প্রেমের অণুগল্প
আবু রায়হান ইফাত
প্রকাশ : ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ১২:২৯ পিএম
পাবলিক বাসের ঝড়ঝাপটা কাটিয়ে শাহবাগ থেকে সন্তর্পণে এগিয়ে যাচ্ছি টিএসসির দিকে। যান্ত্রিক শহরে গাড়ির হর্নের শব্দ থেকে কিছুটা সময়ের জন্য মুক্তি পেতে গন্তব্য টিএসসি হয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে।
শীতটা সবে কেটে উঠেছে। ফাগুনের বিকালে সূর্য হেলে পড়েছে পশ্চিমাকাশে। কিছু গাছ থেকে ঝরে পড়ছে পাতা। দক্ষিণা বাতাস ছুঁয়ে যাচ্ছে গা।
মাঝে মাঝেই এদিকে আসা হয়। আজও তেমনি। শাহবাগ থানা ক্রস করেছি কেবল। হঠাৎ পেছন থেকে ডাকÑ ‘ইফাত, ইফাত শুনছো?’
পেছনে তাকিয়ে কিছুটা চমকে থ হয়ে রইলাম কয়েক সেকেন্ড। হঠাৎ দেখা, তা-ও অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে। ঠিক দুই বছর ২২ দিন পর।
চিরচেনা মানুষটিকে বহুদিন পর দেখে অবাক লাগল বড্ড। একটা সময় যে মানুষটিকে ঘিরে জন্ম নিয়েছিল অজস্র স্বপ্ন। ভালোবাসার অতলসমুদ্রে ভেসে বেড়িয়েছিলাম দুজনই।
ভুলটা আমারই ছিল। অগোছালো জীবনযাপন। বন্ধুবান্ধবের আড্ডাতেই মজে থাকতাম। কয়টা মেয়েই এমন মানুষকে আগলে রাখবে। তার দিক থেকে সে চেষ্টা করেছিল অগোছালো আমাকে বদলাতে। কিন্তু ব্যর্থ হয়ে ছেড়ে দিয়েছিল হাল। যার ফল বিচ্ছেদ।
এরপর সময় কেটে যায় বহু। আমি চেষ্টা করেছিলাম তাকে ফেরাবার। ভালোবাসতাম খুব। প্রিয়মানুষটিকে হারানোর সেই যন্ত্রণা বয়ে বেড়াচ্ছি আজও। ফুলার রোড, কলাভবন আর বেইলি রোডের স্মৃতিগুলো আঁকড়ে আছে ভীষণভাবে।
নিষ্পলক তাকিয়ে থাকতে দেখে কাঁধে স্পর্শ করে বলল, কেমন আছো?
আমি ঘোর থেকে ফিরে আসি। আগেকার সেই মানুষটি বদলেছে খুব। মাস্টার্স শেষ করে সবে চাকরিতে জয়েন করেছে। ইস্কাটনে অফিস। প্রতিদিনই এ পথে যাতায়াত। রিকশা না পেয়ে আজ হেঁটে যাবে টিএসসি পর্যন্ত। সেখান থেকে রিকশায় আজিমপুর।
বললাম, চলো উদ্যানে যাই। সেও রাজি হলো। গল্পে গল্পে শিখাচিরন্তনের পাশে ছোট্ট টিলায় গিয়ে বসলাম। জায়গাটি আমাদের হারিয়ে যাওয়া ভালোবাসার সহস্র স্মৃতির সাক্ষী।
গল্পে গল্পে কেটে যায় অনেকটা সময়। ভালোবাসার মানুষটিকে কাছে পেয়ে বড্ড ইচ্ছে করছিল তাকে স্পর্শ করার। কিন্তু অধিকার তো হারিয়েছি বহুদিন আগে। তবু সাহস করে তার হাত স্পর্শ করলাম। চোখ বন্ধ করে কাঁধে মাথা রাখতে যাব, তখনই ঝটিকা ধাক্কায় চোখ খুলে দেখি পাশের মানুষটি অন্য কেউ। রাগান্বিত স্বরে বলল, ‘বিলাপ বকে চলেছেন, ঘোর কেটেছে? নেশা বেশি হয়েছে নাকি?’
ধানমণ্ডি, ঢাকা