প্রচ্ছদ
ফাতেমা তাসনিম
প্রকাশ : ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ১৩:৫৩ পিএম
আপডেট : ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ১৫:১৫ পিএম
মডেল : আইরিন ও মঞ্জুর; পোশাক : বিশ্বরঙ; মেকআপ: রেড বিউটি স্টুডিও অ্যান্ড সেলুন; ছবি : ফারহান ফয়সাল
চলে যাচ্ছে তীব্র শীতের দিনগুলো। গাছের ঝরাপাতা আর আগুনরাঙা পলাশ জানান দিচ্ছে দুয়ারে ফাল্গুন। ঋতুরাজ বসন্ত বরণে প্রস্তুত প্রকৃতি। রঙের ছোঁয়া লাগতে শুরু করেছে সবার মনে। এ উৎসব রাঙিয়ে তুলতে প্রস্তুত ফ্যাশন হাউসগুলোও।
বাতাসে বসন্তের মিষ্টি আমেজ। কী হাড়কাঁপুনে শীতই না ছিল এ ক’দিন। সব যেন জুবুথুবু হয়ে গুটিয়ে পড়েছিল সেই দাপুটে শীতের পায়ের কাছে। লেপের নিচের ওম ছেড়ে ওঠার মন ছিল না কারওরই। সোয়েটার, মাফলার, শাল, কানটুপি, মোজা, ওভারকোট ইত্যাদি গরম জামাই ছিল এত দিনের সম্বল। তবে এখন শীতের সঙ্গে যেন রীতিমতো যুদ্ধে জিতে প্রকৃতিতে ঘটছে বসন্তের আগমন। চারিদিকে তারই আগমনী গান। ঠিক যেমনটা খুঁজে পাওয়া যায় গানের কথা ও সুরে- বাতাসে বহিছে প্রেম, নয়নে লাগিল নেশা, কারা যে ডাকিল পিছে, বসন্ত এসে গেছে...
শুধু কি আর বসন্ত? তা তো নয়! এই যে প্রথম চরণেই লেখা আছে পুরোটা। ‘বাতাসে বহিছে প্রেম…’, হ্যাঁ, সঙ্গে আসছে ভালোবাসা দিবসও। শুধু বনে বনে নয়, মানুষের মনেও ভালোবাসার রঙ ছড়িয়ে দিতে এসেছে এই মাস। পহেলা ফাল্গুনের সঙ্গে সঙ্গে আসছে ১৪ ফেব্রুয়ারি। ভালোবাসা দিবস। শুধু প্রকৃতিতেই নয়, রঙের ছটা আসছে পোশাকেও। বসন্ত ও ভালোবাসা দিবসকে সামনে ফ্যাশন হাউজগুলো হাজির হয়েছে নতুন পোশাকের সম্ভার নিয়ে। বড় বড় ব্র্যান্ড শপ থেকে বুটিক দোকান সর্বত্রই মিলছে বসন্ত ও ভালোবাসার নতুন পোশাক। এসব পোশাক তৈরিতে নজরে রাখা হচ্ছে ক্রেতার চাহিদা, সামর্থ্য, বয়সসহ আরও অনেক পারিপার্শ্বিক দিক।
বসন্তের বাসন্তি পোশাক
একটা সময় ছিল, যখন বসন্তের পোশাক বলতে শুধু হলুদ রঙই প্রাধান্য পেত। তবে যুগের সঙ্গে এসেছে পরিবর্তন। একটু চিন্তা করে দেখুন, প্রকৃতি কিংবা ফুলে কি শুধু এক হলুদ রঙই আছে? তবে শুধু হলুদই কেন পাবে প্রাধান্য? এছাড়াও তো রয়েছে কতো রঙ। এই যে ধরুন গাছের পাতার সবুজ, কলা পাতার হালকা সবুজ, শিউলিবোঁটার উজ্জ্বল কমলা আবার নীল বা সাদা আকাশ। ফাল্গুন তাই হতেই পারে সব রঙে একাকার। সেটিই হচ্ছে। বিশ্বরঙের সত্ত্বাধিকারী বিপ্লব সাহা জানান, ফাল্গুন এখন শুধু এক হলুদের মধ্যে নেই। প্রকৃতির সব রঙের উপস্থাপন হচ্ছে পোশাকে। তার অন্যতম কারণ, হরেকরকম রঙের মিশেল এখন পছন্দ করছে সবাই। পোশাকের সঙ্গে সাজেও উঠে আসছে প্রকৃতির রঙ।
