সাদিয়া মোস্তফা
প্রকাশ : ২৪ জুন ২০২৫ ১২:৫৭ পিএম
আপডেট : ২৪ জুন ২০২৫ ১২:৫৯ পিএম
আজকাল কাজের চাপ, জীবনযাত্রা, মানসিক চাপ, পারিবারিক চাপে অনেকেই বিধ্বস্ত হয়ে যাচ্ছেন। এ কারণে মেজাজ প্রায় সবসময় খিটখিটে থাকে। নিজেকে শান্ত রাখাটাই কঠিন হয়ে যাচ্ছে দিন দিন। এই অশান্ত মন মাঝে মাঝে আমাদের হাঁপিয়ে তোলে। হাজারো শব্দের কোলাহলে নিজের মনের আওয়াজটাই যেন হারিয়ে যায়, তখন শান্তি খুঁজে পাওয়া যেন কঠিন যুদ্ধ হয়ে দাঁড়ায়। কিন্তু এই শান্ত মনটাই জীবনের সব স্বস্তির মূল। কীভাবে অশান্ত সময়ে নিজেকে সামলে রাখা যায়, কীভাবে নিজের মনকে ধীরে ধীরে শান্ত করা যায়- সেটা সম্পর্কেই জানব আজ।
নিয়মিত ধ্যান ও শ্বাসপ্রশ্বাসের অনুশীলন করুন
যখন মানসিক চাপ বেড়ে যায় বা অস্থিরতা অনুভব হয়, তখন আমাদের শ্বাসপ্রশ্বাস দ্রুত হয়ে যায়। তখন নিজেকে শান্ত রাখার জন্য স্বাভাবিকের চেয়ে ভিন্নভাবে শ্বাস নেওয়া প্রয়োজন। শ্বাসের ছন্দের দিকে মনোযোগ দিন। প্রথমে ধীরে ধীরে গভীরভাবে শ্বাস নিন, তারপর ধীরে ধীরে তা ছাড়ুন। শ্বাস নেওয়ার সময় হাত পেটের ওপর রাখুন, দেখবেন শ্বাসের সঙ্গে হাত উঠছে আর ছাড়ার সময় নামছে। প্রতিদিন মাত্র ৫-১০ মিনিট এভাবে গভীরভাবে শ্বাস নেওয়া ও ছাড়ার অভ্যাস মস্তিষ্কের অস্থিরতা কমায় এবং মনকে ধীরে ধীরে শান্ত করে তোলে।
ব্যায়াম করুন
প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে যোগব্যায়াম করুন বা অন্তত কিছুক্ষণ হাঁটুন। এতে শরীর সুস্থ থাকবে, মন ভালো থাকবে, মানসিক চাপ দূর হবে এবং মেজাজ ফুরফুরে থাকবে।
প্রকৃতির সান্নিধ্যে থাকুন
সবসময় কেউ পাশে না থাকলেও প্রকৃতি কিন্তু সবসময় পাশে থাকে। একটু গাছের নিচে বসে থাকা, আকাশের দিকে তাকানো বা একা হাঁটতে যাওয়াÑ এই ছোট ছোট অভ্যাস মনকে জাদুর মতো শান্ত করে। বিজ্ঞানীরা গবেষণায় দেখেছেন, প্রকৃতির সঙ্গে সময় কাটালে মানসিক চাপ কমে, মেজাজ ভালো থাকে এবং সামগ্রিক মানসিক সুস্থতা বাড়ে। জাপানে একে বলে ‘শিনরিন-ইয়োকু’ বা বনস্নান, প্রকৃতির সঙ্গে সম্পর্ক রাখার এক অনন্য পদ্ধতি।
ডায়রি লেখার অভ্যাস গড়ে তুলুন
ডায়রি লেখা মানসিক চাপ কমাতে অনেক সাহায্য করে। যেটা কাউকে বলা যায় না, সেটা কাগজে লেখা যায়। আপনার মনে যা আছেÑ খুশি, দুঃখ, ভয়, রাগ সব লিখে ফেলুন। এতে মন হালকা হয় এবং নিজেকে বোঝা সহজ হয়। সম্পূর্ণ বাক্যে না লিখলেও সমস্যা নেই। এই অভ্যাস অস্থির মনকে অনেক শান্ত করে তোলে।
কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করুন
