থ্যালাসেমিয়া সচেতনতা
আসমাউল হুসনা
প্রকাশ : ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ১৫:৪১ পিএম
পায়ে হেঁটে রক্তদানে উৎসাহ প্রদান করছেন ভারতের আলমগীর খান ছবি : লেখক
‘রক্তদান জীবনদান’ মূলমন্ত্রে উজ্জীবিত হয়ে থ্যালাসেমিয়া প্রতিরোধে সচেতনতায় পদযাত্রা শুরু করেছেন ভারতের আলমগীর খান। গন্তব্য বাংলাদেশের ঢাকা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার। বিষয়টি অবাক করা হলেও ৩০৫ কিলোমিটারের এই দূরত্বে পায়ে হেঁটে রক্তদানে উৎসাহ প্রদান করছেন তিনি। পেশায় তিনি একটি প্রাইভেট হাসপাতালের সিইওর পাশাপাশি কাজ করছেন অসহায় মানুষের জন্য। ২০১৭ সালে প্রতিষ্ঠা করেছেন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘মালদা ব্লাড আর্মি’।
কেন এমন সিদ্ধান্ত নিলেন আলমগীর খানÑ এ প্রশ্নের উত্তরে জানান, ‘করোনাকালীন সময়ে থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত রোগীদের রক্তের জন্য আর্তনাদ খুব কাছ থেকে দেখেছি। এ ছাড়াও রক্তের অভাবে মারা যেতে দেখেছি কলেজের একজন সিনিয়র দাদাকে। সেই থেকে রক্তদানে উদ্বুদ্ধ হই, নিজে রক্তদান করি এবং অন্যকে উৎসাহ প্রদান করি। আর থ্যালাসেমিয়া যেহেতু একটি জিনঘটিত বংশগত রোগ, তাই সচেতনতাই এটি প্রতিরোধের একমাত্র পথ। সে লক্ষ্যেই চেষ্টা করছি মানুষকে খুব কাছ থেকে বোঝাতে। সেক্ষেত্রে হেঁটে হেঁটে মানুষের কাছে যাওয়া সবচেয়ে সহজ বলে আমি মনে করি।’
ভারতীয় নাগরিক আলমগীর খান বসবাস করেন মালদা জেলার কালিয়াচকে। বর্তমানে স্বামী বিবেকানন্দ বিশ্ববিদ্যালয়ে হাসপাতাল এডমিনিস্ট্রেশন নিয়ে মাস্টার্স করছেন তিনি। এর আগেও ভারতে থ্যালাসেমিয়া প্রতিরোধে দুটি সচেতনতামূলক বাইক র্যালি করেন তিনি। বাইক র্যালিতে তেমন কোনো সাড়া না পেয়ে শুরু করেন পদযাত্রা। ২০২২ সালের মার্চ মাসে ৪৬ দিনের পদযাত্রায় ৪টি রাজ্যের ২৩টা জেলার মানুষদের বোঝাতে বোঝাতে পৌঁছান কলকাতা থেকে দিল্লি কেন্দ্রীয় সরকারের নিকট পেশ করেন ডেপুটেশন। বিয়ের পূর্বে থ্যালাসেমিয়া টেস্ট ও নবম-দশম শ্রেণির পাঠ্যবইয়ে থ্যালাসেমিয়া সচেতনতামূলক কর্মসূচি বাধ্যতামূলক করাই ছিল এই ডেপুটেশনের মূল বিষয়।
একই বছর জুলাইয়ে মালদা থেকে হাওড়া ১৩ দিনে ৩৩০ কি.মি. সচেতনতামূলক পদযাত্রা করেন তিনি। গত ৮ ফেব্রুয়ারি বারাসাত উত্তর ২৪ পরগনা থেকে বাংলাদেশের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করেন তিনি। ভারত থেকে বাংলাদেশে আসার কারণ জানতে চাইলে আলমগীর খান বলেন, ‘পৃথিবীতে বাংলাদেশ ও ভারতের কিছু অংশ কেবল বাংলা ভাষাভাষীর মানুষ বসবাস করেন। আমার মাতৃভাষাও বাংলা। দেশ ভিন্ন হলেও ভাষাগত দিক দিয়ে আমরা এক। বলতে পারেন অনেকটা বাংলা ভাষার টানেই এপার বাংলায় আসা।’
জনসচেতনতামূলক এ কাজে আলমগীর কুড়িয়েছে বাংলাদেশের মানুষের ভালোবাসা। আর এই দীর্ঘ যাত্রাপথে পাশে পেয়েছেন ব্লাড ব্যাংক ৯/১১বিডি, পজিটিভ ঢাকা, রক্তবন্ধু, ইচ্ছাপূরণ, যশোর ব্লাড ব্যাংক, মানবিক নড়াইল, রক্তের সন্ধানে বাংলাদেশসহ এ দেশের নানা স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন।
কেবল থ্যালাসেমিয়া প্রতিরোধে সচেতনতা বৃদ্ধিই নয়, সম্প্রতি ২০২৩ সালের জানুয়ারি মাসে মালদা স্টেশন রোডে বি-টেক চা-ওয়ালা প্রতিষ্ঠা করেও ব্যাপক সাড়া ফেলেন তিনি ও তার বন্ধু। মূলত সার্টিফিকেট থাকার পরও যোগ্য চাকরি না পেয়ে বেকারত্বের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতেই তাদের এমন উদ্যোগ।
থ্যালাসেমিয়ামুক্ত পৃথিবীর স্বপ্ন দেখা আলমগীর খান ৮ ফেব্রুয়ারি সকাল ১০টা ৪০ মিনিট নাগাদ বারাসাত থেকে যাত্রা শুরু করে ১০ ফেব্রুয়ারি বেনাপোল হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেন। ১১ ফেব্রুয়ারি যশোর পৌঁছান তিনি এবং যশোর হাসপাতালে রক্তদান কর্মসূচি করেন। ১২ ফেব্রুয়ারি যাত্রাবিরতি দিয়ে যশোর থেকে নড়াইল ৩৫ কি.মি. পথ অতিক্রম করেন। সেখান থেকে ১৪ ফেব্রুয়ারি লোহাগড়া পৌঁছান। লোহাগড়া থেকে মকসুদপুর, ভাঙ্গা, মাওয়া হয়ে ২১ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় পৌঁছাবেন। ২১ ফেব্রুয়ারি শহীদ ভাষা দিবসে ’৫২-র ভাষাসৈনিকদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে পদযাত্রা সমাপ্ত করবেন বলে জানিয়েছেন।
২১ ফেব্রুয়ারি যাত্রা সমাপ্তির উদ্দেশ্য সম্পর্কে জানতে চাইলে আলমগীর খান বলেন, ‘২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। আর বাঙালি জাতিই একমাত্র জাতি, যারা ভাষার জন্য জীবন দিয়েছেন। তাদের এই ত্যাগের বিনিময়ে আমাদের মাতৃভাষা পেয়েছে স্বীকৃতি। তাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতেই আমি কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে যাত্রা সমাপ্ত করব।’