সব ছাপিয়ে যদিও হলুদ-বাসন্তি রঙের প্রাধান্য থাকবেই। যেহেতু এখন ফুলের মৌসুম, তাই পোশাকে ফুলেল মোটিফ পছন্দ করবেন অনেকেই। নিজস্ব উইভিং ডিজাইনে সুতি, লিনেন, জর্জেট, সিল্ক ও ভয়েল কাপড়ের সংমিশ্রণে নতুনের ছাপ আনা হয়েছে। পোশাকভেদে অবশ্য নকশার ভিন্নতা হয়েই থাকে। মেয়েদের পোশাকে যেমন কাজ ফুটিয়ে তোলা হয়, তেমনটা পাঞ্জাবি, ফতুয়া কিংবা শিশুদের পোশাকে উঠে আসতে হবে এমন নয়। নকশা করার ক্ষেত্রে হ্যান্ডপেইন্ট, স্কিন পেইন্ট, ব্লক ছাপা ইত্যাদি বেশি আমলে আনছেন নকশাকারেরা। তবে ইদানিং টাই ডাই এবং সুতার কাজও অনেক প্রাধান্য পাচ্ছে।
ভালোবাসার রঙে রাঙানো ভূষণ
বসন্তবরণ তো হলো, এবার আসা যাক ভালোবাসা প্রসঙ্গে। যদিও ভালোবাসার জন্য তো আর দিনক্ষণ লাগে না। ভালোবাসা যায় যখন তখন। তবু নিয়ম মেনে ১৪ ফেব্রুয়ারি আসছে ‘বিশ্ব ভালোবাসা দিবস’। এই দিনে সবাই নিজেকে সাজায় ভালোবাসার রঙেই। আর ভালোবাসার রঙ তো একটাই, তা হচ্ছে লাল। হৃদয়ের লাল রঙেই সেদিন সাজতে পছন্দ করে মানুষ। তাই প্রাধান্য পায় লালের বিভিন্ন শেড।
শুধু লাল পোশাক কেমন যেন বেমানান। কিংবা শুধু এক রঙে খুবই একঘেঁয়ে। তাই সাধারণত লালকে আরও বেশি ফুটিয়ে তুলতে সাথী হিসেবে নীল, নেভি ব্লু, বেগুনি, সাদা, হলুদ, অফ হোয়াইট ইত্যাদি রঙ ব্যবহার করা হয়। এসব রঙ ব্যবহৃত হতে পারে শাড়ির পাড়, আঁচল থেকে শুরু করে কামিজ এবং পাঞ্জাবির হাতায়। এতে বেশ কালার কন্ট্রাস্ট হয়। দেখতেও অনেক ভালো লাগে। আবার পোশাকের রঙে বৈচিত্র্য চান অনেকে। তখন লাল ঘেঁষে বিভিন্ন রঙ, যেমন মেরুন, গোলাপি, ক্রিমসন এসব রঙও উঠে আসে তালিকার শীর্ষে। ভালোবাসা দিবসের পোশাকের সবচাইতে রোমাঞ্চকর ব্যাপার হচ্ছে, যুগল পোশাক। এখন ট্রেন্ডটা খুব চোখে পড়ে। তাই ছেলে এবং মেয়েদের একইরকম পোশাক নকশা করে থাকে ফ্যাশন হাউজ এবং ব্র্যান্ডের নকশাকারেরা। পোশাকগুলো মূলত হয়ে থাকে শাড়ি এবং পাঞ্জাবি। তবে একটু ক্যাজুয়াল লুকের জন্য টপস কিংবা কুর্তির সঙ্গে, ফতুয়া কিংবা টিশার্টের যুগলবন্দিও দেখতে পাওয়া যায়।
উৎসবের সাজ
