× ই-পেপার প্রচ্ছদ সর্বশেষ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি শিক্ষা ধর্ম ফিচার ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

স্বপ্ন এখন বাস্তব

অরণ্য ইমতিয়াজ

প্রকাশ : ২৮ মে ২০২৫ ১৩:৪৮ পিএম

স্বপ্ন এখন বাস্তব

মাহবুব হাসান আর মেহেদী হাসান দুই ভাই। মাহবুব হাসান ঢাকায় ব্যবসা করেন। মেহেদী হাসান থাকেন জাপানে। তাদের গ্রামের বাড়ি কুমিল্লায়। ঢাকায় মাহবুব হাসানের ব্যবসা ভালো চলছিল। তারপরও কেন যেন তার মন পড়ে থাকত গ্রামে। ব্যবসার ব্যস্ততা থাকার পরও সুযোগ পেলেই, কখনও কখনও সুযোগ সৃষ্টি করে, ছুটে যেতেন গ্রামে। উপভোগ করতেন নির্মল পরিবেশ আর বিশুদ্ধ বাতাস। 

গ্রামে আসা-যাওয়া করতে করতে মনের মধ্যে একটা স্বপ্ন বাসা বাঁধে। ঢাকায় প্রযুক্তির জাল আর ইটপাথরের ব্যস্ত শহরে ব্যবসা-বাণিজ্য করলেও গ্রামের নিরিবিলি পরিবেশে গড়ে তুলবেন একটি আধুনিক খামার। তিনি হয়ে উঠবেন নতুন উদ্যোক্তা। ভাবনার সাথে সাথে তা বাস্তবায়নের জন্য উঠে-পড়ে লাগেন। ব্যাপারটি খুলে বলেন জাপান প্রবাসী ছোট ভাইয়ের কাছে। মেহেদী হাসানও বড় ভাইয়ের প্রস্তাবে খুশি হন এবং দুই ভাই মিলে খামারের জন্য বিনিয়োগ করার সিদ্ধান্ত নেন। এ গল্প মাত্র সাত বছর আগের।

তারপর মাহবুব হাসান জায়গা খোঁজা শুরু করেন। ঘুরতে ঘুরতে টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার লক্ষিন্দর ইউনিয়নের তালতলা গ্রামকে বেছে নেন। পাহাড়িয়া অঞ্চলের নিরিবিলি পরিবেশ- ঠিক তার মনের মতোই। সেখানে এক একর জায়গা ক্রয় করেন খামারের জন্য। শুরু হয় তার স্বপ্নপূরণের কাজ। অল্প সময়ের মধ্যে গড়ে তোলেন আধুনিক গরুর খামার। নাম দেন ইউশী (USI) অ্যাগ্রো ফার্ম। ইউশী জাপানি শব্দ। এর অর্থ গরু। মেহেদী হাসানের পছন্দেই এই নাম দেওয়া হয়।

সাত বছরের মধ্যেই দুই ভাইয়ের যৌথ বিনিয়োগে গড়ে ওঠা অ্যাগ্রো ফার্মটি নতুন উদ্যোক্তা তৈরি ও কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টিতে দৃষ্টান্ত হয়ে উঠেছে। স্বপ্নপূরণ, অর্থ আয়ের পাশাপাশি এই সুযোগ সৃষ্টিই ছিল এই অ্যাগ্রো ফার্মের প্রধান উদ্দেশ্য। সে উদ্দেশ্য আজ পূরণ হচ্ছে। ইউশী অ্যাগ্রো ফার্ম দেখে স্থানীয় অনেকে অনুপ্রাণিত হচ্ছেন।

মাহবুব হাসান ব্যবসা নিয়ে ঢাকায় ব্যস্ত থাকেন। খামার দেখাশোনার দায়িত্ব ব্যবস্থাপক শিপন মুন্সির কাঁধে। তিনি জানান, প্রথমে ৫০টি উন্নত জাতের গরু দিয়ে শুরু হয় ফার্মটি। বিদেশি জাতের গরুর খামার গড়ে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন উদ্যোক্তা মাহবুব হাসান। সাত বছর আগে শুরু হওয়া খামার এখন সে অবস্থায় নেই। সেটি এখন রূপ নিয়েছে বিশাল ফার্মে। গরু, কবুতর, বায়োগ্যাস প্লান্ট ও ফল চাষের সমন্বয়ে মাহবুব হাসানের গড়া ফার্মে কর্মসংস্থান হয়েছে অনেকের। গরু পালনের পাশাপাশি গরুর খাবার সাইলেজ উৎপাদন করেও অর্থ আয় করছেন এ উদ্যোক্তা।

