প্রেমের অণুগল্প
মুহম্মদ আল-আমীন
প্রকাশ : ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ১২:২৩ পিএম
তোর সংসার করি কী পানু এ জীবনে? মোর জীবনটা ত্যানা ত্যানা করি দিলু। দুইটা ছাওয়া, তার ওপর আরও একটা প্যাটোত ধরাইছে!
-বলে ফুঁপিয়ে কাঁদছে জরি।
চুপ করবু! মাইর কি কম হইছে? গতর খাটে যা পাও, সোগ বাজার করি আনো। একনা সবুর কর। একটে কথা কইছো, রডের কাম। যদি পাও, তাইলে চিন্তা নাই। আর ছাওয়া পোয়া নিয়া খবরদার ফালতু কতা কবু না। আল্লায় দেছে, খাওয়াইবেও আল্লায়।
মুই রিকশা নিয়া বেড়ানু। রান্দি খাইস। না খায়া থাকিস না।
বলে রিকশার প্যাডেলে পা দিলাম।
রায়েরবাজার, পাবনা হাউস গলি। ফাল্গুন মাস। সকালের রোদে তেজ নেই। শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধের বিস্তর এলাকায় নয়ন জুড়ানো শিমুল হাসছে।
আজ নাকি ভালোবাসা দিবস। মাঝেমধ্যে ভাবি, ভালোবাসতে দিবস নাগে? জরি রে কি মুই ভালোবাসো? তাইলে পেটাও কেন?
সন্ধ্যা নামছে।
প্রশ্নগুলো মাথায় নিয়ে রিকশা চালিয়ে শরীর ক্লান্ত।
গলির মুখে দুইটা ছোট মেয়ে গোলাপ ফুল নিয়ে বসেছে। লাল গোলাপ। একটা ১০ টাকা। দুইটা ১৫ টাকা।
দুইটা কিনলাম জরির জন্য। এই বয়সে এসব বাচ্চারা দেখলে হাসবে। তাই ভেবে ইচ্ছা করেই সন্ধ্যা গাঢ় করে বাসায় ফিরলাম।
একটা লাল শাকের আঁটি, দুই কেজি চাল কিনেছি। সকালে যে পেটাইছি, পিঠ তো চিরে গেছে অবশ্যই। রমিজের দোকান থেকে কয়েকটা ওষুধও তাই নিয়েছি।
এই শরীরেও রান্না করেছে জরি। আলু ভর্তা করে রেখেছে। ঘরে ক্লান্ত শরীরে শুয়ে আছে। মেয়ে দুইটা কোথায় যেন গেছে। আমাকে দেখে উঠে বসার চেষ্টা করে।
অনুতপ্তের স্বরে ওষুধগুলো এগিয়ে দিয়ে বললাম, রাগের মাথায় গায়ে হাত দিছি রে। মাফ করি দেইস।
অবাক তাকিয়ে আছে জরি। টলমল চোখ নিয়ে কিছু বলতে চেয়েও পারছে না।
গোলাপগুলো সামনে এগিয়ে দিয়ে বললাম, জরি, এই নে ভালোবাসার লাল গোলাপ। বিয়ার পর কতদিন হইল, আমারে আদর কইরা কইস না `ভালোবাসি’।
চোখের জল মুছতে মুছতে গোলাপগুলো হাতে নেয়। মুচকি হেসে বলে, হইছে, মাইরবার সময় মনে থাকে না? এই বয়সে এত পিরিতের দরকার নাই। হাত-মুখ ধুইয়া আইসো। খাবার দেও তোমাক।
হাসিমুখে একবার আমার দিকে তাকাচ্ছে, আরেকবার ফুলের দিকে তাকাচ্ছে জরি।
আফতাবনগর, ঢাকা