পোশাকের পরেই মাথায় আসবে, সাজ। পোশাক তো হলো। এবার তবে কেমন করে সাজাবেন নিজেকে তা নিয়ে কথা হোক। দিনের এবং রাতের সাজ পহেলা ফাল্গুন এবং ভালোবাসা দিবস উপলক্ষে অবশ্যই আলাদা হবে। ফাল্গুনের সাজ প্রধানত দিনের। সেক্ষেত্রে এমন সাজ দরকার, যা খুব বেশি জবরজং নয়, বরং স্নিগ্ধ। যদিও ফেব্রুয়ারি মাস চলে এসেছে, তবু শীত শীত আবহাওয়াটা এখনও কেটে যায়নি। তাই ঘেমে প্যাঁচপেঁচে হয়ে মেকআপ উঠে যাওয়ার সম্ভাবনা তেমন নেই। তবে স্নিগ্ধ হলেও আরেকটা বিষয় অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে, তা হচ্ছে রঙের খেলা। এ ব্যাপারে রেডের কর্ণধার ও রূপ বিশেষজ্ঞ আফরোজা পারভীন জানান, বসন্তে প্রকৃতিতে যেমন অনেক রঙ থাকে, তেমনই আমরা চেষ্টা করি সাজেও সেই রঙ ফুটিয়ে তুলতে। স্নিগ্ধতার সঙ্গে সঙ্গে সাজে থাকে বর্ণিল সব রঙ। সেই রঙ ফুটে উঠতে পারে রঙিন সব চোখের সাজ কিংবা ঠোঁটের সাজেও। চুল তো সাজাতে হবে। সব সময় তো আর এলোচুলে থাকা চলে না। তাই চুল সাজাতে দরকার হবে ফুল। বসন্তকাল আর চুল ফুলে সাজবে না, তা কি হয়! অনেকে পহেলা ফাল্গুনে পরতে ভালোবাসেন ফুলের গয়নাও। সে অনুযায়ী ফুলের দোকানগুলো গয়না কাস্টমাইজ করে থাকে। ক্রেতার চাহিদা অনুযায়ী পাবেন বিভিন্ন ফুল। প্রাকৃতিক ফুল দ্রুত নশ্বর। তাই অনেকে শোলার ফুলের গয়নাও বেছে নেন এ দিনে। সেগুলোও ভীষণ সুন্দর এবং সাশ্রয়ী। কিন্তু প্রাকৃতিক ফুলের সৌন্দর্যকে কি আর হার মানানো যায়!
বসন্তের পরই ভালোবাসা দিবস চলে এল। প্রিয় মানুষটির সঙ্গে ঘুরতে যেতে হচ্ছে। বিশেষ সাজ ছাড়া কি আর চলে এ দিনে? এ দিনের সাজকে একটু হালকা রাখাতে পারেন। বসন্তে যেমন অনেক রঙ থাকে, ভালোবাসা দিবসের ব্যাপারটা একেবারেই তা নয়। লাল, গোলাপি এসব রঙেই সীমাবদ্ধ হয়ে যায় সাজও। তাই হালকা সাজ বেছে নিতে পারেন এই দিনে। আর গাঢ় সাজ দিলে সঙ্গে ঠোঁটে গাঢ় রঙের লিপস্টিক নিতেই পারেন। ভালোবাসা দিবসের সাজের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দিক হচ্ছে পারফিউম বা সুগন্ধি। সাজ শেষে সুন্দর সুবাসের সুগন্ধি লাগাতে ভুলবেন না।
আরও পড়ুন: নিমন্ত্রণের সাজে গয়না
কোথায় পাবেন, কেমন দাম
দাম সম্বন্ধে বলতে গেলে প্রথমেই বলতে হয় ফ্যাশন হাউজ এবং লোকাল দোকানের দামের ভিন্নতার কথা। পাইকারি দামে বাজারে যেকোনো ক্রেতার সামর্থ্যের মধ্যেই বিভিন্ন দামে পোশাক পেয়ে যাবেন। আর বিভিন্ন ডিজাইনের পোশাক খুঁজতে ঢুঁ মারতে হবে বিশ্বরঙ, রঙ বাংলাদেশ, খুঁত, আড়ং, দেশাল, বিবিয়ানা, লাল সবুজ, কে ক্রাফট, লা রিভ, সেইলর, অঞ্জনস ইত্যাদি ব্র্যান্ডের দোকানগুলোতে। শাড়ি থেকে কামিজভেদে দামের ভিন্নতা হবে। তবে দাম ২০০০ টাকা থেকে শুরু হয়ে ১৫০০০ অবধি যেতে পারে।