মন অস্থির হলে সবকিছু খারাপ লাগে। কিন্তু আমাদের যা আছে, সেটাই অনেক বড় কিছু। প্রতিদিন অন্তত তিনটি ছোট জিনিসের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করুন। যেমনÑ একটি হাসি, ভালো খাবার, প্রিয়জনের সঙ্গে সময়। এই অভ্যাস ধীরে ধীরে মনকে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির দিকে নিয়ে যায়।
পর্যাপ্ত ঘুম ও খাবার নিশ্চিত করুন
যথেষ্ট ঘুম ও খাবার না খেলে মন বিচলিত হয়ে পড়ে, নানা দুশ্চিন্তা ভর করে। ফলে মন শান্ত রাখা কঠিন হয়। সুস্থ থাকার জন্য প্রতিদিন ৬-৮ ঘণ্টা ঘুম খুবই জরুরি। রাতের ঘুমকে অগ্রাধিকার দিন, প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমাতে যান। ঘুমানোর অন্তত ২ ঘণ্টা আগে সব ধরনের ইলেকট্রনিক ডিভাইস থেকে দূরে থাকুন।
অসম্পূর্ণতাকে গ্রহণ করুন
জীবনে সবকিছু পারফেক্ট হবে- এই চিন্তা থেকেই মানসিক চাপ, দুঃখ এবং অযোগ্যতার অনুভূতি জন্ম নেয়। আমরা প্রত্যেকেই বিশেষভাবে অসম্পূর্ণ, আর সেটাই স্বাভাবিক। সবকিছু নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা না করে কিছু কিছু বিষয় মেনে নেওয়াই মানসিক শান্তির বড় উপায়।
প্রার্থনা বা মেডিটেশন করুন
আল্লাহ বা নিজের বিশ্বাস অনুযায়ী ইবাদত বা প্রার্থনা করলে আত্মিক শান্তি আসে। বিশ্বাসের শক্তি মানুষকে ভেতর থেকে দৃঢ় ও স্থির করে তোলে।
আত্ম-যত্নকে অগ্রাধিকার দিন
আমরা অনেক সময় অন্যদের খুশি করতে গিয়ে নিজের যত্ন নেওয়া ভুলে যাই। কিন্তু নিজের যত্ন নেওয়া বিলাসিতা নয় বরং প্রয়োজন। প্রতিদিন অন্তত এক ঘণ্টা নিজেকে সময় দিন। ডিজিটাল জগৎ থেকে দূরে থেকে নিজের শরীর, মন ও অনুভূতির যত্ন নিন।
সৃষ্টিশীল কিছু করুন
সৃষ্টিশীল কাজ যেমন- ছবি আঁকা, রঙ করা, গান গাওয়া, লেখালেখি, রান্নাÑ এই কাজগুলো মস্তিষ্কে ডোপামিন নামক আনন্দময় হরমোন তৈরি করে, যা মনকে প্রশান্ত করে তোলে।
গ্রহণযোগ্যতা ও ব্যর্থতা মেনে নেওয়া
জীবন সহজ ও সুখী হয় যখন আমরা গ্রহণযোগ্যতা রপ্ত করি। ব্যর্থতা সাফল্যেরই অংশ। বাস্তবতাকে অস্বীকার না করে, ব্যর্থতা মেনে নিয়ে সামনে এগোনোর অভ্যাস গড়ে তুলুন। দিনশেষে একটি গ্রহণশীল ও শান্ত মনই আপনাকে সুখী করে তুলবে।
‘না’ বলা শিখুন
সবসময় সবার কথা রাখতে গেলে নিজের সময়, শক্তি ও মানসিক শান্তি ক্ষয় হয়। তাই যথাস্থানে ‘না’ বলা শিখুন। এই অভ্যাস আপনাকে আত্মবিশ্বাসী করবে এবং আপনার মনের ভার হালকা করবে।
ভালো মানুষের সঙ্গে থাকুন
ইতিবাচক, শান্ত ও সহানুভূতিশীল মানুষের সাহচর্যে থাকলে মন অনেক হালকা লাগে। বিষাক্ত সম্পর্ক বা পরিবেশ থেকে নিজেকে দূরে রাখুন। এটাই নিজের প্রতি ভালোবাসা প্রকাশের অন্যতম রূপ।