× ই-পেপার প্রচ্ছদ সর্বশেষ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি শিক্ষা ধর্ম ফিচার ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

বাঁচতে হলে রোধ করতে হবে প্লাস্টিক দূষণ

সঞ্জয় চৌধুরী

প্রকাশ : ১৪ জুন ২০২৫ ১২:৩১ পিএম

বাঁচতে হলে রোধ করতে হবে প্লাস্টিক দূষণ

মানুষের দৈনন্দিন জীবনে মিশে যাওয়া এই প্লাস্টিক কি পৃথিবীর মাথাব্যথার কারণ হয়ে উঠেছে? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে ধরা পড়ে ভয়াবহ বাস্তবতা। আক্ষরিক অর্থে পৃথিবীর মস্তিষ্কে প্লাস্টিক না থাকলেও সম্প্রতি গবেষণায় দেখা যায়, প্লাস্টিকের উপস্থিতি ধরা পড়েছে মানুষের মস্তিষ্কে। এমনকি মাতৃদুগ্ধ ও মানবভ্রূণ-শুক্রাণুতেও মিলেছে এই প্লাস্টিক তথা প্লাস্টিকের ক্ষুদ্র কণার উপস্থিতি।

প্লাস্টিকের ক্ষতি এড়াতে বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে বাংলাদেশ ২০০২ সালে পলিথিন ব্যাগ নিষিদ্ধ করে। গত মাসগুলোতে পলিথিন ব্যাগ বন্ধের জন্য বাজার মনিটরিং শুরু করে সরকার। তবে বন্ধ করা সম্ভব হয়নি।

ওয়ার্ল্ড ওয়াইল্ডলাইফ ফান্ডের তথ্য অনুযায়ী প্রতিদিন প্রায় ৭৩ হাজার টন প্লাস্টিক বর্জ্য শুধু বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে গিয়ে সমুদ্রে পড়ছে। পরিমাণের দিক থেকে পঞ্চম স্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। তাদের তথ্যে আরও দেখা যায়, প্রতিবছর ১ লাখ সামুদ্রিক প্রাণী মারা যায় শুধু প্লাস্টিক দূষণের কারণে। 

এপ্রিলে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশের বিভাগীয় শহরে প্রতি গ্রাম ধুলায় ৫২টি, ঢাকায় প্রতি গ্রাম ধুলায় ১০৬টি মাইক্রো প্লাস্টিক উড়ছে।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল পরিবেশ বিজ্ঞানীর গবেষণায় আমাদের ব্যবহৃত প্রতি কেজি লবণে আড়াই হাজারেরও অধিক প্লাস্টিকের কণার উপস্থিতি পাওয়া গেছে। প্লাস্টিক যেন দেশে দেশে এক নীরব যুদ্ধ ঘোষণা করেছে প্রাণ-প্রকৃতি ও মানব সভ্যতার বিরুদ্ধে।

আমদের দৈনন্দিন জীবনে প্লাস্টিক ব্যবহারের আধিক্য, প্লাস্টিক বর্জ্য অব্যবস্থাপনা ও অসচেতনতার কারণে পানি, মাটি, বায়ুসহ জীববৈচিত্র্য এমনকি মানুষের শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রতঙ্গে অবস্থান নিয়েছে ভয়াবহ ক্ষতিকর এই প্লাস্টিক তথা মাইক্রো প্লাস্টিক।

আইন করে কি প্লাস্টিকের উৎপাদন ও ব্যবহার কমানো সম্ভব? নাকি বৃদ্ধি করতে হবে সচেতনতা? এ প্রশ্নের প্রেক্ষিতে বলা যায় আইনের প্রয়োগ এবং সচেতনতা বৃদ্ধি উভয়কেই চালাতে হবে সমান্তরাল ভাবে।

প্লাস্টিকের ব্যবহার ও ক্ষতি কমাতে সচেতনতা

এ সম্পর্কিত সচেতনতা বৃদ্ধি করা যেতে পারে নানাভাবে। এ ক্ষেত্রে ব্যক্তি থেকে রাষ্ট্র সবার দায়িত্ব রয়েছে। তবে একটি গুরুত্বপূর্ণ এবং কার্যকর পদক্ষেপ হতে পারে শিক্ষার্থীদের সচেতন করা। দেশের বৃহৎ সংখ্যক শিক্ষার্থীকে সচেতন করতে পারলেই প্লাস্টিক সচেতনতায় একটি বড় টেকসই ইতিবাচক পরিবর্তন আসতে পারে বাংলাদেশে।

এ ক্ষেত্রে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে প্লাস্টিক ফ্রি ক্যাম্পাসে রূপান্তর করা গেলে পাওয়া যাবে সুফল। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে যদি প্লাস্টিক ফ্রি ক্যাম্পাস কার্যক্রম পরিচালিত হয়, তবে শিক্ষার্থীরা পরিবেশবান্ধব জীবনযাপনে উদ্বুদ্ধ হবে। তা শুধু শিক্ষার্থীদের ক্যাম্পাস জীবনেই সীমাবদ্ধ থাকবে না, বরং সমাজে ব্যাপক পরিবর্তন আনতে সহায়ক হবে।

ক্যাম্পাস প্লাস্টিক মুক্ত করতে, প্রথমে ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরে একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিকের ব্যবহার সীমিত করা এবং বিকল্প ব্যবস্থাপনা রাখা আবশ্যক। এর জন্য স্কুল ক্যান্টিনগুলোতে প্লাস্টিক বোতল এবং প্যাকেটজাত খাবার বিক্রি বন্ধ করতে হবে। শিক্ষার্থীদের জন্য পানি, খাবার এবং অন্যান্য পণ্য পরিবহন করার জন্য কাপড়ের ব্যাগ, কাগজের প্যাকেট এবং পুনঃব্যবহারযোগ্য বোতল ব্যবহারে উৎসাহিত করা যেতে পারে। প্লাস্টিকের কলমের বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে কাগজের কলম।

