প্রেমের অণুগল্প
ইসরাত জাহান
প্রকাশ : ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ১২:৩৮ পিএম
সকালের নাশতা খেতে খেতে প্রায় আকাশচুম্বী ফ্ল্যাটের জানালায় চোখ রাখি। হাতিরঝিলের ঝকঝকে রোদমাখা রাস্তায় ছুটে চলা গাড়িগুলো দেখি। আর আনমনে বিগতদিনের স্মৃতিগুলো রোমন্থনের চেষ্টা করি। তেলচিত্রের মতো পরিপাটি, আটপৌরে জীবনের নিচে চাপা পড়ে থাকে অনুক্ত, অনুচ্চারিত কিছু কথা, আমার কথা, আনীলার কথা।
রবিন সকালে ফোন করে জানায় খবরটা। ভেতরটাকে নাড়িয়ে দিলেও প্রকাশ করার সুযোগ ও সাহস পাই না। যেহেতু বিচ্ছেদের হেতুটা আমিই ছিলাম। পুরোনো সেই চিঠিটা আবার খুলি।
সেদিন বাসে ওঠার সময় আনীলা আমার হাতে চিঠিটা দিয়ে বলেছিলÑ
আমি চলে যাওয়ার পর তুমি ওটা পড়বে।
বাসটা আমার চোখের সীমানা থেকে হারিয়ে যাওয়ার পর চিঠিটা খুলি। গোটা গোটা নীল কালির অক্ষরগুলোকে এক-একটি নীল অপরাজিতার পাপড়ি মনে হয়েছিল তখন।
অনিন্দ্য
আমাদের গল্পের শুরুটা আবারও নতুন করে শুরু হতে পারত, কিন্তু হলো না। কখনও কখনও নতুন করে আবার গল্প শুরু করতে ইচ্ছে করে না। অলসতা অথবা অবহেলা। আচ্ছা, নাÑ সম্বন্ধের শব্দগুলো অ অক্ষর দিয়ে শুরু হয় কেন? অবহেলা, অনাদর, অনাচার...
আমি চলে যাচ্ছি, আর কখনও দেখা হবে না আমাদের। সামনের সপ্তায় আমার বিয়ে। ভদ্রলোক যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী। বউকে সঙ্গে নিয়েই উড়াল দেবেন। ঢাকায় হয়তো আর ফেরা হবে না। তোমার অ্যাকোয়ারিয়ামের মাছগুলোকে খাবার দেওয়া হবে না। তেমার প্লেটে খিচুড়ি, ডিম ভাজি খাওয়া হবে না। অনেক ‘না’কে সঙ্গে নিয়ে আমি হারিয়ে যাব তোমার কাছ থেকে। মনে হয় ওটাই আমাদের নিয়তি ছিল। আমি বন্ধন চেয়েছিলাম, তুমি চেয়েছিলে কৈফিয়তবিহীন জীবন। তাই আমাদের একসঙ্গে বুড়ো হওয়া হলো না। তুমি বলেছিলে, সব প্রেমের মৃত্যু হয় বন্ধনে। তাইতো, আমাদের দুজনের দেহরসের নির্যাস থেকে অঙ্কুরিত শৈল্পিক রক্তপিণ্ডটিকে নিজের সিদ্ধান্তে হত্যা করলাম। তোমাকে মুক্ত করে দিলাম, আমার ভালোবাসাটুকু আমার কাছে রেখে।
তোমার কাছে আমার কিছু গোপন পদ্ম রয়ে গেল প্রিয়, ওগুলো যত্নে লালন কোরো। সংগোপনে...’
আনীলা
১৪.০২.২০১৩
চিঠিটা পড়া শেষে চোখ আটকে যায় তারিখের কাছে। আজ থেকে ঠিক ১০ বছর আগে এই দিনে আনীলা আমার হাতে চিঠিটা দিয়ে হারিয়ে গিয়েছিল; আজ পৃথিবী থেকে। রেখে গেল কিছু স্মৃতিÑ ছায়ার মতো, যা আর ছোঁয়া হবে না কখনই।
মহাখালী, ঢাকা