিনি খুব খুশি। সরাসরি ক্রেতাদের সঙ্গে কথা হচ্ছে। ক্রেতারা তার কাজ দেখে প্রশংসা করছেন। এতে তিনি বেশ মুগ্ধ।


মুন্সীগঞ্জ থেকে অংশ নেওয়া শীতলপাটির কারুশিল্পী সবিতা রানী মোদি বললেন, তিনি এর আগেও এ উৎসবে এসেছেন। এ শিল্পটিতে তিনি ছোটবেলা থেকেই জড়িত। বিভিন্ন সম্মাননাও পেয়েছেন। এখানে আসলে বেশ ভালো লাগে।

কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জ থেকে আসা ঐতিহ্যবাহী টেপা পুতুলশিল্পী আরতি রানী পাল বললেন, তিনি শৈশব থেকেই এ টেপা পুতুল তৈরির কাজ করছেন। আগে বহু পরিবার এ কাজ করতেন। এখন এ পেশা ছেড়ে সবাই অন্য পেশায় চলে যাচ্ছেন। তিনি এটি ধরে রেখেছেন। কিন্তু তার মৃত্যুর পর এ শিল্পটি ধরে রাখার আর কোনো লোক নেই।

কাপড়ের পুতুল ও কাগজের অন্যান্য শিল্পকর্ম নিয়ে উৎসবে অংশ নিয়েছেন ঢাকার তানিয়া আক্তার। তিনি ঐতিহ্যবাহী কাপড়ের পুতুলশিল্পের কারুপণ্য তৈরি করে থাকেন। 

সিলেট সদর থেকে ঐতিহ্যবাহী মণিপুরি তাঁতশিল্পের পণ্য নিয়ে এসেছেন তাঁতশিল্পী রেহানা আক্তার ও রুমা আক্তার। তারা উৎসব প্রাঙ্গণে কোমর তাঁতে মণিপুরি ওড়না, চাদরসহ বিভিন্ন কারুপণ্য তৈরি করছেন।


মাগুরা জেলার শালিখা থানার শতপুরা থেকে শোলাশিল্পী মিতালী রানী মালাকার এসেছেন শোলাশিল্পের পসরা নিয়ে। তিনি বিয়ের পর স্বামীর বাড়ি এসে এ শিল্পকর্মটি আয়ত্ত করেছেন। বর্তমানে তিনি একজন পুরোদস্তুর শোলাশিল্পী।

কুমিল্লা থেকে এসেছেন বাঁশের বাঁশি তৈরির কারুশিল্পী ময়না খাতুন। সোনারগাঁয়ের সূচিশিল্পী আলেয়া আক্তার, রাজশাহীর পারভিন আক্তার, রংপুরের পাটের কারুশিল্পী রাশিদা আক্তার, সোনারগাঁওয়ের মোরশেদা আক্তার। সোনারগাঁওয়ের ঐতিহ্যবাহী সুতার তৈরি নকশি হাতপাখার কারুশিল্পী বাসন্তি রানী ও রীতা রানী সবাই উৎসব প্রাঙ্গণে বসে তাদের কারুকাজ করছেন এবং বিক্রিও করছেন। কারুশিল্পের এ মিলনমেলা প্রতিবছর এ লোকজ উৎসবেই শুধুমাত্র হয়ে থাকে।

এখানে ক্রেতারা স্বচক্ষে দেখেছেন কীভাবে কারুশিল্পীরা কারুপণ্য তৈরি করেন। মনের মাধুরী মিশিয়ে পরম যত্নে পরম ধৈর্যে সৃষ্টি করেন একেকটা কারুপণ্য। যা দেখে মুগ্ধ উৎসবে আগত ক্রেতা-দর্শনার্থীরা।

নারী কারুশিল্পীদের উপযুক্ত পরিবেশ ও সুযোগসুবিধা দিলে তারাও যে তাদের প্রতিভার স্বাক্ষর রাখতে পারেন, সোনারগাঁয়ের লোকজ উৎসব তার উৎকৃষ্ট উদাহরণ।


শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা