× ই-পেপার প্রচ্ছদ সর্বশেষ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি শিক্ষা ধর্ম ফিচার ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

তান্নির কাঠবিড়ালি

দীপু মাহমুদ

প্রকাশ : ২২ মে ২০২৫ ১৩:৩৬ পিএম

সুন্দর এ ছবিটি এঁকেছে মিথিলা ভৌমিক। সে ঢাকার ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী

সুন্দর এ ছবিটি এঁকেছে মিথিলা ভৌমিক। সে ঢাকার ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী

ঘরে ঢুকে মামা বলল, গ্রেট তান্নি, গ্রেট। তান্নি আনন্দ পেয়েছে। মামাকে সে খুব বেশি ভালোবাসে। মামা তার সব কথা শোনে। বাসায় এলে তান্নিকে সময় দেয়। তান্নির সঙ্গে খেলা করে। তান্নি যখন মামার সঙ্গে খেলা করে, একসঙ্গে টিভিতে কিছু দেখে, তখন মামা মোবাইল ফোন নিয়ে কখনও ব্যস্ত থাকে না। মন দিয়ে তান্নির কথা শোনে।

মামার সঙ্গে বসে তান্নি ইউটিউবে বিভিন্ন রকমের ফাঁদ বানানো দেখছিল। এসব ফাঁদ দিয়ে পাখি ধরা যায়, শেয়াল ধরা যায়। তান্নির ইচ্ছে মামা তাকে কাঠবিড়ালি ধরা ফাঁদ বানিয়ে দেবে। কাঠবিড়ালি তান্নির ভীষণ প্রিয়। 

মামা রাজি হয়েছে। বলেছে, পরীক্ষা শেষ হলেই আমরা চলে যাব তোমার নানির কাছে। সেখানে আমাদের কাঁঠাল বাগানে প্রচুর কাঠবিড়ালি আছে। তোমাকে তাদের থেকে একজোড়া কাঠবিড়ালি ধরে দেব।

তান্নি পড়ে ক্লাস ফাইভে। তার পরীক্ষা নভেম্বর মাসে। এখন অক্টোবর মাস। তান্নি ভেবেছিল মামা তাকে শর্তের কথা বলবে, পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করলে তবেই কাঠবিড়ালি ধরে দেবে। মামা কোনো শর্ত দেয়নি। মামা জানে, তান্নি সব সময় মনোযোগ দিয়ে লেখাপড়া করে। তান্নি কিছু চাইলে মামা সেটা দেয়। তান্নি বোঝে মা-বাবা, মামা সবাই চায় সে মন দিয়ে পড়ে পরীক্ষায় ভালো ফল করুক। তাই সে মন দিয়ে পড়াশোনা করে।

মামা বলল, কাঠবিড়ালি ধরা কোনো ব্যাপারই না। বাজার থেকে ইঁদুর ধরা খাঁচা কিনে নিয়ে যাব। ইঁদুর আর কাঠবিড়ালি একই রকম। তাতেই কাঠবিড়ালি ধরা যাবে।

তান্নি বলল, তা হবে না, মামা। কেনা খাঁচায় কাঠবিড়ালি ধরতে চাই না। আমরা ফাঁদ বানাব।

তান্নির কথা মামা মেনে নিয়েছে। পরীক্ষার পর মা আর মামার সঙ্গে তান্নি নানির বাড়িতে এসেছে। মামাকে সঙ্গে নিয়ে সে বাঁশ দিয়ে কাঠবিড়ালি ধরা ফাঁদ বানিয়ে ফেলেছে। কাঠবিড়ালি ধরা পড়েছে একটা। তান্নি তাতেই খুশি হয়েছে। তান্নিকে খাঁচা কিনে দিয়েছে মামা। সেই খাঁচায় কাঠবিড়ালি রেখেছে। কাঠবিড়ালি নিয়ে তান্নি নানির বাড়ি থেকে মায়ের সঙ্গে নিজেদের বাসায় ফিরে এসেছে। 

প্রথম কয়েক দিন কাঠবিড়ালি নিয়ে তান্নির প্রবল আগ্রহ দেখা গেল। তান্নি তার কাঠবিড়ালির নাম রেখেছে চিকি। সারা দিন চিকিকে নিয়ে মেতে থাকে। চিকির সঙ্গে কথা বলে, কী খবর চিকি, খিদে পেয়েছে?