এ ছাড়াও শিক্ষার্থীদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে গ্রিন ক্লাব গঠন করা প্রয়োজন। ক্লাবটি নিয়মিত পরিবেশ সচেতনতাসহ প্লাস্টিক দূষণ রোধে নানান পদক্ষেপ নেবে। এর একটি কার্যকর পদ্ধতি হতে পারে ‘প্লাস্টিক ফ্রি ডে’ পালন করা। যেখানে শিক্ষার্থীরা প্লাস্টিক ফ্রি ডে তে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পুরোপুরি প্লাস্টিক ব্যবহার বন্ধ রাখবে এবং তার পরিবর্তে পরিবেশবান্ধব উপকরণ ব্যবহার করবে। একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্লাস্টিক ফ্রি ক্যাম্পাস কার্যক্রম হাতে নেওয়ার প্রথম মাসের প্রতি সপ্তাহের নির্দিষ্ট একটি দিনে ‘প্লাস্টিক ফ্রি ডে’ পালন করা যেতে পারে, যা শিক্ষার্থীদের সচেতনতা বৃদ্ধি করবে এবং ব্যবহারিক জীবনেও প্লাস্টিকের ব্যবহার কমিয়ে আনতে সহায়তা করবে। দ্বিতীয় মাসে সপ্তাহে দুই দিন প্লাস্টিক ফ্রি ডে পালিত হবে। এভাবে পঞ্চম মাসে গিয়ে সপ্তাহের পাঁচ দিনই প্লাস্টিক ফ্রি ডে পালিত হবে। সপ্তাহের বাকি দুদিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকে। ফলে সপ্তাহের পাঁচ দিনই যদি প্লাস্টিক, বিশেষ করে একবার ব্যবহার্য প্লাস্টিক ব্যবহার না হয়, তবে সেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটিকে প্লাস্টিক ফ্রি ক্যাম্পাস হিসেবে ঘোষণা করা যেতে পারে।

সাধারণত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে প্লাস্টিকের বিভিন্ন ব্যবহার দেখা যায়। যেমনÑ প্লাস্টিকের পানির বোতল, পলিথিন ব্যাগ, খাবারের মোড়ক, প্লাস্টিকের কাপ-প্লেট-চামচ, স্ট্র। কলম, স্কেল, পেনসিল বক্সসহ নানা ধরনের শিক্ষাসামগ্রী ব্যবহার হয়। এর বাইরেও শিক্ষার্থীদের খেলার সামগ্রী রয়েছে। প্লাস্টিকের ফোল্ডার, ফাইল কাভার এবং ব্যাগও দেখা যায়। এমনকি স্কুলের শোভাবর্ধনের জন্য গাছের চারাও রোপণ করা হয় প্লাস্টিকের টবে। অথচ এগুলোর পরিবেশবান্ধব বিকল্প হাতের কাছেই সহজলভ্য। সচেতনতা ও সদিচ্ছাই পারে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্লাস্টিকের ব্যবহার কমাতে।

সম্প্রতি গিয়েছিলাম কুড়িগ্রামের রাজারহাট স্কুল অ্যান্ড কলেজে। প্রতিষ্ঠানটি জানুয়ারি মাস থেকে প্লাস্টিক ফ্রি ক্যাম্পাস কার্যক্রম শুরু করেছে। তাদের লক্ষ্য হলো জুন মাসের মধ্যে প্রতিষ্ঠানটিকে সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিক ফ্রি ক্যাম্পাস ঘোষণা করা। এটি একটি দৃষ্টান্তমূলক উদ্যোগ, যা আমাদের অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে অনুপ্রাণিত করতে পারে।

আজকের শিক্ষার্থীরা আগামী দিনে বংলাদেশের নেতৃত্বে আসবে। তাদেরকে সঠিক পথে পরিচালিত করা হলে, ভবিষ্যতের বাংলাদেশ হবে আরও সবুজ, পরিচ্ছন্ন এবং বাসযোগ্য। ফলে প্লাস্টিক বন্ধে আইন প্রয়োগের পাশাপাশি মানুষের মস্তিষ্ক থেকে সরাতে হবে প্লাস্টিক। 

বিশ্ব পরিবেশ দিবস কী ও কেন 

বিশ্ব পরিবেশ দিবস (সংক্ষেপে WED) প্রতিবছর ৫ জুন বিশ্বব্যাপী রাজনৈতিক কর্মোদ্যোগ আর জনসচেতনতার মাধ্যমে পরিবেশ সচেতনতার লক্ষ্যে পালিত দিবস। এই দিনটিতেই জাতিসংঘের মানবিক পরিবেশ সম্মেলন (United Nations Conference on the Human Environment) শুরু হয়েছিল। এই সম্মেলন হয়েছিল ১৯৭২ সালের ৫ থেকে ১৬ জুন অবধি। এই সম্মেলনে ওই বছরই চালু করেছিল জাতিসংঘের সাধারণ সভা। তখন থেকেই প্রতিবছর এই দিবস পালিত হয়ে আসছে। দিবসটি প্রথম পালিত হয় ১৯৭৪ সালে। প্রতিবছরই দিবসটি আলাদা আলাদা শহরে, আলাদা আলাদা প্রতিপাদ্য বিষয় নিয়ে পালিত হয়।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মারুফ কামাল খান

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা