প্রেমের অণুগল্প
সায়কউজ্জামান
প্রকাশ : ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ১২:৪২ পিএম
আমরা হিমালয়কে জয় করতে পেরেছি কিন্তু প্রকৃত অর্থে নিজের অস্তিত্বকে স্থায়ী করতে পারিনি কখনই। আমিও আরোহীরূপে জয় করেছিলাম অপার্থিব অনুভূতির এক হিমালয়।
বৈশাখের সূর্যের মতো আমার তীব্র ক্রোধ হয়তো গ্রহণ করতে পারেনি সে, ফলে গড়িয়ে পড়েছি জলধারার মতোই। আমি জলধারা হয়ে মিশেছি সব নদীতে, ঘুরেছি অনেক শাখা, কিন্তু জয়ের স্বাদ পাইনি আর কখনই।
গহিন থেকে উঠে দাঁড়িয়ে বারবার আমি চেষ্টা করেছি তাকে জয় করতে। আমি চেষ্টা করেছি, নিজের সবটা অকৃপণভাবে ঢেলে দিয়েছি, কিন্তু তার অভিমানী চোখ যেন দেখতেই চায়নি কুয়াশা কাটানো উষ্ণ কিরণ, কখনই অনুভব করতে চায়নি মলিন উষ্ণতা। পক্ষান্তরে সে নতুন জয়ীকে খুঁজে নেওয়াকেই শ্রেয় বলে ধরে নিয়েছে।
হয়তো সে ঠিক, যে জয়কে রক্ষা করতে পারে না তাকে আদৌ বিজয়ীর কাতারে আসন দেওয়া যায়? সেও পরাজিত, বরং তার পরাজয়ের বোঝা আরও বেশি ভারী। সেই দৃষ্টিকোণ থেকে আমি এক ব্যর্থ আরোহী, যে জয় করেছিল গিরিসংকটভরা হিমালয়, চড়েছিল তার চূড়ায়। তবে স্থায়ী হয়ে ওঠেনি সে বিজয়।
অনুতাপের বর্শা যেন প্রতি নিঃশ্বাসে একবার করে ভেদ করে যায় অপরাধবোধে ভরা এই হৃদয়; প্রতিটি নিঃশ্বাস যেন ধিক্কার জানিয়ে প্রশ্ন করে, ‘কেমন আরোহী তুমি, পড়ে গিয়ে উঠে দাঁড়াও না!’ আমি বারবার চেষ্টা করেছি উঠে দাঁড়াতে, পুনরায় তাকে জয় করতে, কিন্তু আমার শ্লথ দেহ আর বিধ্বস্ত হৃদয় যেন তার দাম্ভিকতার কাছে আগেই পরাজয় স্বীকার করেছে।
ধীরে ধীরে হয়তো তার চূড়ায় নিজের নামের পতাকা ওড়ানোর স্বপ্ন লোপ পাবে। ভীতু আমি হয়তো আবার পড়ে যাওয়ার ভয়ে কখনই উঠে না দাঁড়িয়ে নিজেকে সান্ত্বনা দেব যে, ‘কিছু অপেক্ষিত চাওয়া পূর্ণিমারাতের বৃষ্টি দেখার মতোই অস্পৃশ্য থেকে যায়, এই চাহিদারা হয়তো আত্মম্ভরী। অবশ্য এই আত্মম্ভরিতা নিয়ে কোনো অভিযোগ নেই, বরং আহৃত না হওয়ার মাঝে আছে এক অন্যরকম আসক্তি। আহৃত হলেই তো আকাঙ্ক্ষার মৃত্যু, সঙ্গে কল্পনারও। তার থেকে ভালো কল্পনায় বাস্তব আঁকি এবং পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা নিয়ে বাঁচি।’
মিরপুর, ঢাকা