চিকি কিছু বলে না। জুলজুল চোখে তাকিয়ে থাকে।

তান্নি চোখ নাচিয়ে, হাত নেড়ে কাজী নজরুল ইসলামের লেখা খুকী ও কাঠবিড়ালি কবিতা শোনায়, কাঠবিড়ালি কাঠবিড়ালি পেয়ারা তুমি খাও? গুড়-মুড়ি খাও? দুধ-ভাত খাও? 

তান্নি ইউটিউব থেকে খুঁজে বের করেছে কাঠবিড়ালি কী খায়! কাঠবিড়ালি খায় বাদাম, আখরোট, ভুট্টা, খেজুর। চিকির জন্য তান্নি খাবারের ব্যবস্থা করেছে।

দুদিন যেতেই তান্নির আগ্রহ শেষ হয়ে গেল। সে চিকির খোঁজ নেয় না। তান্নি তাদের অ্যাপার্টমেন্টের ছাদে অন্য খেলায় ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। মামা এসে দেখে কাঠবিড়ালির শরীর শুকিয়ে গেছে। কাঠবিড়ালি খাওয়া-দাওয়া করে না। খাঁচার ভেতর না-খাওয়া শুকনো পেয়ারা পড়ে আছে। কাঠবিড়ালি চুপচাপ মন খারাপ করা চোখে তাকিয়ে থাকে।

তান্নিকে ডেকে মামা বলল, তুমি কাঠবিড়ালিকে ছেড়ে দাও। তান্নি বলল, আবার যখন নানির কাছে যাব তখন ছেড়ে দেব। মামা বলল, তত দিনে কাঠবিড়ালি আরও শুকিয়ে যাবে। চলো তাকে বাইরে নিয়ে গিয়ে ছেড়ে দিয়ে আসি।

মামার সঙ্গে তান্নি কাঠবিড়ালির খাঁচা নিয়ে বাইরে এলো। খাঁচার দরজা খুলে দিল। অবাক হয়ে একবার তাকাল কাঠবিড়ালি। তার পর খাঁচা থেকে বের হয়ে দৌড় দিয়েছে। বেশি দূর যেতে পারেনি। রাস্তা দিয়ে ছুটে আসা অটোরিকশার সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে কাঠবিড়ালি রাস্তার ওপর উল্টে পড়ে গেল। 

তান্নির ভীষণ মন খারাপ হয়েছে। চিকির শরীর অনেকখানি কেটে গেছে। রক্ত বেরোচ্ছে। তান্নির কান্না পাচ্ছে। সে বলল, মামা, চিকিকে সুস্থ করার ব্যবস্থা করো। আর কোনো দিন কাঠবিড়ালি ধরব না। কাউকে কখনও খাঁচায় আটকে রাখব না।

চিকিকে নিয়ে মা আর মামার সঙ্গে তান্নি এসেছে পবিত্র আঙ্কেলের কাছে। পবিত্র আঙ্কেল পশুপাখির ডাক্তার। আঙ্কেল ওষুধ দিয়েছে।

তান্নি সেদিন থেকে কাঠবিড়ালির সেবাযত্ন করতে থাকল। তাতে সুস্থ হয়ে উঠেছে চিকি। খাওয়া-দাওয়া করছে। তান্নির মন ভালো হয়ে গেছে। 

মামার সঙ্গে কাঠবিড়ালির খাঁচা নিয়ে তান্নি ট্রেনে চড়ে যাচ্ছে নানির বাড়ি। সে কাঁঠাল বাগানে চিকিকে ছেড়ে দেবে। যেখান থেকে তাকে নিয়ে এসেছিল।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মারুফ কামাল খান

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা