গৌরব চৌধুরী
প্রকাশ : ১৪ জুন ২০২৫ ১২:৩০ পিএম
কুড়িগ্রামের দশ হাজার শিক্ষার্থীর মাঝে দশ হাজার কাঁঠাল গাছের চারা বিতরণ করে গ্রিন ইকো
২০১৫ সালের ৫ জুন যাত্রা শুরু ‘গ্রিন ইকো’ নামের পরিবেশবাদী সংগঠনটির। ‘সবুজের প্রতিধ্বনি ছড়িয়ে পড়ুক বিশ্বময়’- এই স্লোগান ধারণ করে এর কার্যক্রম শুরু।
সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা সঞ্জয় চৌধুরী তখন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। ছোটবেলা থেকেই তিনি প্রাণ-প্রকৃতির প্রতি অকৃত্রিম টান অনুভব করতেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে তিনি অনুভব করেন এমন কিছু করতে হবে, যার মাধ্যমে প্রাণ-প্রকৃতি, পরিবেশ ও জলবায়ু সুরক্ষিত রাখা যায়Ñ সর্বোপরি মানুষ ও পৃথিবীর কল্যাণ হয়। ফলে এ ব্যাপারে একাই কাজ না করে একটি সংগঠন করলে কেমন হয়? যেখানে অনেককেই যুক্ত করা সম্ভব হবে। সেই চিন্তা থেকেই সঞ্জয় চৌধুরীর হাত ধরে যাত্রা শুরু হয় পরিবেশবাদী এই সংগঠন গ্রিন ইকোর। শুরুর দিকে সংগঠনটির সদস্যসংখ্যা কম থাকলেও এখন সারা দেশের অনেক তরুণ এবং বিভিন্ন বয়স ও শ্রেণিপেশার মানুষ স্বেচ্ছায় যুক্ত হয়ে পরিবেশ সুরক্ষার কাজ করে যাচ্ছেন নিরলসভাবে।
২০২১ সালে দেশব্যাপী পাখির আবাসন তৈরির মাধ্যমে জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। সেই বছরই পাখির আবাসনের মাধ্যমে পাখির ২৪০টিরও অধিক বাচ্চা উৎপাদনে সহায়ক ভূমিকা পালন করে সংগঠনটি। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে গ্রিন ইকোর ৩০ জন সদস্য তিন মাস নিবিড়ভাবে লেগে থেকে প্রায় বিনা অর্থ ব্যয়ে এই কার্যক্রমকে সফল করে তোলেন। তারই ধারাবাহিকতায় গ্রিন ইকো প্রতি বছর পাখির প্রজনন মৌসুমে পাখির আবাসন ব্যবস্থা নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে।
কুড়িগ্রাম জেলার মানুষ নদী ভাঙন, খরা, বন্যা ইত্যাদির কারণে দরিদ্র কবলিত কুড়িগ্রামে গ্রহণ করা হয়েছে নানামুখী উদ্যোগ। ২০২১ সালে কুড়িগ্রামের পাঁচটি উপজেলার ১০০টিরও অধিক দরিদ্র পরিবারে বিতরণ ও রোপণ করে দিয়েছে সুপারি গাছের চারা।
গ্রিন ইকোর প্রতিষ্ঠাতা এবং পরিচালক সঞ্জয় চৌধুরী বলেন, ‘বাংলাদেশ তথা পুরো বিশ্বে পরিবেশ সুরক্ষিত রাখতে চাইলে আইনের পাশাপাশি অধিক গুরুত্ব দিতে হবে পরিবেশ সচেতনতায়। আর সচেতনতা বৃদ্ধিতে সবচেয়ে বেশি নজর দিতে হবে শিশুদের প্রতি। ছোট থেকেই তাদের পরিবেশ সচেতন করে গড়ে তুলতে হবে।’ সেই চেতনা থেকে কুড়িগ্রাম জেলায় একটি মডেল তৈরির লক্ষ্যে গ্রিন ইকো একটি উদ্যোগ বাস্তবায়ন করেছে। যেখানে কুড়িগ্রামের দশ হাজার শিক্ষার্থীর মাঝে দশ হাজার কাঁঠাল গাছের চারা বিতরণ করা হয়। সেই সঙ্গে পরিবেশ সচেতনতা ক্যাম্পেইন করেছে সংগঠনটি। স্কুলে স্কুলে গঠন করে দিচ্ছে পরিবেশ ক্লাব। যার মাধ্যমে সবুজায়ন, পরিবেশ সচেতনতা বৃদ্ধি ও পরিবেশ সুরক্ষায় তরুণ নেতৃত্ব সৃষ্টিই তাদের লক্ষ্য। এই কার্যক্রমে সংগঠনটি আরও বেশ কিছু পরিবেশবাদী সংগঠন যেমন- ‘গ্লোবাল সিটিজেন্স ফর হিউমিনিটি’, ‘রিনিউ নাও’ প্রভৃতিকেও সমন্বয় করেছে।
সারা বিশ্বে প্লাস্টিক তথা সিঙ্গেল-ইউজ প্লাস্টিকের ভয়াবহতা বুঝতে পেরে গ্রিন ইকো এরই মধ্যে প্লাস্টিক দূষণ রোধে শুরু করেছে নানা কার্যক্রম। কুড়িগ্রামের রাজারহাট স্কুল অ্যান্ড কলেজকে প্লাস্টিক ফ্রি ক্যাম্পাস তৈরির কাজ বাস্তবায়ন করে চলছে। সেই সঙ্গে ‘বাংলাদেশের ৬৪ জেলায় প্লাস্টিক দূষণবিরোধী সচেতনতা কার্যক্রম’ শীর্ষক কর্মসূচি পরিচালনা করছে।
গ্রিন ইকোর সহযোগী প্রতিষ্ঠান ‘গ্রিন প্রোডাকশন’। যারা বিভিন্ন পরিবেশবান্ধব পণ্য উৎপাদন করে থাকে। যেমন- কাগজের তৈরি পরিবেশবান্ধব কলম এবং কাগজের তৈরি ওয়ান টাইম প্লেট। প্রতিষ্ঠানটির উৎপাদিত কাগজের কলম ‘গ্রিন পেন’ এরই মধ্যে দেশে সাড়া ফেলেছে। এমনকি বিদেশেও যাচ্ছে। গ্রিন পেন এবং কাগজের ওয়ান টাইম প্লেট তৈরির মাধ্যমে কুড়িগ্রামের ২০ জন নারীর কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হয়েছে; যা সবুজ অর্থনীতি বিনির্মাণে অবদান রাখছে বলে গ্রিন ইকোর প্রতিষ্ঠাতা সঞ্জয় চৌধুরী মনে করেন।
বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুর ক্যাম্পাসে রয়েছে চার শতাধিক প্রজাতির ৩৫ হাজারেরও অধিক গাছ। এই বৃক্ষায়নে রয়েছে গ্রিন ইকোর বিশেষ ভূমিকা। এর বাইরেও নদী সুরক্ষায় কাজ করে সংগঠনটি। গ্রিন ইকো দুর্যোগ পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সহায়তা ক্যাম্পেইন আয়োজন করে প্রতি বছর। বিশেষ করে বন্যার মৌসুমে। পরিবেশ সচেতনতামূলক ‘স্কুল ক্যাম্পেইন’ শীর্ষক একটি কার্যক্রম নিয়মিতভাবে পরিচালনা করে আসছে তারা। স্কুল ক্যাম্পেইনের এই কাজে গ্রিন ইকোর সঙ্গে ‘বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা)’, ‘রিভারাইন পিপল’-এর মতো সংগঠনগুলোও যুক্ত রয়েছে।
রংপুর বিভাগের সবগুলো জেলায় রয়েছে গ্রিন ইকোর কার্যক্রম। এর বাইরে ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, সিরাজগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় সংগঠনটি কাজ করে যাচ্ছে। তৈরি করছে তরুণ নেতৃত্ব।