ক্যানসার লড়াকু জেসমিন
হৈমন্তী শুক্লা
প্রকাশ : ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ১২:১৮ পিএম
আপডেট : ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ১৪:৩৫ পিএম
নিজের ছাদবাগানে ক্যানসার লড়াকু জেসমিন পারভীন
জেসমিন পারভীন সীমার সকাল শুরু হয় গাছের সঙ্গে। নিজের করা ছাদবাগানে গাছের পরিচর্যা, ফসল সংগ্রহ ইত্যাদি তার নিত্যদিনের কাজ। বাগানের বেশির ভাগ গাছই ঔষধি। বিশেষ করে ক্যানসার প্রতিরোধে কার্যকর ভূমিকা রাখে এমন গাছ রয়েছে অসংখ্য। স্নিগ্ধ সতেজ বাগানটি গড়ে তোলার পেছনে রয়েছে কষ্টজড়িত এক ধূসর গল্প।
জেসমিন পারভীন একজন ক্যানসার লড়াকু। ২০১৬ সালে ক্যানসার ধরা পড়ার পর শুরু হয় নতুন যুদ্ধ। চিকিৎসক তাকে কীটনাশক ও রাসায়নিক সারমুক্ত খাবার গ্রহণের পরামর্শ দেন। জেসমিনের বাগানের শখ ছিল আগে থেকেই। নিরাপদ খাবার গ্রহণের তাগিদে সেই শখ পরিণত হয় নেশায়। শুরু করেন জৈবপ্রযুক্তিনির্ভর, কীটনাশকমুক্ত চাষ। প্রতিদিনের বাংলাদেশকে তিনি বলেন, ‘২০১৬ সালে আমার ব্লাড ক্যানসার ধরা পড়ে। ডাক্তারদের পরামর্শ অনুযায়ী লাইফ স্টাইল পরিবর্তন করেছি। বিশেষ করে নিরাপদ খাবারটা নিশ্চিত করার চেষ্টা করে যাচ্ছি। প্রতিদিন যে সবজি লাগে যেমন, মরিচ, শাক , টমেটো, বেগুন, ঢেঁড়স এগুলো অল্প পরিসরে ছোট জায়গায় এবং সম্পূর্ণ কীটনাশকবিহীন ভাবে চাষ করে সফল হয়েছি।’
বাগানে রয়েছে বিরল প্রজাতির দেশি-বিদেশি ঔষধি গাছ। যেমন- লাল রঙের ক্যানসার প্রতিরোধী শিম। দুই জাতের টিন ফল, বিভিন্ন রকম বেসিল- সবগুলোয় রয়েছে ক্যানসার প্রতিরোধী গুণাবলি। এ ছাড়াও রয়েছে ননীফল। জেসমিন পারভীন জানান, ১৪৪টা ঔষধি উপাদানসমৃদ্ধ ননীফল অ্যান্টি ক্যানসার ও অ্যান্টি অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ। বহুবিধ রোগের ওষুধ হিসেবে ব্যবহার হয় এর ফল ও পাতা। ক্যানসার রোগীরা এলে এই ফল উপহার হিসেবে দেন তিনি।
গাছের মাটি তৈরি থেকে শুরু করে, পোকা নিধনের কাজটাও তিনি করেন একেবারে জৈবিক উপায়ে। তিনি বলেন, গাছের পোকার আক্রমণ হলে নিমপাতা, ছাই, মেহগনি ফলের রস স্প্রে করেন। আর মাটির তৈরির জন্য ফেলে দেওয়া সবজির খোসা, চিটাগুড়, লিকুইড ওয়েজডি কম্পোজার, বিভিন্ন উপকারী ব্যাকটেরিয়া মাটিতে ধাপে ধাপে প্রক্রিয়াজাত করে তৈরি হয় মাটি।
জেসমিন পারভীন পড়াশোনা করেছেন মৃত্তিকা বিজ্ঞানে। কলেজে অধ্যাপনা করেন। মৃত্তিকা বিজ্ঞানে পড়ার জন্য কাজটি তার আরও সহজ হয়েছে। এই কাজে তাকে সাহায্য করেন তার স্বামী ও সন্তানরা।
জেসমিন জানান, শুধু নিজের প্রয়োজনে নয়, ক্যানসার আক্রান্তদের মাঝেও এসব বিনামূল্যে বিতরণ করেন। কেউ ছাদবাগান বা বারান্দা বাগান করতে চাইলে গাছ দিয়ে সাহায্য করেন। তিনি বলেন, ‘আমার কাছে একটা অন্য রকম প্রশান্তির জায়গা হচ্ছে গাছ। বাগানে এলে মনে হয়, আমি পৃথিবীর জন্য কিছু করে যেতে পারছি। প্রতিদিনই শুনছি, কেউ না কেউ আক্রান্ত হচ্ছেন, কারও ক্যানসার রিলাপস করেছে, কেউ মারা যাচ্ছে সব সময় একটা ডিপ্রেশন কাজ করত, আমার কখন কী হয়ে যাবে। সেই জগৎ থেকে বের হয়ে আসাতেও এটা আমাকে সাহায্য করছে।
বারান্দাতেও রয়েছে তার অসংখ্য গাছ। তিনি মনে করেন, সুস্থ জীবনের জন্য রাসায়নিক সার ও কীটনাশকমুক্ত খাবার উৎপাদন এখন খুব জরুরি। বলেন, ‘আমি শারীরিকভাবে অসুস্থ। আমি যদি পারি জৈব উপায়ে বিষমুক্ত খাবার উৎপাদন করতে। তবে অন্যরা কেন নয়? তরুণ কৃষি উদ্যোক্তাদের বলব- মানুষের জন্য, দেশের জন্য তারা যেন নিরাপদ খাবার উৎপাদনে এগিয়ে আসেন।’