আলাপন
গোলাম কিবরিয়া
প্রকাশ : ১৯ জানুয়ারি ২০২৩ ১৫:৩২ পিএম
এলিজা বিনতে এলাহী
ঐতিহ্যের সন্ধানে দেশের নানা প্রান্ত ঘুরে বেড়ান এলিজা বিনতে এলাহী। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ ভ্রমণ করা এলিজা বিনতে এলাহী সম্প্রতি তার ভ্রমণের গল্প শুনিয়েছেন ‘ঘুরিয়া’কে।
ঘুরিয়া : দেশ-বিদেশে ভ্রমণের প্রতি আগ্রহটা কখন কীভাবে শুরু হলো?
এলিজা : ইতিহাসপ্রিয়তা থেকেই ভ্রমণের প্রতি আগ্রহ তৈরি হয়েছে। বিশ্বজুড়ে প্রত্নতাত্ত্বিক ও ঐতিহাসিক স্থাপনাগুলো মানুষের চিন্তার ফসল- এ বিষয়টি আমাকে ধাবিত ও অনুপ্রাণিত করত ভ্রমণে বের হতে।
ঘুরিয়া : বাংলাদেশে প্রত্নতাত্ত্বিক ট্যুরিজম বিকাশের সম্ভাবনা কতটুকু?
এলিজা : আমি ভ্রমণ করছি আজ প্রায় ২৩ বছর। নিজেকে আমি ভ্রমণপ্রেমী একজন ইতিহাস অনুরাগী, প্রত্নতত্ত্ব অনুরাগী মনে করি এবং সেই অনুরাগের জায়গা থেকেই ভ্রমণে আমার মূল আকর্ষণ থাকে যেকোনো দেশের ইতিহাস জানা, ঐতিহাসিক ও প্রত্নতাত্ত্বিক স্থানগুলো ঘুরে ঘুরে দেখা। ৬৪ জেলা পরিভ্রমণ শেষ হয় ২০১৯ সালে। দ্বিতীয় দফায় বাংলাদেশ পরিভ্রমণের কাজ আবারও শুরু করি ২০১৯ সালে ১ নভেম্বর। যে যাত্রা এখনও অব্যাহত রয়েছে। ইতোমধ্যে বাংলাদেশের দুটি স্থাপনা ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজে স্থান করে আছে, এ কথা আমরা সবাই জানি। আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতায় আমি মনে করি, আরও এ রকম বহু স্থাপনা আছে যেগুলো বিশ্বমানের। আমাদের রয়েছে হাজার বছরের পুরোনো বৌদ্ধ বিহার, সংঘারাম, মেঘালিথ স্তম্ভ, মুঘল আমলের স্থাপনা, মুঘল হাম্মামখানা, মুঘল কামান, সুলতানী আমলের স্থাপনা, বিভিন্ন জল দুর্গ, পর্তুগিজদের তৈরি দুর্গ, ক্ষুদ্র জাতিসত্তা ও তাদের বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতি- যেগুলো ধীরে ধীরে লোকচক্ষুর অন্তরালে চলে যাচ্ছে। প্রয়োজন শুধু রক্ষণাবেক্ষণ, সংরক্ষণ, সেগুলোকে দেখার উপযোগী করা, প্রচার-প্রচারণা, সেই এলাকাগুলোয় আবাসনের ব্যবস্থা, যাতায়াত ব্যবস্থার উন্নতি- সর্বোপরি নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা। শুধু যে ঐতিহাসিক জনপদ আর স্থাপনাগুলো হেরিটেজ ট্যুরিজমের অন্তর্ভুক্ত তা নয়, আমাদের রয়েছে প্রতিটি জেলার খাবার, পোশাক, সংস্কৃতি। সেগুলো অনায়াসে হেরিটেজ ট্যুরিজমের মাধ্যমে জানাতে পারি দেশ ও বিশ্ববাসীকে। তাই আমি মনে করি প্রত্নতাত্ত্বিক পর্যটন বিকাশের দারুণ সম্ভাবনা রয়েছে আমাদের দেশে।
ঘুরিয়া : প্রথম ভ্রমণের স্মৃতি মনে পড়ে?
এলিজা : হায়! সে কথা ভুলব কেমন করে! দেশের বাইরে ১৯৯৯ সালে। প্রথম বিদেশ ভ্রমণ, প্রথম উড়োজাহাজে চড়া। জানা-অজানায় এক অদ্ভুত, কিন্তু সুন্দর অভিজ্ঞতা ছিল।
ঘুরিয়া : যেখানে বারবার যেতে চান-
এলিজা : নিজ দেশে উত্তর বাংলার ১৬ জেলা। কারণ, পুরো উত্তর বাংলাকে আমি হেরিটেজ জোন মনে করি। বিশ্বের সেসব স্থান, যেখানে রয়েছে মানুষের তৈরি প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনাগুলো। সেসব জায়গায় মন বারবার ছুটে যায়।
ঘুরিয়া : আপনার ভ্রমণের অনুপ্রেরণা-
এলিজা : নতুন নতুন ইতিহাস জানা আর নিজেকে সমৃদ্ধ করার লোভই নতুন গন্তব্যে যাওয়ার ক্ষেত্রে অনুপ্রেরণা জোগায়।
ঘুরিয়া : ‘কোয়েস্ট : আ হেরিটেজ জার্নি অব বাংলাদেশ’-এর পরিচয়-
এলিজা : ‘কোয়েস্ট : আ হেরিটেজ জার্নি অব বাংলাদেশ’- আমার কাছে আবেগ, দেশ, শক্তি, সাহস, ইতিহাস, অনুসন্ধান, শিক্ষা, ভ্রমণ, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি। সর্বোপরি, একজন ৪০-এর কোঠা পেরুনো এক নারীর বিনির্মাণের যাত্রা। আমার সমস্ত আবেগ আর কাজ মিশে আছে এই প্রজেক্টে। বাংলাদেশের হেরিটেজ ট্যুরিজম বিকাশে ২০১৬ সালে শুরু হয় কোয়স্টের যাত্রা। ঐতিহ্য ভ্রমণের আর্কাইভ হচ্ছে কোয়েস্ট। কোয়েস্টের দুটো দাবিÑ প্রথমটি প্রতিবছর হেরিটেজ ট্যুরিজম ডে উদযাপন করা সরকারিভাবে আর উত্তর বাংলাকে বাংলাদেশের হেরিটেজ জোন ঘোষণা করা।
ঘুরিয়া : দেশের বাইরে প্রিয় ভ্রমণ গন্তব্য-
এলিজা : গ্রিস, তুরস্ক, মিশর, রোম শহর, নেদারল্যান্ডসে আমি বারবার যেতে চাই।
ঘুরিয়া : ভ্রমণের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে যদি কিছু বলতেন-
এলিজা : ভ্রমণ আমাকে সমৃদ্ধ করেছে। অন্য জাতি, বর্ণ ও ধর্মের প্রতি আমি শ্রদ্ধাশীল হয়েছি। আমার সংকীর্ণতা দূর হয়েছে। একটি জাতি ও দেশের ঐতিহ্য সংরক্ষণের গুরুত্ব আমি ভীষণভাবে উপলব্ধি করেছি। পর্যটন খাতকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য একটি বিষয় জরুরি সেটি হলো- সেই দেশের সাধারণ জনগণ অতিথিপরায়ণ কি-না। সেই ক্ষেত্রে বিশ্ব মানচিত্রে আমরা অতিথিপরায়ণ জাতি হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছি প্রাচীনকাল থেকে। ৬৪ জেলার পরিভ্রমণের সময় আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতাও সে কথা বলে।
ঘুরিয়া : ভ্রমণ নিয়ে আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?
এলিজা : আমৃত্যু ভ্রমণ করতে চাই, ইচ্ছে আছে। ৬৮ জেলার ঐতিহ্য ভ্রমণ অভিজ্ঞতা লিপিবদ্ধ করা ও পৃথিবীর সব দেশ ভ্রমণ করা। ট্রাভেল ডকুমেন্টারি নির্মাণ করে যাওয়া। এছাড়া ভ্রমণ লাইব্রেরির কাজে হাত দিয়েছি, দেশ-বিদেশের সমস্ত ভ্রমণ বই সংগ্রহ করা এই লাইব্রেরির জন্য।