আফসানা মিমি
প্রকাশ : ২৪ জুন ২০২৫ ১২:৫২ পিএম
বাংলার ছয় ঋতুর মধ্যে গ্রীষ্মে একদিকে যেমন প্রচণ্ড ক্লান্তি অনুভূত হয়, তেমনই এ ঋতুই নিয়ে আসে প্রকৃতির অফুরন্ত রসের ভান্ডার- রসালো ফলের উৎসব। বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ মাসজুড়ে চারপাশে যে মিষ্টি সুবাস ছড়িয়ে পড়ে, তা যেন প্রকৃতির নিজ হাতে দেওয়া প্রশান্তির উপহার। এ সময়কেই বাংলায় ভালোবেসে বলা হয় ‘মধুমাস’Ñ একটি মৌসুম, যেখানে প্রতিটি ফলের মধ্যে রয়েছে স্বাদ, পুষ্টি ও প্রাণের স্পন্দন।
আম
ফলের রাজা আম গ্রীষ্মের অবিচ্ছেদ্য অংশ। হিমসাগর, ল্যাংড়া, গোপালভোগ, ফজলিÑ বিভিন্ন জাতের আম যেমন স্বাদে অনন্য, তেমনই পুষ্টিগুণেও সমৃদ্ধ। আমে রয়েছে ভিটামিন ‘এ’ ও ‘সি’, যা ত্বক, চোখ ও রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতার জন্য উপকারী। তবে ডায়াবেটিক রোগীদের জন্য পরিমিত পরিমাণে খাওয়াই নিরাপদ।
কাঁঠাল
জাতীয় ফল কাঁঠাল সুমিষ্ট ঘ্রাণ ও পুষ্টিমানে অনন্য। এতে রয়েছে ফাইবার, পটাশিয়াম ও নানা ভিটামিন, যা হজমে সহায়তা করে ও পেশির গঠন মজবুত করে। তবে অতিরিক্ত কাঁঠাল খেলে পেটে গ্যাসের সমস্যা বা বুক জ্বালাপোড়া করতে পারে।
লিচু
লিচু গরমের ক্লান্তিতে এক অনন্য রসদ। এর রসালো শাঁস যেমন মনপ্রাণ জুড়িয়ে দেয়, তেমনই এতে থাকা ভিটামিন ‘সি’ ও অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট শরীরকে সতেজ রাখে। তবে খালি পেটে বা অতিরিক্ত লিচু খাওয়া শিশুদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে বলে চিকিৎসকরা সতর্ক করে থাকেন।
জাম
জাম একটি উপকারী ও উপেক্ষিত গ্রীষ্মকালীন ফল। রক্তে শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখতে এর কার্যকারিতা প্রমাণিত। বিশেষত ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য এটি উপযোগী ফল। জাম অ্যান্টি-অক্সিডেন্টসমৃদ্ধ এবং শরীরের কোষ সুরক্ষায় সহায়ক।
তরমুজ
তরমুজ গরমে শরীর ঠান্ডা রাখতে সহায়ক একটি রসালো ফল। প্রায় ৯২ শতাংশ পানি যুক্ত এই ফলে রয়েছে লাইকোপিন ও ভিটামিন ‘সি’, যা ত্বক ও হৃদযন্ত্রের জন্য উপকারী। তবে অতিরিক্ত খেলে হজমে সমস্যা দেখা দিতে পারে।
আনারস
আনারস একটি টক-মিষ্টি ফল, যা ব্রোমেলিন নামক এনজাইমে সমৃদ্ধ- হজমে সহায়ক এবং প্রদাহনাশক হিসেবে কাজ করে। তবে খালি পেটে খাওয়া হলে অ্যাসিডিটির ঝুঁকি থাকতে পারে।
বেল
বেল পাকা অবস্থায় শরবত করে খাওয়া খুবই উপকারী। এটি ডায়রিয়া, গ্যাস্ট্রিক ও হজমের সমস্যায় কার্যকর। তাল গরমে শরীর ঠান্ডা রাখতে সাহায্য করে, বিশেষত তালশাঁস ও তালের পানি।
ডাব
ডাবের পানি হলো প্রাকৃতিক ইলেক্ট্রোলাইট, যা শরীরকে করে হাইড্রেটেড, নিয়ন্ত্রণে রাখে রক্তচাপ। এটি গ্রীষ্মে ঘাম ও পানিশূন্যতা দূর করতে অত্যন্ত কার্যকর।
মধুমাসের ফলগুলো শুধু স্বাদের উৎস নয়, বরং শরীর ও মনের প্রশান্তির জন্য এক প্রকৃতির উপহার। তবে ফলভোগে যেমন আনন্দ, তেমনই চাই সচেতনতা। প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় মৌসুমি ফল রাখুন, তবে পরিমিত ও ভারসাম্যপূর্ণভাবে। প্রকৃতির এই রসালো দান হোক সুস্থতা ও সতেজতার চাবিকাঠি।