মাহবুব হাসান ব্যবসার কাজে দেশের বাইরে রয়েছেন। তার অনুপস্থিতিতে খামারের ব্যবস্থাপক শিপন মুন্সি বলেন, ফার্মে ২০১৮ সাল থেকে গরু পালন শুরু করি। এটা খুবই লাভজনক। তা ছাড়া আমাদের ফার্মের গরুগুলোকে মোটাতাজাকরণের জন্য কোনো প্রকার ইনজেকশন বা ক্ষতিকর কোনো পদ্ধতি অবলম্বন করা হয় না। মুক্ত বাতাসে প্রাকৃতিক খাদ্য দিয়ে গরুগুলোকে বড় করছি। গরু পালনের পাশাপাশি গরুর খাদ্য নেপিয়ার ঘাস উৎপাদন করি। এ ছাড়া নেপিয়ার ঘাস প্রক্রিয়াকরণের মাধ্যমে সাইলেজ তৈরি করি। আমাদের উৎপাদিত সাইলেজ নিজের চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন এলাকায় বিক্রি করে থাকি। সাইলেজ বিক্রি করে বছরে ভালো অর্থ আসে। 

কেউ ইউশী অ্যাগ্রো ফার্ম পরিদর্শনে গেলে দেখতে পাবেন, প্রত্যন্ত গ্রামীণ পরিবেশে ফার্মটি নির্মাণ করা হয়েছে। ফার্মের প্রধান ফটকের সামনেই নানা রঙের ফুল শোভা পাচ্ছে। ফার্মের আরেকটু সামনে যেতেই চোখে পড়বে গ্রিনগেজÑ বিদেশি ফল। বাহারি ফল ও রঙিন ফুলে ঘেরা ফার্মের শেষ প্রান্তে বড় বড় কয়েকটি শেড। সেখানে উন্নত জাতের গরু পালন করা হয়। ফার্মে নিয়োজিত শ্রমিকরা কেউ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নের কাজ করছেন। আবার কেউ গরুর খাবারে মনোযোগ দিচ্ছেন। পরিপাটি এবং পরিচ্ছন্ন একটি খামার। সেখানে সবকিছু যেন নিয়ম মেনে চলছে। 

শিপন মুন্সি জানান, বর্তমানে ফার্মে মোট ৮৪টি বিভিন্ন উন্নত জাতের গরু রয়েছে। এদের মধ্যে আসছে কোরবানির ঈদে বিক্রির জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে ৭৪টি গরু। এই গরুগুলো তারা ১১ মাস লালন-পালন করেছেন। ১১ মাস আগে একেকটি গরু ক্রয় করেছেন ১ লাখ ৪০ হাজারে। বাজার ভালো থাকলে সেই গরু এখন বিক্রি হবে প্রায় ২ লাখ ৩০ হাজারে। আর যে গরুগুলো আকারে ছোট সেগুলোর বর্তমান বাজার মূল্য ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা। ফার্মে রয়েছে দেশাল, সিন্ধি ও শাহিওয়াল জাতের গরু। এ বছর দেশে বড় কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা রাজনৈতিক অস্থিরতা না থাকায় গরুর বাজার ভালো থাকবে বলে আশা করছেন শিপন মুন্সি। তিনি বলেন, সবকিছু ঠিক থাকলে এ বছর গরু বিক্রি করে ভালো অর্থ আয় হবে বলে আশা করছি। বাজারের পরিস্থিতি ভালো না হলে বড় ধরনের লোকসানের শঙ্কাও তার চোখেমুখে ফুটে ওঠে। 

গরু উৎপাদন ছাড়াও ফার্মের অন্যপাশে তৈরি করা হচ্ছে সাইলেজ। স্তরে স্তরে বস্তাবন্দি করে রাখা হয়েছে শত শত মণ সাইলেজ। এসব গোখাদ্য প্রতি কেজি উৎপাদন খরচ ৮ টাকা। দেশের বিভিন্ন এলাকায় এসব সাইলেজ বিক্রি হচ্ছে ১০ টাকা কেজিতে। শিপন জানান, প্রতিবছর নিজেদের চাহিদা পূরণ করে প্রায় ৫ হাজার টন সাইলেজ বিক্রি করে থাকি। 

শিপন বলেন, ‘আমাদের এ উদ্যোগ এখন অনুকরণীয়। দূর থেকে অনেকে ফার্মটি দেখতে আসেন। এসব কাজে আগ্রহী হচ্ছেন অনেকে। লোকবল নিয়োগে স্থানীয় বেকার যুবকদের প্রাধান্য দেওয়া হয়। ভবিষ্যতে প্রতিষ্ঠানটি আরও প্রসারিত করে শতাধিক লোকের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে পারব বলে আশা করছি।’

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মারুফ কামাল খান

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা