সারাফ ওয়াসিমা জিশান
প্রকাশ : ২৪ জুন ২০২৫ ১৩:০১ পিএম
ব্যস্ততার যুগে আমরা সবাই ছুটছি। ছাত্রজীবন, অফিস, সংসার, সামাজিক দায়িত্ব, নানা লক্ষ্যপূরণের প্রতিযোগিতায় নিজেকে অনেক সময়ই হারিয়ে ফেলছি। কাজের ফাঁকে কিংবা ছুটির দিনেও আমরা অন্যের প্রয়োজন মেটাতে ব্যস্ত থাকি। অথচ এই দৌড়ঝাঁপের মাঝে একটা ছোট অথচ গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আমরা প্রায় ভুলে যাই তা হলো, নিজের জন্য সময় রাখা। নিজেকে সময় দেওয়া মানে শুধু বিশ্রাম নয়, বরং নিজের সঙ্গে সংযোগ তৈরি করা। মানসিক সুস্থতা, শারীরিক কর্মক্ষমতা ও আত্মতৃপ্তি। এই তিনটিই আসে যখন আমরা নিজের জন্যও একটু সময় রাখি। ব্যস্ত জীবনে নিজেকে সময় দেওয়াটা বিলাসিতা নয়, বরং প্রয়োজনীয় একটি অভ্যাস।
দৈনন্দিন ব্যস্ততার মাঝে ছোট ছোট মুহূর্ত
সকালে ঘুম থেকে উঠে ১০ মিনিট একা বসে দিন শুরু করুন, বিছানা থেকে মোবাইল ফোন দূরে রাখার চেষ্টা করবেন। বারান্দায় বা জানালার পাশে কিছুক্ষণ নীরবে বসে বা দাঁড়িয়ে থাকলে আপনার পুরো দিনের মানসিক অবস্থা বদলে যেতে পারে। কাজের ফাঁকে দুই মিনিট চোখ বন্ধ করে শ্বাস-প্রশ্বাসের দিকে মনোযোগ দিন, দেখবেন মাথা অনেক হালকা লাগছে।
যদি আপনি অফিস করেন, তাহলে লাঞ্চ ব্রেকের ৫-১০ মিনিট নিজের জন্য রাখুন। একা একটু হাঁটুন কিংবা প্রিয় কোনো গান শুনুন। এই ছোট সময়গুলো আপনাকে দিনের বাকি সময়ের জন্য আবার রিচার্জ করে দেবে।
ছুটির দিনে সময় বের করা
আমাদের দেশে ছুটির দিন মানেই ঘরের কাজ, বাজার করা, আত্মীয়ের বাড়ি যাওয়া। সব মিলিয়ে নিজের জন্য কিছুই থাকে না। কিন্তু এই একদিন যদি নিজেকে কিছুটা সময় না দিই, তাহলে সপ্তাহজুড়ে কর্মক্ষমতা কমে যায়, মনের ওপর চাপ বাড়ে। সপ্তাহে অন্তত এক ঘণ্টা এমন কিছু করুন, যা আপনি উপভোগ করেন। বই পড়া, গান শোনা, ছবি আঁকা, গাছের যত্ন নেওয়া, পোষা প্রাণী থাকলে তাকে একটু বেশি সময় দেওয়া কিংবা শুধু চুপচাপ বসে থাকা। অনেক সময় নিজের সঙ্গে কথা বলা সবচেয়ে ভালো থেরাপি হতে পারে।
অ্যাকটিভ থাকুন
নিজেকে সময় দেওয়া মানে অলস থাকা নয়। বরং নিজেকে সক্রিয় রাখা। ব্যায়াম, ইয়োগা, হাঁটা ইত্যাদি এসব করলে শরীর ভালো থাকে, মনও ফুরফুরে থাকে। শরীর যখন শক্তি পায়, মনও অনেক সমস্যা সহজে নিতে শেখে। দিনে মাত্র ২০ মিনিট হাঁটার অভ্যাস আপনার জীবনের মান অনেক বাড়িয়ে দিতে পারে।
নিজের লক্ষ্যগুলো মনে রাখুন
কাজের ভিড়ে আমরা প্রায়ই ভুলে যাই যে আমাদেরও কিছু স্বপ্ন ছিল, কিছু লক্ষ্য ছিল। নিজের জন্য সময় রাখলে সেই লক্ষ্যগুলো আবার নতুন করে মনে পড়ে। আপনি যে বইটা শুরু করেছিলেন, যে কোর্সটা করতে চেয়েছিলেন, বা যে ব্যবসার পরিকল্পনা করেছিলেন, এগুলোর জন্য সময় বের করা মানে নিজেকে গুরুত্ব দেওয়া।
নিজের ভালো লাগাকে গুরুত্ব দিন
আমাদের যে কাজগুলো করতে ভালো লাগে বা আমরা যা উপভোগ করি তা করা আমাদের আরও খুশি করে তোলে। এভাবে কাজ করলে মনটাও প্রফুল্ল থাকে। এই প্রফুল্লতা আমাদের আরও ইতিবাচক করে তোলে, সুস্থ রাখে। মজা করতে, নিজেকে কিছুটা শিথিল ও শান্ত করতে বা আমাদের নিজেদের জন্য কিছু করার জন্য সময় নেওয়া আমাদের ভালো রাখে।
অন্যদের খুশি রাখতে গিয়ে নিজেকে যেন ভুলে না যাই। জীবনের নানা দায়িত্বের পাশাপাশি নিজের ভেতরের মানুষটাকেও সময় দিন। নিজেকে ভালোবাসলে, নিজের যত্ন নিলে, তবেই আপনি অন্যদের জন্যও আরও অনেক বেশি কিছু করতে পারবেন। মনে রাখুন, আপনি যতটা নিজের, ততটা কারও না।