× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

সীমানা পেরিয়ে

খাঁচায় বন্দি আফগান নারীজীবন

তানিয়া সুলতানা

প্রকাশ : ২২ জানুয়ারি ২০২৩ ১৩:১৩ পিএম

তালেবানদের মধ্যযুগীয় শাসনব্যবস্থায় আফগানিস্তানের নারীসমাজ খাঁচায় বন্দি পাখির মতো প্রতিনিয়তই ছটফট করে মরছে

তালেবানদের মধ্যযুগীয় শাসনব্যবস্থায় আফগানিস্তানের নারীসমাজ খাঁচায় বন্দি পাখির মতো প্রতিনিয়তই ছটফট করে মরছে

আফগানিস্তানের তালেবান সরকারের অধীনে দেশটির নারীরা কেমন আছে, এই প্রশ্নের সদুত্তর নেই। মোটাদাগে যদি বলি, আফগানিস্তানের নারীরা ভালো নেই। খাঁচায় বন্দি হয়ে আছে তাদের জীবন। 

২০২১ সালের ১৫ আগস্ট তালবানরা যুক্তরাষ্ট্রের মদদপুষ্ট সরকারকে উৎখাত করে ক্ষমতায় বসে। ক্ষমতায় এসে তারা উদারনীতির সঙ্গে দেশ পরিচালনার কথা বলেছিল। কিন্তু সেসব যে শুধুই মুখের কথা ছিল, তা প্রমাণ করতে বেশি সময় নেয়নি তারা।

প্রথমেই তারা বন্ধ করে নারীর উচ্চশিক্ষার অধিকার। প্রাথমিক অবস্থায় ছেলে ও মেয়েদের একই রুমে পর্দার আড়ালে রেখে ক্লাস করার অনুমতি দেয়। এর কিছুদিন পর মেয়েদের মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করে। তবে নারীশিক্ষায় এহেন নিষেধাজ্ঞার পর আন্তর্জাতিক মহলে ব্যাপক সমালোচনার পর তালেবান সরকার সম্প্রতি মেয়েদের জন্য পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত স্কুল ও শিক্ষাকেন্দ্রগুলো শর্ত সাপেক্ষে উন্মুক্ত রাখার নির্দেশ দিয়েছে। সেই শর্তটি হলো, মেয়েদের শ্রেণিকক্ষে পর্দা করতে হবে।

দেশটিতে তালেবান আসার আগে নারীশিক্ষক ছিলেন ৪০ শতাংশের মতো। কিন্তু এখন সেই সংখ্যা হাতে গোনা। একই চিত্র গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানগুলোর ক্ষেত্রেও। আফগান ইনডিপেন্ডেন্ট জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের তথ্যমতে, তালেবানরা ক্ষমতা দখলের পর থেকে আফগানিস্তানের ৪৩ শতাংশ গণমাধ্যম বন্ধ হয়েছে। আর ৮৪ শতাংশ নারী গণমাধ্যমকর্মী চাকরি হারিয়েছেন। 

আফগানিস্তানের বেশিরভাগ চাকরিতে নিষিদ্ধ নারীরা। কভিডের আগে আফগানিস্তানে কর্মজীবী নারীর সংখ্যা ছিল প্রায় ২২ শতাংশ। আর তালেবানরা ক্ষমতা দখলের পর চাকরি হারিয়েছে হাজারো মানুষ; যাদের অধিকাংশই নারী। পর্দা না করার কারণে শাস্তি হতে পারে, এই ভয়ে সাড়ে তিন হাজারেরও বেশি ক্ষুদ্র ও মাঝারি নারী ব্যবসায়ী তাদের ব্যবসা কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছে বলে জানা যায় আফগান উইমেনস চেম্বার অব কমার্সের তথ্যমতে। এ ছাড়াও দেশটিতে নারী বিচারক ছিলেন তিন শতাধিক। তালেবানদের আগমনের পর বিভিন্ন উপায়ে দেশ ছেড়েছেন অধিকাংশই। অল্প যে কয়েকজন পালাতে পারেননি, তারা রয়েছেন আত্মগোপনে। 

দেশটিতে কোনো নারীকে একা বাজারে বা ঘরের বাইরে যেতেও নিষেধ করা হয়। যদিও যায় তবে সঙ্গে থাকতে হবে পরিবারের কোনো পুরুষ সদস্য। দেশটিতে নারীদের পার্ক এবং শরীরচর্চাকেন্দ্রে যেতেও দেওয়া হয়েছে নিষেধাজ্ঞা। চলাচল, চাকরি এবং শিক্ষার স্বাধীনতা হরণের পাশাপাশি আফগানিস্তানের নারীদের নেই মতপ্রকাশেরও অধিকার। ‘নৈতিক অপরাধে’ দোষী সাব্যস্ত করে দেশটিতে ফিরছে নারীদের দোররা মারার শাস্তিও। গেল ডিসেম্বরে এক ব্যক্তির ছেলেকে বিয়ে করতে না চাওয়ায় ওই নারীকে মিথ্যা অপবাদ দিয়ে প্রকাশ্যে দোররা মারার ঘটনা ঘটে। এ ছাড়াও এর আগে দেশটির পূর্বাঞ্চলে লোগার অঞ্চলে ৩ নারীসহ ১২ জনকে প্রকাশ্যে দোররা মারা হয়। পারওয়ান প্রদেশের রাজধানী চারিকরে ৯ জন নারীসহ ২৭ জনকে দোররা মারা হয় বিভিন্ন অপরাধে। 

স্বাধীনতা হরণের কারণে আফগানিস্তানের নারী ও মেয়েদের মধ্যে বেড়েছে মানসিক সমস্যা। সেভ দ্য চিলড্রেনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশটিতে ২৬ শতাংশ মেয়ে ও ১৬ শতাংশ ছেলের মধ্যে বিষণ্নতার লক্ষণ দেখা দিয়েছে। আর উদ্বেগজনিত সমস্যা দেখা গেছে ২৭ শতাংশ নারীর মধ্যে। সে তুলনায় ছেলেদের মধ্যে এ হার ১৮ শতাংশ।

তালেবানদের মধ্যযুগীয় শাসনব্যবস্থায় আফগানিস্তানের নারীসমাজ খাঁচায় বন্দি পাখির মতো প্রতিনিয়তই ছটফট করে মরছে যেন। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নানামুখী চাপের পরও বদলাচ্ছে না পরিস্থিতি। আবার কবে দেশটির নারীরা মুক্তবিহঙ্গের মতো খোলা আকাশে উড়বে, সেই নিশ্চয়তা দিতে পারছে না কেউই। 


শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা