নাফিস আব্দুল্লাহ্ জীয়ন
প্রকাশ : ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ১৫:৩৩ পিএম
এক.
৭০০ মিলিয়ন বছর আগে জুরাসিক যুগে ডাইনোসররা পৃথিবীতে রাজত্ব করত। এরা ইচ্ছেমতো বনে-জঙ্গলে ঘুরে বেড়াত। আর অন্যদের কাছ থেকে কেড়ে নিয়ে এটা-ওটা খেত। মাঝে মাঝে যখন এক ডাইনোসরের সাথে আরেক ডাইনোসরের মারামারি হতো, তখন তাদের চিৎকারে বাকি প্রাণীরা ভয়ে লুকিয়ে থাকত।
দুই.
এদের আচরণ দেখে এই জঙ্গলের ওপর সবাই খুব বিরক্ত থাকত। জঙ্গলে বেশি বৃষ্টি হতো না আর সূর্যের আলো কম আসত। এতে ফল-ফুলের পরিমাণও কমে যাচ্ছিল। কিন্তু একটা সময় এলো, এই ডাইনোসররাই ধীরে ধীরে কেমন যেন ভীতু হয়ে বনে লুকিয়ে থাকতে শুরু করল। কারণ বিভিন্ন গ্রাম থেকে মানুষরা এসে জঙ্গল থেকে নিজেদের ঘর বানাবার জন্য গাছ কেটে নিচ্ছিল।
তিন.
প্রতিদিন শত শত মানুষ এসে গাছ কেটে ফেলছিল। এভাবে অনেক অনেক গাছ কেটে ফেলার পর অক্সিজেন কমে যাচ্ছিল। তাই বনের পাশে যে আগ্নেয়গিরি ছিল, সেটা জীবন্ত হয়ে গেল!
চার.
এমন অবস্থা দেখে বনের সব পশুপাখি খুব ভয় পেয়ে গেল। এরা এক গাছ থেকে আরেক গাছে নিজেদের পরিবারকে লুকিয়ে রাখছিল। এই বুঝি কালকেই তাদের গাছটাও কেটে ফেলে। সবাই শুধু ভাবছে, এখন কী হবে? এদিকে ডাইনোসররা যেহেতু অনেক বড় ও শক্তিশালী, তাই জঙ্গলের সবাই মিলে ডাইনোসরদের রাজার কাছে গেল।
পাঁচ.
বলল, ‘দয়া করে আপনারা কেউ আর ঝগড়া করবেন না। আমাদের সবার একসাথে মিলে আমাদের সবার পরিবারকে বাঁচাতে হবে। আপনারা আমাদের রক্ষা করুন।’ ডাইনোসরদের রাজা সেদিন রাতেই সভা ডাকে। ‘প্রিয় ডাইনোসররা, মানুষরা আমাদের জঙ্গল থেকে অনেক গাছ কেটে নিয়ে গেছে। এতে জঙ্গলে অক্সিজেন কমে গেছে! কিন্তু আমাদের বেঁচে থাকতে তো অনেক অক্সিজেন লাগবে।
ছয়.
আর অক্সিজেন এত কম থাকলে যে কোনোদিন আগ্নেয়গিরি তার লাভা দিয়ে আমাদের সবাইকে মেরে ফেলবে। একটা উপায় বলো সবাই।’ এভাবে সারা রাত চলল সভা! ভোরের দিকে ডাইনোসরদের দলে যে সবচেয়ে বুড়ো আর জ্ঞানী ছিল সে বলল, ‘মহারাজ যদি আমাকে ভরসা করেন তাহলে কয়েকটা ডাইনোসর আমার সাথে দিন। আমি এই সমস্যা সমাধান করে দেব।’ রাজা তাকে দায়িত্ব দিয়ে দিল। সকালে বুড়ো ডাইনোসরের আদেশ অনুযায়ী বাকি ডাইনোসররা কাজে নেমে পড়ল।
সাত.
অ্যাঙ্কিলোসরাস তার লেজের আঘাতে বড় বড় পাথর ভেঙে টুকরো টুকরো করে ফেলল। অন্যদিকে ব্র্যাচিওসরাস তার উঁচু গলার সাহায্যে পাহাড় থেকে বিভিন্ন রকমের গাছের বীজ নিয়ে এলো। এদিকে অ্যাঙ্কিলোসরাসের ভাঙা পাথরগুলো ভেলোকিমাস নিয়ে এলো আর রিওজসরাস জলাশয়ের পাশে সেই পাথর বসিয়ে দিল যেন বৃষ্টির পানি ধরে রাখতে পারে।
আট.
এরপর বীজগুলো মাটিতে পুঁতে দিল। এভাবে তারা সবাই সারা দিন মনোযোগ দিয়ে তাদের কাজ শেষ করল। তাদের এই দারুণ চিন্তা ও একতা দেখে প্রকৃতি খুব খুশি হলো। তাই প্রকৃতি সেদিন রাতেই বৃষ্টি দিল আর পরদিন ভোরে সূর্যের আলোয় গাছগুলো তাড়াতাড়ি বেড়ে উঠতে শুরু করল। এদিকে সকালে সবার ঘুম ভাঙলে সবাই তো ভীষণ অবাক হয়ে গেল! তারা দেখল এক রাতেই তাদের জঙ্গল ঘন জঙ্গল হয়ে গেছে। এরপর থেকে সবাই একসাথে মিলেমিশে থাকত।
ঘুঙুর বন্ধু জীয়ন ঢাকার গবর্নমেন্ট সায়েন্স হাই স্কুলের চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী