রাফিয়া তাহসিন ইথকা
প্রকাশ : ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ১১:৩০ এএম
আপডেট : ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ১১:৫০ এএম
প্রচ্ছদটি এঁকেছে ঘুঙুর বন্ধু তৃয়াশা সরকার। সে মিরপুর ক্যান্টমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী।
হঠাৎ ঘুমটা ভেঙে গেল। মনে করেছিলাম সকাল ১০টা বেজে গেছে। কিন্তু ঘড়িতে দেখলাম কেবল ভোর ৬টা। এত ভোরবেলায় আমার ঘুম কখনোই ভাঙে না। আজ ভেঙে গেল। আরেকটু ঘুমানোর চেষ্টা করলাম, কিন্তু ঘুম আর কিছুতেই এলো না। এমনিতেই প্রতিদিন ভোর থেকে শুরু হয়ে যায় নানানরকমের পাখির কিচিরমিচির, কলকাকলি। মোরগও জোরে জোরে ডাকতে থাকে। আজ যেন পাখিদের ডাক শুনতে পাচ্ছি না। চারপাশের পরিবেশটা কেমন যেন নিস্তব্ধ হয়ে আছে। শুধু ঠান্ডা হাওয়া আর বাতাসটা অনেক ভারী হয়ে আছে বলে মনে হচ্ছে। কিছুক্ষণ পর মনে হলো হায়! হায়! আজকে তো একুশে ফেব্রুয়ারি। এই দিনের কারণেই তো আমরা বাংলা ভাষাকে আমাদের রাষ্ট্রভাষা হিসেবে পেয়েছিলাম। এই দিনটাই ভুলে গেলাম! তখনই মনে পড়ল আজ তো স্কুল থেকে প্রভাতফেরিতে নিয়ে যাওয়া হবে। আমাকেও যেতে হবে। তাড়াতাড়ি বিছানা থেকে উঠে মাকে গিয়ে বললাম আমাকে হালকা নাশতা দেওয়ার জন্য। হাতমুখ ধুয়ে স্কুলের পোশাক পরে হালকা নাশতা করলাম। এরপর মায়ের সঙ্গে স্কুলে গিয়ে প্রভাতফেরিতে অংশ নিলাম। শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনে শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করলাম। এরপর আমাদের নিয়ে যাওয়া হলো শিল্পকলা একাডেমিতে। একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল। একে একে শুরু হলো গান, কবিতা আবৃত্তি ও মঞ্চনাটক। খুদে অনেক প্রতিযোগীও অংশ নিয়েছিল। বিশেষ করে যখন মঞ্চনাটক শুরু হলো তখন আমার মনে হচ্ছিল, আমি যেন ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারিতে সেই ঐতিহাসিক ঢাকার রাজপথে দাঁড়িয়ে আছি। পুলিশ গুলি চালাচ্ছে। চারদিকে রক্তাক্ত অবস্থা। কিন্তু সবার মুখে একটিই স্লোগান-
‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই/রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই।’
মঞ্চনাটক দেখতে দেখতে কখন যে চোখে পানি চলে এলো বুঝতেই পারলাম না। মঞ্চনাটক শেষ হলো। সবাই যখন হাততালি দিচ্ছিল, তখন মনে হচ্ছিল রফিক, সালাম, বরকত, জব্বারও সবার সঙ্গে হাততালি দিচ্ছেন। বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা দিতে বহু বাঙালি জীবন বিলিয়ে দিয়েছেন। ফলে অনেক মায়ের কোল খালি হয়েছে, অনেক বোন ভাইহারা হয়েছেন। বাংলা মায়ের দামাল সন্তানরা নিজেদের কথা না ভেবে মাতৃভাষা বাংলাকে সবার ওপরে স্থান দিয়েছেন। সত্যিই তাঁদের অবদান ভুলবার নয়।
সপ্তম শ্রেণি
সরকারি প্রমথনাথ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, রাজশাহী