মোকছেদুল মমিন মোয়াজ্জেম
প্রকাশ : ২১ মে ২০২৫ ১৩:১৩ পিএম
কাজী নজরুল ইসলামের নারী কবিতায় নারী-পুরুষকে দেওয়া হয়েছে সমান অধিকার। কিন্তু দিনাজপুরের হিলিতে বৈষম্যের শিকার হয়ে আসছেন আদিবাসী (সাঁওতাল) নারী শ্রমিকরা। পুরুষের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করেও সমান মজুরি পান না এই অঞ্চলের আদিবাসী (ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী) নারী শ্রমিকরা।
হাকিমপুর (হিলি) উপজেলার বিভিন্ন আদিবাসী পাড়া ঘুরে জানা যায়, বর্তমানে আদিবাসী নারী শ্রমিকরা অলস সময় পার করছেন। কোনো কাজ না পেয়ে অভাব-অনটনের মধ্য দিয়ে নিজ বাড়িতে আছেন। বছরে আমন ও ইরি মৌসুমে ধানের চারা রোপণ, ক্ষেত নিড়ানিসহ কাটা-মাড়াইয়ের কাজ করে থাকে আদিবাসী নারী শ্রমিকরা। পুরুষের সঙ্গে সমান তালে এসব কাজ করেন তারা। কিন্তু দিন হাজরির ক্ষেত্রে অনেকদিন ধরেই চরম বৈষম্য শিকার হয় আসছেন তারা। পুরুষ শ্রমিকরা যদি পারিশ্রমিক ৫০০ টাকা পেয়ে থাকে, নারী শ্রমিকরা পায় ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা। শুধু ধানের মৌসুমেই নয়, অন্যান্য ফসলের ক্ষেতেও তারা কাজ করে থাকে, সেখানেও মজুরিতে বৈষম্য। নারী-পুরুষের বৈষম্য দূর হলে সুন্দরভাবে সংসার চালাতে পারবে তারা, এমনটাই প্রত্যাশা এই অঞ্চলের আদিবাসী নারী শ্রমিকদের।
আদিবাসী নারী শ্রমিক মুক্তা হেম্ব্রন বলেন, এখন তো হামরা তেমন কাম পাই না। আলু ও সরিষার মাঠে এখন মুসলিম বেটি ছোলরা (মেয়ে মানুষরা) কাজ করে। আগে আমরাই কাজ করতাম, এখন অনেক কাজ কমে গেছে। এরপর আবার পুরুষ মানুষের চেয়ে হামাক (আমাকে) হাজিরাও কম দেয়। হারা (আমি) চলবো কি করে?
হাকিমপুর পৌর এলাকা চণ্ডিপুর আদিবাসী পাড়ার কয়েকজন নারী শ্রমিক বলেন, আমরা বছরে দুই সিজন ধান লাগানোসহ কাটা-মাড়াই করে থাকি। সকাল ৮ থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত কাজ করি। কিন্তু মজুরি আমরা কম পাই। পুরুষরা পায় ৫০০ টাকা আর আমরা পাই সাড়ে ৩০০ টাকা, এটা কেমন নিয়ম?
উপজেলার উত্তর খট্টা আদিবাসী পাড়ার নারী শ্রমিক বক্টরানী হেম্ব্রন বলেন, পুরুষের পাশাপাশি আমরাও ধানের সঙ্গে অন্যান্য ফসলেও কাজ করি। কিন্তু তাদের মতো মজুরি পাই না। আমরা ৩০০ টাকা পাই, সঠিক মজুরি পাচ্ছি না। তাদের সঙ্গে আমাদের এই বৈষম্য। এই কারণে আমরা স্বাবলম্বী হতে পারছি না। এই বৈষম্য দূর হলে আমাদের ভালো হতো।
হাকিমপুর উপজেলার ১ নম্বর খট্টা-মাধবপাড়া ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান ছদরুল শামীম স্বপন বলেন, আমরা জানি নারী-পুরুষ সমান অধিকারী। কিন্তু সমাজে নারী শ্রমিকরা বৈষম্যের শিকার হচ্ছে। তারা সঠিক মজুরি পাই না। তাই আমি শ্রমিক ফেডারেশনের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বলব, আপনারা এই বৈষম্য দূর করেন, তাদের ন্যায্য মজুরি দেওয়া ব্যবস্থা করেন।
খট্টা-মাধবপাড়া ইউনিয়ন শ্রমিক দলের সভাপতি শাহানুর আলম শাহিন বলেন, আমাদের এই অঞ্চলে অনেক আদিবাসী নারী শ্রমিক আছে, যারা পুরুষের সঙ্গে বিভিন্ন মাঠে-ঘাটে কাজ করে থাকে। মজুরির ক্ষেত্রে নারী শ্রমিকরা অনেকটা বৈষম্যের শিকার হয়ে থাকে। আমি গৃহস্থ এবং কৃষকদের বলতে চাই, আপনারা কোনো বৈষম্য না করে নারী-পুরুষ শ্রমিকদের সমান মজুরি দিবেন।